0
(0)


আবদুল্লাহ আল নোমান।
পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে দশ কামরার বাড়ি নির্মাণ করে এলাকায় আলোরন সৃস্টি করেছেন দন্ত চিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে দৃস্টি নন্দন বাড়িটি। এটি নির্মানে পিইটি (পলিথিন টেরেফথালেট) বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের বোতলে কোমল পানীয় ব্যবহারের জন্য নিরাপদ মনে করা হয়। যা ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয়। সে বোতল দিয়েই মূলত বাড়িটি নির্মান করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গেলে দেখাযায়, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত রামানন্দেরআঁক গ্রামে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। সারি সারি বোতল দিয়ে নির্মাণ করা দেয়াল দুর থেকে দেখলে মনে হয় কোন কারুশিল্পি নকসা পাকিয়েছে বাড়িটির দেয়ালে। আসলে এ গুলি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরা সিমেন্টের গাথুনি। অনেকেই বাড়িটি দেখতে আসছেন। বাড়িটির নাম দেয়া হয়েছে বোতল বাড়ি।
একজনত বলেই ফেলছেন আপনি একটি মহা-সাগরকে বাঁচাচ্ছেন একটি গ্রহকে বাঁচাচ্ছেন। যদি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতলের বাড়ি স্থায়ীত্বের পূর্নতা পায়, তাহলে সস্থিও মিলবে। কেননা প্লাস্টিকের দুষন আজ মায়ের গর্ভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিশ্বের ল্যান্ডফিলগুলো প্লাস্টিকের বোতলে ঠাসা। এ ভাবে যদি পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের বোতল মজুদ করে দুষন থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায় তা হলে দোষ কি। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক পরিক্ষা নীরিক্ষা করে দেখা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, তিনি জাপানে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তিন তলা বাড়ির একটি ভিডিও দেখেছেন, সেখান থেকেই ¯্রফে সখের বসে ২০২১ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এর আগে পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে পরিক্ষামূলকভাবে বাড়ির পুকুরে ৩০ ধাপের ঘাটলাও নির্মান করেছেন যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে কোন সমস্যা হয় নাই। এতে তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। বাড়িটি নির্মাণ করতে তিনি এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেছেন। বাড়ির উঠানে আরও ২০-৩০ হাজার বোতল মজুদ আছে। বিভিন্ন ভাঙ্গারি দোকান থেকে বোতল কিনে আনেন। সেগুলোর ভেতরে বালি ভর্তি করে সিমেন্টের গাথুনি দিয়ে নির্মান করা হয় দেয়াল। বালি ভর্তি এসব বোতল দিয়ে মাটির নীচ থেকে আড়াইফুটের বেশি ভিত তৈরি করেছেন। তারপর এর ওপর দেয়ালের গাঁথুনি দিয়েছেন। বাড়িটি দ্বিতল করার ইচ্ছা তার। বাড়িটির বিশেষত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ জানান, বাড়িটি ছাদ দেয়ার পরে পূর্ণ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। তবে ভূমিকম্প হলেও বাড়িটির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়াও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও প্লাস্টিকের ভেতরে বালু থাকায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে না। বোতলে বালি থাকায় গরমের সময় ঘরের ভেতরের পরিবেশ ঠান্ডা আর শীতের সময় উষ্ণ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির খরচের চেয়ে অন্তত ৩০ ভাগ কম খরচে এ বাড়ি নির্মান করা সম্ভব। ভবিষ্যতে পরিত্যাক্ত বোতল ও পলিথিন দিয়ে ডিজেল পেট্রোল আহরন করার ইচ্ছা আছে তার।
বাড়িটি দেখতে আসা ব্যবসায়ী মোঃ রুবেল মুন্সি বলেন, বাড়িটি অনেক দৃস্টি নন্দন। আমার আগ্রহ থেকে এটি দেখতে আসছি যদি পরিবেশ সম্মত হয় তাহলে আমিও এভাবে একটা বাড়ি বানাবো।
গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান বলেন, এতে খরচ কিছ‚টা কম তবে এর পরিবেশগত দিক স্থায়ীত্বও ব্যাপক পরিক্ষা নীরিক্ষার উপর নির্ভর করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের পরিচালক (উপ সচিব) মোঃ আবদুল হালিম এর দৃস্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মান পরিবেশ আইন সমর্থন করে না। কেননা এটি বসবাসযোগ্য কিনা, দুর্যোগ সহনশীল কিনা, বসবাসের জন্য কতটা পরিবেশ সহনশীল হবে তা পরিক্ষা না করে বলা যাবে না। তবে বিষয়টি আমি সরেজমিনে দেখবো।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.