গৌরনদীতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টিহীন শিক্ষক কামরুজ্জামান

0
(0)


মো.আহছান উল্লাহ,গৌরনদী।
যার দৃষ্টি নাই তার কাছে সবই অন্ধকার। পৃথিবীর কোনও আলো কোনও উচ্ছাস সকল আনন্দ উপভোগ করার ইচ্ছা থাকলেও মনের সঙ্গ থাকে না। এ এক আবিশ^ যন্ত্রনার ব্যাপ্তি। যার পাশর্^প্রতিক্রিয়ায় রয়েছে অসংখ্য বিষাক্ত ফলা। তা কতদিন সইতে পারে ?
সব সামাল দিয়ে সব দুঃখগাথা চাপা দিয়ে নিভৃত পল্লীতে বছরের পর বছর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন গৌরনদীর দৃষ্টিহীন ইংরেজী শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান এ্যাপোলো। তিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত লক্ষনকাঠী গ্রামের প্রয়াত শিক্ষক মো.এন্তাজ উদ্দিন মিয়ার ছোট ছেলে। ৩ ভাই ৩ বোনের সংসারে সবার ছোট তিনি। ব্যক্তি জীবনে দুটি কন্যা সন্তানের জনক। এই দৃষ্টিহীন শিক্ষকের অসাধারন প্রতিভা মুগ্ধ করেছে স্বজন,সহকর্মী,ছাত্র,ছাত্রী এবং এলাকাবাসীর।
আমাদের দেশে দৃষ্টিহীনদের ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করে মনের আলো জাগিয়ে তোলার অপ্রতুল ব্যবস্থা থাকলেও সে আলোয় আলোকীত হননি এই প্রতিভাবান। ছয়মাস বয়সে টাইফয়েড জ¦রে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। প্রথমে বাবা পড়তেন তা শুনে পড়া রপ্ত করতেন। বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিগিৎসকরা কথা বলতে নিষেধ করে। এরপর অন্যের পড়া এবং ক্যাসেট প্লেয়ারে শুনে তা রপ্ত করে শিক্ষা গ্রহন করেছেন।
২০০৫ সালে গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম লক্ষনকাঠী দারুছ ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষতার মহান এ পেশায় যোগদান করেন। নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়,বাটাজোড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সরকারী গৌরনদী কলেজ এবং বরিশাল বিএম বিশ^বিদ্যালয়ে মাষ্টার্স করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ছাত্র হিসেবেও মেধাবী ছিলেন। অনেক বড় চাকুরির সুযোগ হলেও তিনি তা গ্রহন করেননি। সেবার ব্রত নিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেন। শিক্ষার আলো ছড়ানোতেই তিনি খুশি। অসহায় গরীব শিক্ষার্থীদের একটা আশ্রয় স্থলও তিনি। মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় একটি নুরানী মাদ্রাসা চালু করে একতলা ভবনও করেছেন। সেখানেও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ছাত্র,ছাত্রীদের নিয়ে এলাকাবাসীকে পরিবেশের বিষয়েও সচেতন করছেন এই আলোকীত সাদা মনের মানুষটি। তার অনেক ছাত্র দেশ বিদেশে সরকারি বে-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে গুরত্বপূর্ন দায়ীত্ব পালন করছেন।
গতকাল প্রতিভাবান এই শিক্ষক কালের কন্ঠকে বলেন, চোখের আলো যাদের নেই তাদের বেঁেচ থাকতে যে যন্ত্রনা তার ব্যাতিক্রম আমি নই। ছয় মাস বয়সে টাইফয়েড জ¦র চোখের আলো কেরে নেয়। ৪র্থ শ্রেনী পর্যন্ত বড় অক্ষর হলে দেখে দেখে পড়তে পারতাম,৫ম শ্রেনী থেকে আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারিনি। আমার বাবা,ভাই,বোন ভাবী আমার কয়েকজন বন্ধু এ পর্যন্ত আসায় উৎসাহ যুগিয়েছেন। জীবনটাকে সেবায় কাটিয়ে দিতে চাই। ভবিষ্যতে কি করতে চান এমন প্রশ্নে বলেন পিতার যে জমি পেয়েছি সেখান থেকে কিছু জমি রেখে দিয়েছি একটি প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছি এবং মিশরের আল আজহার বিশ^বিদ্যালয়ে একটু সফর করার আগ্রহ আছে।
। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মুহিবুল্লাহ,সিদরাতুল মুনতাহা ও তাজনুর আক্তার লিয়া জানান,স্যার অনেক ভালো মনের মানুষ। স্যার আমাদের আন্তরিকতার সাথে পাটদান করেন। আমাদের নৈতিক শিক্ষাও দেন। মাদ্রাসার সহ সুপার মাওলানা সাইদুল ইসলাম,শিক্ষক মাওলানা মনির হোসাইন বলেন, কামরুজ্জামান এ্যাপোলো স্যার একজন অসধারন প্রতিভাবান মানুষ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.