জীবন্ত কিংবদন্তী বাংলাদেশী বৃটিশ সৈনিক গৌরনদীর শওকত আলী সরদার

0
(0)

রিপোর্ট-আহছান উল্লাহ ঃ

বাংলাদেশী বৃটিশ সৈনিক বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন পালরদী গ্রামের বাসিন্ধা মোঃ শওকত আলী সরদার। এখনও জীবিত এই সৈনিক ৯৩ বছর বয়সেও সুস্বাস্থর অধিকারি । আর্থিক টানাপোরেন না থাকলেও এ বয়সে বৃটিশের দেশটাকে দেখার বড় শখ আছে তার। সৈনিক জীবনের অনেক বিভিশিখাময় স্বৃতি চারন করেছেন। আবার অনেক কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেছেন। তার বাবা মরহুম গঞ্জর আলী সরদারও একজন বৃটিশ সৈনিক ছিলেন।

গত ১৫অক্টোবর কথা হয় বর্ষীয়ান এই ব্যাক্তির সাথে। উপজেলার দক্ষিন পালরদী গ্রামের বাসভবনে বসে তিনি জানান ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি পৈত্রিক নিবাসে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। ৩১ জুলাই ১৯৪৫ ইংরেজি সালে যোগদেন বৃটিশ এর সৈনিকের পদে। তৎকালিন সময়ে গৌরনদী ডাকবাংলো মাঠে অনেকেই সমবেত হয়েছিল সৈনিক পদে যাওয়ার জন্য । শওকত আলীসহ সাত জন গৌরনদী থেকে যোগদেন বৃটিশ সৈনিক পদে। তাদেরসহ অন্যান্যদের বরিশাল বেসক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এর পর বরিশাল থেকে ষ্টিমার যোগে নেয়া হয় কলকাতার হাওড়া আর্মী ক্যাম্পে। সেখানে তাদের দলনেতা তাদেরকে প্রথমে সিনেমা দেখান। আনুমানিক এক সপ্তাহ পরে হাওড়া থেকে পাটনার আর আর ক্যাম্পে প্রেরন করা হয়।

পাটনা যাওয়ার পথে কাশি নামক জংশনে ট্রেন বিরতি দেয়া হয়। এ সময় তার (শওকত আলীর) সঙ্গের তিনজন পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার কারন কি জানতে চাইলে তিনি (শওকত আলীর) বলেন, ওই সময়টায় তুমুল যুদ্ধ চলছিল এবং এর কিছু অহত নিহত সৈনিকদের ট্রেনে করে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নেয়া হচ্ছিল। আহতদের অনেকের হাত পা বিচ্ছিন্ন ছিল মোট কথা এক বিভৎস অবস্থা। ওই অবস্থা দেখে ভয়ে পালিয়ে যায় তারা। আমরা পালাই নাই কারন তখন আমার বাবা বার্মা রনাঙ্গনে ছিলেন। পাটনায় কিছু দিন রাখার পর লাকনৌ আর আর ক্যাম্পে প্রেরন করা হয়। সেখানে প্রতিদিন ট্রেনিং আর বনায়ন করানো হত। বনায়নে ছিল শুধু নিম গাছ লাগানো। এ অবস্থায় যুদ্ধ থেমে গেলে ১৯৪৫ সালের ৬ নভেম্বার তাদেরকে আবার কলকাতা পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাদের বাংলাদেশে প্রেরন করা হয় । শওকত আলী জানান সল্প সময়ের যুদ্ধ যাত্রা হলেও অনেক বিভিশিখা ও লোমহর্ষক ঘটনার সম্মুখিন হয়েছেন যাহা তিনি প্রকাশ করতে রাজি হননি। বাংলাদেশে ফেরার পরে কাস্টমসে চাকুরি করেন। ১৯৮৪ সালের শেষ দিকে চট্রগ্রাম থেকে অবসর গ্রহন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত দানশীল,অবসর জীবনে তিনি অনেক সামাজিক কর্মকান্ডে সহযোগীতা করে আসছেন। সদালাপী বর্ষীয়ান এ মানুষটি অত্যন্ত ধর্মভীরু।

৯৩ বছর বয়সে সুস্বাস্থের রহস্য জানতে বৃটিশ সৈনিক শওকত আলীর ছেলে কুয়েত প্রবাসি ইলিয়াস বিন শওকতের সাথে কথা হয়। তিনি জানান তার বাবা শওকত আলী এ বয়সেও খুব সুস্থ্য আছেন এমনকি হাট বাজার থেকে শুরু করে সংসারের অনেক কাজও করেন। অতি সম্প্রতি তার পাকস্থলির একটি জটিল অপারেশন হলেও তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ্য আছেন। তার খাদ্য তালিকায় তেমন কিছু নাই তবে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীও মিঠা পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ। পছন্দ করেন মাশরুম আর চিনি ছাড়া লাল চা। মাশরুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পছন্দ রিশি মাশরুম। নিয়মিত নামাজ রোজা ও কোরআন তেলাওয়াত করেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.