0
(0)


আহছান উল্লাহ।
দরিয়াই নারিয়ল একটি ফলের নাম। হিন্দি শদ্বের আদলে নামটি। নাম যাই হোক এর আছে আরো অনেক ইতিহাস। তবে লেখার আগে মন চলে গেল একদম ছোট বেলার জীবনে। সেসব দিনের বহু ঘটনাই বর্ধিত জীবন যুদ্ধেও নিত্য নতুন ঘটনার স্তুপে চাপা পড়ে গেছে। আবার এমন কিছু ঘটনা আছে যাহা সুযোগ পেলে মনের মাঝে উঁকি মারে।
বিস্তারিত লেখার আগে সেই কৈশোরের কিছু সৃতি তুলে ধরছি। গৌরঙ্গ মন্ডল আর জোনাবালী খুড়োর তখন পুর্ন যৌবন। সবে মাত্র তাদের ধ্যান জ্ঞানের আখরায় যাওয়া আসা শুরু। বয়স্কদের কাছে যাওয়া আসায় আমাদেও কৈশোওে কিছু ভিতি কাজ করত। বর্তমান যুগের কৈশোরের মত পাকাপোক্ত না থাকলেও ভয় ভয় অবস্থাটা চলে গেছে তাও নয়। সেই সময়টার একটা কথা মনে পরে গেল।
মন্ডল আর খুরো তাদের একটু উচ্চ শব্ধ শুনে একটু আড়ালে দাঁড়ালাম। মন্ডলকে উদ্দেশ্য করে খুরোর প্রশ্ন গাধাকি গাছে জন্মে মনে করেছো ? মন্ডলের সুরটা অপেক্ষাকৃত নরম আমি কি তাই বলছি নাকি ? আমিত বলছিলাম তারপর খুরোর চড়া শুরে মন্ডলের কথা যেন কোথায় হারিয়ে গেল।
খুড়ো বললেন তুমি বলেছিলে মাটির নিচে থেকে যে তেল বেরুচ্ছে,তা তিমি মাছের তেল,আর এ কথাগুলোর সাক্ষী মানছো মরে যাওয়া মানুষদের। তারপর বলছিলে পাকা লম্ভা চুলওয়ালা এক বুড়ি চাঁদে পাটের দড়ি কাটছে। আর আমি যখন প্রতিবাদ করলাম,তখন তোমার পুরাতন গো ধওে রইলে,তাই বলিছি গাধা কি গাছে জন্মে না ফলে ?

