0
(0)


আহছান উল্লাহ।
প্রিয় পাঠক, চির নতুনের সাধ কারই-বা না আছে ? তরতাজা হয়ে চিরটা কাল কাটাতে কে বা না চায় ? বাস্তবে কি তা সম্ভব। নব বর্ষের পূন্য বাসরে মন তো অনেক নতুন স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই সংসারের মারপ্যাঁচে বর্ষশেসের দিনটিতে পৌঁছে যায়। ফের শূরু হয় ভাবনাÑসুন্দর করে বাঁচার চিন্তা। রোগী চায় সুস্থ হতে,ধনী আরো ধনী,গরীব চায় ধন-সম্পদ,চিকন চায় সাস্থ, মোটা চায় চিকন। ছাত্র ছাত্রীরা মেধার কাঙ্গাল। একই সময় হয়ত কোন মা বাবা সন্তান কামনায় মগ্ন। কেউ আবার অন্যের উপকারের বাসনায় ছটফট করছে। কতই না ভাবনা রয়েছে। এর মুলে রয়েছে একে অপরকে জব্দ করার বাসনা। এই সব চিন্তাভাবনা মানুষকে সঞ্জীবনী মন্ত্রে দীক্ষিত করে।
এমনি ভাবে সংসারের একটি মানুষ আরেকটি মানুষের কাছে হাত পেতে দাঁড়ায় জীবনে সঞ্জীবনী শক্তি লাভের আশায়। কিন্ত ভালো বাসার বেসাতিতে স্বার্থপরতা,অহঙ্কার,লালসা,হিং¯্রতা,নিরবুদ্ধিতা প্রভৃতি এ সব ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটায়। কম আর বেশী। অথচ একটুখানী বিচার বোধ থাকলে জীবন প্রকৃত অর্থে জীবন হয়ে উঠত। আর যখন তা হয় না তখনই মানুষ বেড়িয়ে পরে সঞ্জীবনীর খোঁজে।
হয়ত ভাবছেন দেহ-মন-অর্থ সবকিছুরই বিনিময়ে সংসারের স্ত্রী কিংবা পুরুষ প্রানীটির কাজ থেকে সঞ্জীবনী দাওয়াই পেলে জীবন সর্বদা সজীব হয়ে থাকবে। আসলে বাস্তবতায় তা হওয়ার পার্সেন্টিস অপ্রতুল। এরকমই প্রতিটি মানুষ ভিক্ষুকের রান্না ঘড় থেকে রাজ দরবার পর্যন্ত নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত হতাসার জালে আবদ্ধ হয়ে সপ্ন দেখেন সঞ্জীবনীর ।
তাই আমার জীবনের সঞ্জীবীন হলো বাংলাদেশের পরিত্যাক্ত লতা পাতা হতে পারে দেশের সোনা। কথাটি এখন সর্বজন বিধিত। কেননা এক সময় যা ফেলনা ছিল পরবর্তিতে তা রপ্তানী পন্যে পরিনত হয়েছে। ভালভাবে সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে পৃথিবীতে দীর্ঘকাল বাঁচার জন্য আসুন আমরা বেড়িয়ে পরি সঞ্জীবনীর সন্ধানে। যে খানে থাকবে সুন্দর মন সু সাস্থের সরল পথ,থাকবে সবুজ অর্থনীতী।
তেমনি প্রাকৃতির একটি উপাদান ঔষধি গাছ সঞ্জীবনী। এর রয়েছে অসাধারন ঔষধি গুন। পরিত্যাক্তভাবে আমাদের দেশের সর্বত্র দেখা মেললেও। কেউ চেনে কেউ চেনে না আবার চিনলেও এর ব্যবহারও অনেকে জানেন না। অথচ এ রকমই একটি ঔষধী গাছে রয়েছে মানব স্বাস্থের জটিল রোগের প্রতিরোধ ব্যাবস্থা। আছে সবুজ অর্থনীতির সম্ভাবনা।
বরিশালের গৌরনদীর একটি পুরানো পথ। যে পথে ২০ বছর আগেও দিনে কোন লোক একা একা চলাচল করত না। কারন জঙ্গলে ঘেরা ্ওই পথে ভয়ঙ্কও কিছু কাকতালীয় ঘটনা নাকি ঘটেছিল সে কারনেই রাস্তাটি নিয়ে হাড়হীম করা অনেক কথা শোনা যায়। বর্তমানে ওই পথে কোন ভয় নাই। কেননা কংক্রিটের জঙ্গলে পথটি এখন সরব নেই জঙ্গলের কোন চিহ্ন। শুধু একবুক ক্ষত নিয়ে টিকে আছে একটি পুকুর তাও আবার সংকুচিত হয়ে আসছে। সে পুকুরের পুরানো চুনসুরকির তৈরি বিলুপ্তপ্রায় ঘাটলার সাথে বেড়ে উঠা কযেকটি সঞ্জীবনীর দেখা।
সঞ্জীবনীকে আমরা অনেকে ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ হিসেবে চিনি। ওষধি কাজে তিনটি জাতের সন্ধান পাওয়া যায়। এবং তিনটি জাতেরই রয়েছে অসাধারন জটিল রোগের প্রতিরোধ ব্যাবস্থা। তাই আধুনিকতার যুগেও সঞ্জীবনী নামটি দখল করে আছে।
আমাদের দেশের সর্বত্র এর দেখা মেললেও অসাধারন গুনের এ গাছটি সম্পর্কে আমরা এখনও পর্দার আড়ালে। অসাধারন গুনের ভেষজটি আমাদের দেশের হলেও আদী প্রচীন গ্রন্থাদিতে এর কোন উচ্চবাচ্য পাওয়া যায়নি তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন হয়ত এটি প্রাচীন গ্রন্তে এর ভীন্ন নামে আসতে পারে। অথচ বিশ্বব্যাপী এর সংসার। ছায়াযুক্ত ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে সঞ্জীবনী জন্মে। এটি ঠিক ফার্ন না হলেও এটিকে ফার্ন হিসেবেই আমরা জানি। ইংরেজীতে তাই একে ঋবৎহ-ধষষবং বলা হয়। কোন কোন সুত্র জানায় এর ৫০টিরও বেশী প্রজাতি রয়েছে। থাকলে থাকতেও পারে তবে সঞ্জীবনী হিসেবে তিনটি প্রজাতি প্রাকৃতিক চিকিতসায় বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিরোধের প্রমান দিয়েছে।
