ধর্মীয় অপব্যাখ্যার কারনেই মুসলমানরা নিরাপত্তাহীন নেছারাবাদী হুজুর
মুহম্মদ আহছান উল্লাহ
বিশিষ্ট দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক হাদীয়ে যামান পীরে কামেল হযরত মাওলানা মুহম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ ছাহেব হুজর) রহ. এর একমাত্র ছাহেবজাদা, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী (নেছারাবাদী হুজুর) বলেছেন ‘যুগ-যুগ ধরে যে জাতি শান্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করেছিল, যারা ছিল শিক্ষা-সাম্য-সভ্যতা ও প্রগতির জীবন্ত প্রতীক, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দেয়ার কারণে তারাই আজ বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তাহীন।’
যাদের নবী ছিলেন মানব-দানব, আসমান-যমীন, অণু-পরমাণু, জড়-অজড়-সকল সৃষ্টিজগতের শান্তি-নিরাপত্তা ও কল্যাণের প্রতীক; যে উম্মত ছিল- রব্বুল আলামীনের ভাষায়- ‘সর্বোত্তম জাতি’ – যারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য সত্য-ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী এবং অন্যায় ও অসুন্দরের মূলোৎপাটনকারী, যাদের সাহায্য করার জন্য রব্বুল আলামীন স্বয়ং ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন তাহলে কী কারণে বিশ্বব্যাপী তারা আজ নির্যাতিত-নিগৃহীত, অশান্তি আর বিশৃঙ্খলায় নিপতিত ? এর একটাই মাত্র কারণ। আল্লাহর রাসূলের বাণী মোতাবেক ধর্মের অপ ব্যাখ্যার কারনে উম্মতে মুহাম্মদীর ৭৩ ফের্কার মধ্যে ৭২ ফের্কাই বিভ্রান্ত ও বাতিল হিসেবে গণ্য হবে, কেবলমাত্র ০১টি ফের্কা – ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এই সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত তারাই, যারা মুজাদ্দেদীনে ইসলাম ও আওলিয়ায়ে কেরামের পথ ও মতের অনুসারী। কাজেই, আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথ হারিয়ে ইসলামের যথেচ্ছা ব্যাখ্যা প্রদানের কারণেই মুসলমান আজ নিজেরাই নিজেদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা কি দেখতে পাই ? সিরিয়ায় ০১ মাসে ৭৬ হাজার মুসলমান শহীদ হয়ে গেল ৭২ হাজার মুসলমানেরই হাতে; পাকিস্তানের নিষ্পাপ-নিরপরাধ শিশুদের যারা হত্যা করেছিল- তাদের যবানেও ছিল- আল্লাহু আকবর; এইতো আমাদের দেশেও সেদিন নূরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করা হলো, সেই হত্যাকারীও তো মুসলমান দাবীদার! বাস্তবতা হলো আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে না চলে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইফরাতী (চরম) ও তাফরীতী (শিথীল) মতাদর্শে কুরআন-সুন্নাহর যথেচ্ছ ব্যাখ্যাদানের কারণেই এক পক্ষ আরেক পক্ষের শত্রুতে পরিণত হয়েছে, একজন আরেকজনকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তার রক্ত নেয়াকে বৈধতায় পরিণত করেছে। আফসোস! এই অপব্যাখ্যা ও অপরিণামদর্শীতার কারণেই ইসলামের জন্মগত শত্রু এবং আধুনিক কালের নাস্তিক্যবাদীরা তাদের সর্বব্যাপী ষড়যন্ত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানকে ভিলেইন সাজিয়ে ইসলামকেই নির্মূল করতে চাইছে। বিভ্রান্ত ইসলামধারী আর ইসলাম বিদ্বেষী- এই দুই চক্রের কারণে মুসলমানের অবস্থা আজ যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তাতে যদি সকল হকপন্থ’ী ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফের ভিত্তিতে এখনো ঐক্যবদ্ধ না হন, তাহলে চিড়িয়াখানায়ও মুসলামন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।’ নেছারাবাদী হুজুর বলেন- ‘তবে নিরাশ হবেন না। অন্তত কিছু মুমিনও যদি হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রবর্তিত ঐক্যের যুগান্তকারী দর্শন- ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ- মতানৈক্যসহ ঐক্য নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা যেমন কবুল করবেন, তেমন সেই মুষ্টিমেয় মুছলিহীনের দ্বারাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওয়াদা মোতাবেক গোটা জাতিকেও সমূহ সঙ্কট থেকে উদ্ধার করবেন।’ নেছারাবাদী হুজুর বলেন- ‘আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধে কেউ অবমাননাকর উক্তি প্রকাশ করলে যার অন্তর কাঁপে না, প্রতিবাদের আগ্রহ জাগে না- নি:সন্দেহে সে মুমিনের অন্তর্ভুক্ত নয়। সাম্প্রতি বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলায় মুসলমান নামধারী যে মানবতার দুষমন আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বই বের করেছে, আমরা তার ধিক্কার জানাই এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবী জানাই, অন্যথায় এদেশের তৌহীদী জনতা কাউকেই ক্ষমা করবে না।’ নেছারাবাদী হুজুর বলেন- ‘দেশের বিবদমান দুই রাজনৈতিক জোটকে আবারো বলছি- সকল প্রকার স্বার্থান্ধতা পরিহার করে কেবলমাত্র জনস্বার্থে আন্তরিক হোন, একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছে জাতিকে এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিন; রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে যেসব জ্ঞানী-গুণী-বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ পরামর্শ ও রাহনোমায়ী করেন- তাদের কথা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করুন।’ নেছারাবাদী হুজুর আরো বলেন- ‘মুমিনের কাম্য আখেরাত, তবে দুনিয়াও পরিত্যাজ্য নয়, দুনিয়াকে আখেরাতের পরিপূরক ও কামিয়াবী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী থেকে বিচ্ছিন্নভাবে যারাই দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন- প্রত্যেকের খেদমতেরই অপরিসীম মূল্য রয়েছে- কিন্তু’ কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানোর জন্য, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েই দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করতে হবে, অন্যথায় অখেরাতও বরবাদ হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ আমাদের কলেমাগো মুসলমানের মনে ঐক্যবদ্ধ হবার তৌফীক দান করুন আমীন।