ন্যাচারাল ব্রান্ড গৌরনদীর গব্য ঘি
মো:আহছান উল্লাহ :
বরিশালের গৌরনদীতে তৈরী গব্য ঘি একটি ন্যাচারাল ব্রান্ড। প্রায় দেড় শ বছর আগে গৌরনদীর ঘোষরা এটি তৈরী করেছেন। অত্যন্ত শতর্কতার সাথে পরিবেশ সম্মত ও শতভাগ কেমিকেলমুক্ত তৈরি হয় গৌরনদীর গব্য ঘি। সম্পুর্ন আলাদা স্বাদ আলাদা ঘ্রান আলাদা বৈশিষ্ট। গৌরনদীর দধি,মিষ্টির ঐতিয্যর কথা সবার জানা থাকলেও। এ ন্যাচারাল ব্রান্ডটির রসনা বিলাসের পাশাপাশি রয়েছে ঔষধি অনেক গুন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িযে ছিটিয়ে থাকা গৌরনদীর প্রবাসীদের মাধ্যমে দিনদিন এর সুনাম সুখ্যাতি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে আট শ কেজী গব্য ঘি তৈরী হচ্ছে গৌরনদীর বিভিন্ন দুগ্ধজাত পন্যর কারখানায়। তবে এর চাহিদা শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশী বেড়ে যায়।
গৌরনদীর গাওযা ঘির রয়েছে প্রাচীন ঐতিয্য। সেই ব্রিটিশ আমলে প্রায় দেড় শ বছর আগে গৌরনদীর দক্ষিন পালরদী গ্রামের ডাওরি ঘোষ নামে এক ঘোষ এটি তেরী করেন। দধি মিষ্টি ঘিসহ প্রায় ১৮ প্রকারের লোভনীয় দুগ্ধজাত পন্যর লোভনীয় খাবার তৈরী করেন তিনি যা আজকে একটি শিল্পে রুপান্তরিত হয়েছে। গৌরনদীর অনেক ঘোষ জেলা পর্যায় সেরা করদাতার পুরুষ্কারও পেয়েছেন এ দুগ্ধজাত পন্য তৈরী ও বিপনন করে।
এলাকার বর্ষীয়ান মানুষের অনেকেই স্বৃতিচারন করে বলেন সুলতানি,মোঘল,নবাবী,ব্রিটিস সাসন আমল থেকেই গৌরনদী ইতিহাস ঐতিয্যে ঘেরা। আর গৌরনদীর সেই ঐতিয্যর ধারাবাহিকতায় গৌরনদীর দধি,মিষ্টির পাশাপাশি গাওয়া ঘি একটি আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছে গৌরনদীকে। অবিভক্ত গৌরনদীর ৩৬০ ঘড় জমিদারসহ ভোজন বিলাসিদেরত এই ঘি ছাড়া চলতই না। বর্তমানেত এর চাহিদা আরো অনেক গুন বেড়ে গেছে। এলাকায় এর রকমও কথিত আছে গৌরনদীর এক কেজী ঘি না যেন বড় ধরনের ঝামেলা খালাশ।
সরেজমিনে গৌরনদী বন্দরের বিভিন্ন ঘোষের কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে অত্যন্ত যতেœর সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে তৈরী হচ্ছে গৌরনদীর ন্যাচারাল ব্রান্ড গব্য ঘি। এ ঘি তৈরীর মূল উপাদান দুধ । দুধ থেকে প্রথমে মাখন তৈরী করা হয়। মাখন জালিয়ে ঘি তৈরী করা হয়। তারপর বিশেষ পদ্ধতিতে প্রথমে ঠান্ডা করা হয়। এরপর ফুড গ্রেডের প্লাষ্টিকের কৌটায় দুই কেজী,এক কেজী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের কৌটা করা হয়। এ ছারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক বেশী পরিমানে নিলে টিনের পাত্রে দেয়া হয়। এরপর কৌটার গায়ে বিএসটিআই অনুমোদিত লেভেল লাগানো হয়। প্রতি কেজী ঘি পাইকারী এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। আর এই ন্যাচারাল ব্রান্ড ঘির বিশেষ বৈশিষ্ট হল কোন রকম প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই এক বছরের বেশী সময় রেখে খাওয়া যায় নষ্ট হবে না। গৌরনদী উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় ১২০ টি ছোটবড় দুগ্ধজাত পন্যর কারখানা বা দোকান রয়েছে।
ভেষজবিদরা জানান যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তারা অর্জুন গাছের ছালের গুরার সাথে সামান্য এক নং গব্য ঘি নিয়ে গরম ভাতের সাথে রোগ অনুপাতে দিনে দুই তিনবার খেলে আর্শ্চায্য উপকারিতা পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক উপকারিতা আছে গব্য ঘির। শরীরের লাবন্য ধরে রাখতে গব্য ঘি আর থানকুনি পাতার রয়েছে যাদুকরী উপকারিতা। ভেষজবীদরারা আরো জানান যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য ঘি হিতকর নয়। তবে তারা যে একবারে খেতে পাড়বে না তা নয়।
উপজেলার বিল্বগ্রাম গ্রামের প্রবীন কবিরাজ আলতাব হোসেন খান বলেন গব্য ঘি পুরাতন হলে ভেষজ ঔষধে বিভিন্ন জটিল রোগে ব্যাবহার করা হয়। যত পুরাতন হয় তাদিয়ে বাত,ব্যাথা,ফোড়া বাগিসহ বিভিন্ন রোগের চিকিতসা করা হয়। তিনি জানান তার কাছে প্রায় ৪০/৫০ বছরের পুরাতন ঘি আছে। পুরাতন ঘির দামও অনেক বেশী।
গৌরনদী বন্দরের ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্যাম ঘোষ জানান। এখানে দধি মিষ্টিসহ নানা প্রকারের দুগ্ধজাত পন্য তৈরীর পাশাপাশি প্রতিদিন প্রায় ছয় থেখে আট শ কেজী ঘি তৈরী হয়। এ ব্যবসার সাথে এখন অনেক মুছলিমরাও জড়িত হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় কারখানা গৌরনদী বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের এখান থেকেই সড়ক ও নদী পথে সারাদেশে সরবরাহ হয় গৌরনদীর ন্যাচারাল ব্রান্ড গব্য ঘি। এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পন্য। এটা গৌরনদীর একটা গর্ব । তিল তিল করে গরে উঠা গৌরনদীর ব্যবসায়ীদের দুগ্ধজাত পন্য আজ এটা শিল্পে রুপান্তর হয়েছে। রসনা বিলাশে যেমন এ নির্ভেজাল পন্য মানুষের হৃদয় জয় করেছে তেমনী হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানেরও সৃস্টি হয়েছে। তিনি আরো জানান এ দুগ্ধজাত পন্যর ব্যবসা করে গৌরনদী বন্ধরের একাধীক ব্যবসায়ী। একাধীকবার জেলা পর্যায়ে সেরা করদাতার পুরুস্কারও পেয়েছেন।