আজ নারী দিবস গৌরনদীতে ৪৯ বছর পানির কলসে ভর করে বেঁচে আছেন এক মা
মোঃ আহছান উল্লাহ।
মায়ের ভালোবাসা,হেরিলে মায়ের মুখ দূরে যায় সব দুখ,মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,মায়ের শীতল কোলে সকল যাতনা ভোলে কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান। কবি কাজি নজরুল ইসলামের মা কবিতার একটি পংন্তি।
মা পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ। আর এই মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ, অনুভুতি, আবেগ, সম্মান ও দুঃখ-কষ্ট নিয়ে একটি শব্দ মা। মায়ের প্রতি ভালোবাসা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভালোবাসা, যা কখনও শেষ হয় না। হয়ত কবি বেঁচে থাকলে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চরগাধাতলী গ্রামের অসহায় মা সবিতা রানি হালদার (৮১)কে নিয়ে আরেকটি কবিতা লিখতেন। আধুনিকতার চড়ম উৎকর্ষতার এই যুগে হয়ত এ রকম অনেক মায়ের বুকভরা নিশ্বাস আর চোখের জলে ভিজে যায় তার সেহ্নের আচল । সবার অগোচরে দুঃখগাঁথা কষ্টগুলি পর্দার আড়ালেই থেকে যায়।
স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়েছিল দীর্ঘদিন। সে অবস্থায় বিগত ১০ বছর আগে স্বামী মারাযান। স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায়ই অভাবের তাড়নায় পানির কলস কাকে নিয়ে শুরু হয় বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ৪৯ বছর ধরে চলছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এভাবেই নিজের হৃদয় নিংরানো জীবন সংগ্রামের কথা জানালেন সবিতা রানি হালদার (৮১) ।
তিনি উপজেলার চরগাধাতলী গ্রামের মৃত রাধা কান্ত হালদারের স্ত্রী। সবিতা রানি গৌরনদী বন্দরে ৪৯ বছর ধরে বিভিন্ন দোকানে,হোটেলে কলসে খাবার পানি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সবিতার স্বামী মারা যাওয়ার পর। তিন মেয়ে দুই ছেলে রেখে যান। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেঝ মেয়েটা বিধবা হয়েছে তাকেও সবিতা রানির দেখা লাগে। তার দুর্গতি দেখে বন্দরের একজন ব্যবসায়ী তার পরিত্যাক্ত একটি ঝুপরি ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন এবং সেখানেই থাকেন। ছেলেরা বিয়ে করে অন্যত্র থাকে।
স্থানীয়রা জানায়, সবিতা রনি পানির কলসে ভর করেই বেঁেচ আছেন। ৮১ বছর বয়সে জীবনের শেষ মূহুর্তে এসেও কলস ছাড়তে পারেননি। সরকারি সুবিধা বলতে বয়স্কভাতার একটি কার্ড পেয়েছেন। কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন সবিতা।
গৌরনদী বন্দরের ব্যবসায়ী হাকিম হাওলাদার,রিপন,আজিজুল,কানাই ঘোষ, গৌতম দেসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত মাথায় নিয়ে গৌরনদী বন্দরের বিভিন্ন দোকানে হোটেলে কলসে খাবার পানি সরবরাহ করেন সবিতা। এক কলস পানি দিয়ে পাঁচ টাকা করে নেন। এই আয় দিয়ে সংসার চলে তার। ছেলে থেকেও নেই। দুই ছেলে বিবাহ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকে। মা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন খোঁজখবর নেয় না । উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় ৮১ বছর বয়সেও পানির কলসে ভর করে বেঁচে আছেন তিনি। এরমধ্যে মেঝ মেয়েটা বিধাব হলে তাকেও দেখতে হয় সবিতা রানির।
সবিতা বলেন, আমাকে দেখার কেউ নেই। ছেলে থেকেও নেই। শেষ বয়সেও কলসে পানি টানতে হয়। এই বন্দরে আমি পাঁচ পয়সায় প্রতি কলস পানি টেনেছি এখন কলস প্রতি পাই পাঁচ টাকা। কলসে পানি টেনেই সংসার চলে। এটাই আমার জীবন, এখানেই হয়তো শেষ হবে।