বিকল্প খাদ্য কাসাবা
লাজিমা আক্তার মিম তুলি
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষে কাসাবা হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আর এটা নতুন কোন ফসল নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান খাদ্য এবং উৎপাদনের দিক থেকে গম, ধান, ভুট্রা, গোলআলু ও বার্লির পরই কাসাবার স্থান। বাংলাদেশে কাসাবা শিমুল আলু নামে পরিচিত। টাংগাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে কাসাবার চাষাবাদ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুটি জাতের কাসাবার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং এ গুলো ফিলিপাইন থেকে আসছে। একটি লাল অপরটি সাদাটে। কাসাবা হচ্ছে উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কন্দ জাতীয় ফসল। দেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য খাটতি মোকাবেলায় কাসাবা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কাসাবাসহ যে কোন কৃষি কাজের জন্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার ব্যবহার করা । এতে উৎপাদন খরচ কমে ফলন বাড়ে। কাসাবা চাষে কোন ঝামেলা নেই বললেই চলে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল পাওয়া যায়। কাসাবা একটি উজজ্বল সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল।
কাসাবা নিয়ে ইতিপুর্বে অনেক গবেষনা হয়েছে, সাম্প্রতি বরিশালের গৌরনদীতে ভেষজ গবেষক আহছান উল্লাহ সল্প পরিসরে কাসাবা নিয়ে গবেষণা করে জানিয়েছেন, কাসাবা চারা রোপনের ৬ মাস পর থেকে টিউবার সংগ্রহ করা যায় এবং সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ২০/২৫ টন কাসাবা উৎপাদন করা যায়। কাসাবা চাষের জমিতে যাতে বন্যা অথবা বৃষ্টির পানি না দাঁড়ায় এ জন্য নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে। কাসাবা যদিও খরা সহনশীল গাছ তথাপিও বারবার করার ফলে ফলন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে খরা মৌসুমে সপ্তাহে ১৫/২০ দিন পানি পেলে ফলন বৃদ্ধি পায় ।
কাসাবার বংশ বিস্তার ঃ কাসাবার বংস বিস্তার সাধারণত ষ্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। ৮ থেকে ১২ মাসের ২/৩ সেন্টিমিটার পুরত্ববিশিষ্ট রোগ ও পোকামাকর মুক্ত কান্ড চারা তৈরির জন্য আদর্শ। ফেব্র“য়ারি মার্চ মাসে রোগ মুক্ত কান্ড সংগ্রহ করে ধারালো ছুড়ি অথবা ডাবল সিকেসা দিয়ে এক বা দুই পর্ববিশিষ্ট ২০/৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট কান্ড পলি ব্যাগে বা সয়েল বেডে ৫ সেন্টিমিটার গভীরতায় ৪৫ ডিগ্রী কোনে দক্ষিনে হেলিয়ে রোপন করতে হয়।
কাসাবা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত কর্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কন্দ জাতীয় ফসল। খাদ্য হিসেবে কাসাবার পরিস্কার টিউবার সরাসরি বা সেদ্ধ করে অথবা কাঁচাও খাওয়া যায় । কাসাবা থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায় যা দিয়ে রুটি, বিস্কুট, চিপসসহ নানাবিধ খাবার তৈরী হয়। এছাড়াও সাগু, বিয়ার, পোলট্রিফিড তৈরিসহ বস্ত্র, কাগজ, আ্যডহেসিব,স্টাচ, এলকোহল শিল্পে প্রচুর কাসাবা ব্যবহার করা হয়।
কাসাবার রোগ ও পোকামাকড় ঃ কাসাবা সাধারণত যে সব রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে উল্লে¬খযোগ্য হলো, কাসাবা স্কেল, প্রিপস মাইট হর্নওয়াম, হোয়াইট গ্রাব,উইপোকা নেমাটোড ও ইদুর। তবে সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করে ঔষধ ব্যবহার করলে এ সব রোগ পোকা দমন করা যায়। গবেষনায় আরো দেখা গেছে কাসাবা জৈব প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করলে রোগ-পোকা, মাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
আমাদের দেশে কৃষি দ্রব্য উৎপাদনে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে সে স¯¢াবনা বাস্তবায়নে তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি বরং উৎপাদন ধীরে ধীরে নিুগামী হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী লাভজনক এ কাসাবা সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের বুঝাতে পাড়লে চাষীদের মাঝে উৎপাদনের উদ্দিপনা সৃষ্টি হবে। কাসাবা চাষ সমগ্র বাংলাদেশে সম্প্রসারণ করে কৃষি ক্ষেত্রে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের বৃহত্তর ভূমিহীন শ্রেণীকে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত করে শ্রেণী বিভক্ত সমাজে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন কাসাবা চাষীদের প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। কাসাবা চাষের মাধ্যমে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। পরিকল্পিত কাসাবা চাষে কৃষক পরিবারে অতিরিক্ত আয় ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সমগ্র বাংলাদেশের আবহাওয়া কাসাবা চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। কৃষি ও শিল্পভিত্তিক এই কাসাবা উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জনপদের হতদরিদ্র ও গ্রামীণ জনগণের বাড়তি আয়,কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,সল্প পুঁজিতে কুটির শিল্পের প্রসার তথা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে এ পন্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার একটি উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে সচেতন মহল মত প্রকাশ করেছেন।