মন্ডল একটু নরম শুরে তা-তো বলেছিলাম কিন্তু তুমি গাধা বলে ফেললে কেন ? এবার জোনাবালী খুরো স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ফিরে এসে বলল শোন মন্ডল , পুরাতন দিনের ধ্যান-ধারনাকে নষ্ট করা বা সে গুলোকে না মানা আমার ইচ্ছা নয়। তবে সে সবকে মেনে নেয়ার আগে যুক্তির দ্বারা বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে যাছাই বাছাই করা কি আমাদের উচিত নয় ? যুক্তি তর্কের মাধ্যমেই জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। আমরা মানবজাতিরা যেন সে পথের যাত্রী হতে রাজি নই। তার মধ্যে যদি ২/১ জন জাল কেটে বেরুনোর চেষ্টা করেন,তাহলে তার সর্বনাশ কামনা করাটাই আমাদের কাজ। যে কারনে আমাদের জ্ঞানের পরিধিটা একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে। আর পাশ্চাত্যেও জ্ঞানপিপাসু ব্যাক্তিদের দ্বারা বিজ্ঞানের গতি চলমান আছে আমরাও তাদেও অনুকরন করছি। একবা ভেবে দেখেছ আমরা পুরাকালে অনেক জ্ঞানের অধিকারী হয়েও আমরা পেছনে আছি কেন ?
কারনÑ আমরা এই যে তুমি,আমি বা আমাদেও পূর্বপুরষগন জ্ঞানের বিকাশলাভে সাহায্য না করে এক একটি প্রজন্মেও সৃষ্টি করেছি,যারা অথর্ব হয়ে বসে আছে,আমি তাদের মানসবৃত্তিকে গাধার সঙ্গে তুলনা করেছি,আমরাই গাধা জন্ম দিচ্ছি,গাধা গাছে জন্মে না।
হাসি চাপাতে গিয়ে খুসখুসে কাসি,ধরা পড়লাম মন্ডলের চোখে,স্বাভাবিক কারনে রাগটা পড়ল আমার উপরÑলুকিয়ে লুকিয়ে বড়দের কথা ভাগ হারামজাদা।
সেই যে ভেগেছিলাম ঐ প্রসঙ্গ থেকে,তারপর আজ দরিয়াই নারিয়ল সম্মন্ধে লিখতে বসে ফিওে গেলা অতীতে। খুরো আর মন্ডল আজ আর কেউ নাই। যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়ত মন্ডল আর আরেকটি উদহারন নিজের যুক্তির কাছে হাজির কওে আত্মপ্রসাদ লাভ করতেন আর খুরো তখন ফেল ফেল কওে তাকিয়ে থাকতেন এ ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকতো না।
কেন,তা বলছিÑ
কৈশোর থেকেই প্রকৃতির উপর একটু দৃর্বল মানুষ আমি বছর ত্রিশের আগের কথা। কলকাতার দক্ষিনেস্বর এলাকার এক বোনের বাড়িতে কিছু সময়ের জন্য বেড়াতে যাওয়া। ঠিক সে সময় এক জ্টা সাধু এই দরিয়াই নারিয়ল এর খোসায় তার ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জিনিস পত্র ভেনিটি ব্যাগের মত করে কাঁেধ ঝুলিয়ে রেখেছেন। চোখের অবস্থা দেখে প্রশ্ন করতে ভয় পেলাম ও্টা কি বস্তু। তবে যার সাথে ্ওই গিয়েছিলাম তার মাধ্যমে জানতে পারলাম ওটা দরিয়ায়ে নারিয়লের খোসা দিয়ে তৈরি। তবে কোথায় পাওয়া যায় তার কোন স্বন্ধান দিতে পারেননি তিনি।
কোলকাতাসহ আমাদের দেশের অনেক আয়ুর্বেদ পন্ডিতদের কাছে অনেক ঘোড়ঘুরি করে একই কথা জানলাম ওটাকে দরিয়ায়ে নারিয়ল বলে। যাদের কাছে জানতে চেয়েছি সবাই বলেছে দড়িয়ায়ে নারিয়ল,দেখতে নারকেলের শাঁসের মত হলেও তার চেয়ে ২/৩ গুন পুরো ও শক্ত একটি দ্রব্য। উছায়ু নামে ৮৫ বছরের একজন বৃদ্ধা বার্মীজ বলেছেন এটা জোড়া নারকেল। যার কাছে যে ভাবে জানতে চেয়েছি সবাই দড়িয়ায়ে নারিয়ল। তাদের সরল কথা এটার গাছ সাগরের নিচে হয় ফল পাকার পরে উপরে ভেসে উঠে। দরিয়ায়ে নারিয়লকে নিয়ে সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে,তাহলে ওটা কি,কোথা থেকে আসে এখন এ পথেই হাটি।

দরিয়ায়ে নারিয়ল হিন্দি শব্দ অর্থ সাগরের নারকেল। আবার জোড়া নারকেলও বলে। দেখতে নারকেলেরই মত। বহু বর্ষজীবী গাছ,দীর্ঘসুত্রতা এর হারে ও মজ্জায়। ভারতীয় উপমহাদেশের ভেষজবীদগন দরিয়ায়ে নারিয়ল নিয়ে যে ব্যাখ্যা করেছেন তাদের মতে এ ফলের শাঁস মানবদেহের জন্য অনেক উপকারি।
জোড়া নারকেল বা দরিয়ায়ে নারিয়লের আদি বাসস্থান সেচিলিস দীপপুঞ্জ। (palmae) পরিবারের সর্ব বৃহৎ প্রজাতি হচ্ছে দরিয়াই নারিয়ল। সাগরের পানিতে ভেষে ভারতবর্ষসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় এক সময় এ গাছের দেখা মিলত বর্তমানে বিলুপ্ত। গাছ ৬০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্ভা হয়। নারকেল গাছের মতই প্রায় সব পাতা বেশ বড়হ য়।
পুং পুষ্প ও স্ত্রী পুষ্প ভিন্ন ভিন্ন গাছে হয়। পুং পুষ্পদন্ড পাতার গোরা থেকে বেরোয় ২-৪ ফুট লম্ভা এবং ৩-৪ ইঞ্চি চওরা অগ্রভাগ অল্প সরু দেখতে খুবই সুন্দর। ফলের পরিধি প্রায় ৪ ফুট পর্যন্ত হয়। ফুল থেকে ফল পরিপক্ক হতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। ফলের ওজন ১০ -১২ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। পরিপক্ক ফল দীর্ঘ বছরেও নষ্ট হয় না। পরিপক্ষ ফল মহিলাদের নিন্মভাগের মত দেখায়। বিজ রোপন থেকে ফুল আসতে ৩০ বছরের মত সময় লাগে। বহুবর্ষজীবী গাছ এটি। উদ্ভিদ জগতের একটি আশ্চার্য গাছ দরিয়ায়ে নারিয়ল। এটির বোটানিকাল নাম ( Lodoicea maldivica) paimae. পরিবার ভূক্ত।ছবি সংগৃহিত.

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.