আর এ তিনটি প্রজাতি আমাদের দেশের সর্বত্র দেখা মেলে। এটির মুল বা রাইজম মাটির উপরে সমান্তররালভাবে বারে এবং তা থেকেই পাতা বের হয়। পাতা ঝিরঝিরে গারো সবুজ এবং নরম। সহজেই শুকিয়ে যায়। আবার শুকনো পাতা কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা পুনরায় সজীব হয়ে উঠে,হয়তো-বা এ জন্য এর নাম সঞ্জীবনী। এটির ফুল ও ফল হয় না। বংস বিস্তারের জন্য স্পোর তৈরী হয়। ভেষজ দাওয়াই হিসেবে এর পাতা মুল সব ব্যবহৃত হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্পোরের সৃষ্টি হয়ে গাছ জন্মালেও বারো মাস আমাদের দেশে এলাকা ভেদে পাওয়া যায়। এটি মানব দেহের বিভিন্ন রোগের জটিল রোগের প্রতিরোধকসহ দেহ মনের জীবনী শক্তির সঞ্চার করে।
গৌরনদীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার অতিপরিচিত প্রায় ৮০ বছর বয়সের কবিরাজ আলতাফ হোসেন খান বলেন,দেখেন আমরা কবিরাজি করি বা করছি দুটি ধারা নিয়ে একটি ওস্তাদের দিক্ষা অপরটি পুথিগত বিদ্যা। যে কারনে অনেক মুল্যবান ঔষধি গাছ আমাদের সামনে থাকলেও না চেনার কারনে তা অবহেলিতই থেকে যায়। আমি প্রথম চট্রগামের সিরাম পাহারে এক সাধুর কাছে এর অনেক উপকারিতা জেনেছি আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে। তখন থেকে এর পথ্য বিভিন্ন রোগিকে দিয়ে এর অসাধারন ্ওষধি গুন আমি পেয়েছি।
কুয়েত প্রবাসী পুষ্টিবীদ ইলিয়াসবীন শওকত বলেন, আমি যে কম্পানিটিতে কাজ করি সেটি মালয়েশিয়ার ডিএস্কএন কম্পনী পৃথিবীর মধ্যে একটি বড় প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন কম্পনি। এই সঞ্জীবনী নিয়ে প্রায় পাঁচ রকমের গবেষনা চলছে। অনেক ভালো রেজাল্ট আসছে। সবুজ অর্থনীতীর এই ভেষজ পন্যটি ইতমধ্যে বাংলাদেশে অর্গানিক পদ্ধতিতে বানিজ্যিক চাষ করার জন্য আমাদের একটি টিম কাজ করছে। এটি বার্ধক্যের বারানসী অকাল বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে দীর্ঘ্যজীবন বজায় রাখতে চাইলে দিনে দু একবার সঞ্জীবনীর সরবত পান করুন। অশান্ত সংসারে শান্তি ফেরাতে নেমে পরি সঞ্জীবনীর সন্ধানে।
আইয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বলেন,বই এবং লোকাল নামে এর ভিন্নতা থাকতে পারে তবে এর ঔষধি গুন অনেক। আমাদের কম্পানি হার্বস ওয়ার্ল্ড এর গবেষনা টিমে এটি দিয়ে বিকল্প চা তৈরির গবেষনা চলছে।
আইয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ পন্ডিত অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরি কালের কন্ঠকে বলেন, প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ সম্মন্ধে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সঞ্জীবনীর অনেক গুনাবলীর পরিচয় পাওয়া যায়। সঞ্জীবনীর একটি প্রজাতি আমাদের দেশে ঢেকি শাক নামে পরিচিত এটি গ্রামের মানুষ অনেকেই বিভিন্ন রোগের জন্য পাক করে খেয়ে থাকেন। কালভেদে সমীক্ষা থেকে যে সব প্রমান্য তথ্য সংগৃহীত করা সম্ভব হয়েছে,তাতে বায়ু বিকার,অপস্মার (মৃগী),সর্দি-কাসি,কৃশতা,অর্শ,রজোরোধ,গুদভ্রংশ (ঢ়ৎড়ষধঢ়ংব ড়ভ ধহঁং),ক্ষুদ্র মূত্রাশ্মরী,রক্তপিত্ত,ধাতুদৌর্বল্য,প্রসবান্তিক দুর্বলতা,অগ্নিমান্দা,শ্বেতপ্রদর,ইন্দ্রিয়দৌর্বল্য,বার্ধক্যজনিত এবং রোগান্তিক দুর্বলতায় ব্যবহৃত হয়। ভেষজটিতে আছে বার্ধক্য প্রতিরোধক এবং দীর্ঘায়ুলাভে সহায়ক। এ ভেষজটি সংগ্রহ করে শুকিয়ে এক বছরেরও বেশী সময় সংরক্ষন করা যায়। তবে যে কোন ভেষজ দাওয়াই অবিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে যথাযত অনুপনসহ সেবন করা উচিত।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.