গৌরনদীতে জেলেদের বিনামুল্যের চালের মন পাঁচশ টাকা

0
(0)

আহছান উল্লাহ,
বরিশালের গৌরনদীতে জেলেদের বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তার (বিশেষ ভিজিএফ) চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মরণব্যাধি করোনা সংকট মূহুর্তেও তারা জেলেদের মাঝে ত্রানের চাল বিতরন না করে তা আত্মসাৎ করেছেন। নিজের অপকর্মের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একজন চেয়ারম্যান তার এলাকার কতিপয় জেলের মাঝে ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের ১ ম কিস্তির বরাদ্দকৃত ৮০ কেজি চালের পরিবর্তে নগদ ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে বিতরন করেছেন । এ ছাড়া কয়েকজন চেয়ারম্যান তার নিকট আত্মীয়, ব্যবসায়ী, কৃষক, প্রবাসীসহ অন্য পেশার অধিকাংশ ব্যক্তির নাম জেলেদের তালিকাভুক্ত করেছেন বলে সুবিধা বঞ্চিত জেলে,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কারণে প্রকৃত জেলেরা খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে জেলে ও স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিসার সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৮৫৫ জন কার্ডধারী জেলের নামে খাদ্য সহায়তার সরকারি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ১১১ জন, বার্থী ইউনিয়নে ৮০জন, চাঁদশী ইউনিয়নে ৮০ জন, মাহিলাড়া ইউনিয়নে ৯০ জন, বাটাজোর ইউনিয়নে ৯০ জন, নলচিড়া ইউনিয়নে ১৫০জন, শরিকল ইউনিয়নে ১৫০ জন ও পৌরসভায় ১০৪ জন জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, বিধি মোতাবেক জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক জেলে পরিবারকে বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত এই ৪ মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি চাল দেয়ার সরকারী নির্দেশ রয়েছে। ২ কিস্তিতে এ চাল বিতরন করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রত্যেক বারে একত্রে ২ মাসের জন্য ৮০ কেজি করে সরকারী ত্রানের চাল পাবেন প্রত্যেকটি জেলে পরিবার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী ও মার্চের বরাদ্দ চাল গত দেড় মাস আগে দেয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই গৌরনদীর ৮৫৫ জন জেলেদের মাঝে পূনরায় এপ্রিল ও মে মাসের চাল বিতরন করা হবে।
তবে প্রথম পর্বে (বিগত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের) জেলেদের মাঝে প্রদানকৃত ত্রানের মাষ্টাররোলের কপি এখনও কোন ইউপি চেয়ারম্যানগন তার কাছে জমা দেননি বলে মৎস্য কর্মকর্তা জানান। মাষ্টার রোল জমা না দেয়ায় জেলেদের মাঝে চাল বন্টনের বিষয়টি এখন এলাকাবাসির কাছে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ অভিযোগ করেন,বার্থী ইউনিয়নে ৮০ জন জেলের প্রত্যেকের নামে বরাদ্দকৃত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ৮০কেজি চাল সঠিকভাবে তা বন্টন করা হয়নি। চাল বিতরনে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা। এ কারণে আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ জেলেরা গত ২ মাসের বরাদ্দকৃত চাল পায়নি। জেলেদের চাল বিতরনের অনিয়মের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চেয়ারম্যান কয়েকদিন আগে বার্থী সহ বিভিন্ন এলাকার কিছু সংখ্যক জেলের মাঝে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে বিতরন করেছেন। পশ্চিম বার্থী গ্রামেরই ২৭ জন জেলেকে চালের বদলে নগদ এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বার্থী গ্রামের জেলে অমূল্য হালদার, কালাম সরদার অভিযোগ করে বলেন,এ বছর কোন খাদ্য সহায়তা পাইনি। জেলে না হয়েও আমার এলাকার অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে, তারা ত্রানও পাচ্ছেন। ওই গ্রামের জেলে মন্টু হাওলাদার, আলম হাওলাদার বলেন,আমরা কিছুই পাইনি। কয়েকদিন আগে স্থানীয় মৎস্য চাষি তরনী রায়ের মাধ্যমে আমাদের কয়েকজন জেলেকে এক হাজার করে টাকা পৌছে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা। একইভাবে তারাকুপি গ্রামের পলাশ রায় ৫০০ টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
তবে জেলেদের চাল আত্মসাৎ ও তাদের মাঝে চালের পরিবর্তে টাকা প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বার্থীর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান প্যাদা। তিনি জানান,আমি কোন অনিয়ম করিনি, আমার ইউনিয়নে ৮০ জন জেলের নামে বরাদ্দকৃত ২ মাসের চাল আমি ১৬০ জন জেলের মাঝে ভাগ করে দিয়েছি।
শরিকল ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন মোল্লা অভিযোগ করেন,আমাদের না জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা গত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের জন্য বরাদ্দকৃত ১৫০ জন জেলের নামে ৮০ কেজি করে চাল গুদাম থেকে উত্তোলন করেন। কিন্ত বিতরনের সময় তিনি জেলেদের ৮০ কেজির পরিবর্তে ২ মাসে নিজের খেয়াল খুশি মতো ৪০ কেজি করে চাল বিতরন করেন। তাও আবার অধিকাংশ কার্ডধারী জেলেদের দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

খবর নিয়ে জানাগেছে,ওই ইউনিয়নের শাকোকাঠি ও মহিষা গ্রামে সবচেয়ে জেলের সংখ্যা বেশী। শাকোকাঠি গ্রামের জেলে প্রদীপ দাশ, দুলাল দাশ,মানিক দাশ,উত্তম দাশ সহ কতিপয় জেলে অভিযোগ করেন, ২মাসে তারা ৮০ কেজির পরিবর্তে ৪০ কেজি চাল পেয়েছেন। অপরদিকে একই গ্রামের রাম দাশ, বেনু দাশ,মহিষা গ্রামের মোঃ হানিফ,মন্টু সন্যমাত সহ প্রায় অর্ধশত ব্যাক্তি কার্ডধারী জেলে হওয়া সত্যেও তাদের ভাগ্যে ত্রানের চাল জোটেনী বলে ওইসব জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র হালদার ক্ষোভের সাথে জানান,চেয়ারম্যান ফারুক মোল্লা জেলেদের নামে চাল উত্তোলন করে নামে মাত্র বিতরন করে বাকী চাল আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন সহ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
তবে শরিকলের ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনীত জেলেদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,আমি ২ মাসের চাল উত্তোলন করেছি সত্য। তবে আমার ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা বেশী হওয়ায় আমি ১৫০ জন জেলের চাল ৩০০ জন জেলের মধ্যে ৪০ কেজি করে ভাগ করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,জেলেদের মাঝে চাল বিতরনে অনিয়ম হয়েছে তা আমার জানানেই। মৎস্য অফিসার ও ত্রানের চাল বিতরন কাজে সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসাররাও আমাকে কিছুই জানননি। তবে এ ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.