আলজিরিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরের শরণার্থী যুবক তাতেহ লেহবিব বারিকা। দু’দিন আগেও তাঁর নাম কেউ জানত না। কিন্তু জানিয়ে দিল, হঠাৎ ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও। যে ভিডিও-য় দেখা গেছে, বাতিল প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন তিনি! আর তাতেই তাক লেগে গেছে বিশ্ববাসীর। বারিকা কোনও ইঞ্জিনিয়ার নন। নন পরিবেশ আন্দোলনেক পরিচিত মুখও। কিন্তু তবু, শরণার্থী শিবিরে জন্মানো এবং সেখানেই বড় হয়ে ওঠা এক যুবকের অভিনব ভাবনা তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীর।

বারিক বলেছেন, “শুকনো ইটের তৈরি বাড়িতে আমি আর আমার পরিবার থাকি। মাথার ওপর জিঙ্কের প্রলেপ দেওয়া ছাদ। গ্রীষ্মে খুব গরম হয়ে যেত ঘর। বেশি ঝড়-জল হলে অনেক সময়েই ছাদ উড়েও যেত। তাই এই সব সমস্যা সমাধান করতেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা মনে হয়েছিল।”

ইউনাইটেড নেশনস রিফিউজি এজেন্সিকে (ইউএনএইচসিআর) এ কথা জানালে, বারিকাকে এই কাজ করার অনুমতি দেয় তারা। বারিকা এর পরে বালি আর খড় দিয়ে ভরা প্লাস্টিকের বোতল একের পর এক সাজিয়ে, বাড়ি বানাতে আরম্ভ করেন। বোতলগুলি গাঁথতে তিনি ব্যবহার করেন সিমেন্ট আর চুনাপাথর। বালি আর খড়ের স্তর থাকায়, এই বাড়ির দেওয়াল অনেকটাই রুখে দিয়েছে মরুভূমির কড়া তাপ।

বারিকা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নতুন বাড়ি তৈরির পরে তাঁরা অনেক বেশি আরামে থাকতে পারছেন। আর বোতলের গোল মুখগুলি বাইরের দিকে করে রাখায়, মরু ঝড়ের সময়েও হাওয়া কেটে যাচ্ছে। সরাসরি ধাক্কা দিচ্ছে না দেওালে। শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বারিকার বাড়ি তৈরির এই ভিডিও শেয়ার হতেই ২ লাখের বেশি ভিউ হয়ে যায়। কয়েক হাজার কমেন্টও জমা পড়ে। অনেকেই বারিকার প্রশংসা করে বলেছেন, সারা বিশ্ব যখন প্লাস্টিক নিয়ে নাজেহাল, তখন বর্জ্য পদার্থকে কী করে কাজে লাগাতে হয়, তা সবাইকে শিখিয়ে দিলেন শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা বারিকা।

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বারিকার এই বাড়ি বানানো যেন নতুন এক রূপকথার জন্ম দিয়েছে। এমনিতেই বর্তমানে সারা বিশ্ব জুড়ে অব্যবহৃত প্লাস্টিক নিয়ে মাথা ব্যথার শেষ নেই। এক বার ব্যবহারের পরে, পরিবেশের ক্ষতি বাড়ানো ছাড়া আর কোনও কাজে লাগে না প্লাস্টিকের বোতলগুলি। সেগুলি দিয়েই দিব্যি ইমারত তুলেছেন বারিকা।

বারিকা জানিয়েছেন, শরণার্থী শিবিরে জন্মানো ও বড় হয়ে ওঠার সুবাদে তিনি ছোট থেকেই দেখে এসেছেন, কীভাবে সারা ক্ষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকে মানুষ। ঘরের মধ্যেই বেশি সময় থাকতে হয়। তীব্র গরমে আর যখনতখন মরুঝড়ের বালিতে সে থাকা বড়ই কষ্টকর।

এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই হঠাৎ এক দিন বুদ্ধি খাটান বারিকা। কুড়োতে শুরু করেন ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল। বালি-খড় ভর্তি বোতল গেঁথে তৈরি করা দেওয়ালে সব সমস্যার সমাধান।

বারিকার এই কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর (ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস)। তাঁকে আর্থিক সাহায্যও করেছে তারা। নিজের বাড়ির পরে আরও ২৬টি এলাকায় বাড়ি  তৈরি করেছেন বারিকা। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আর যখন-তখন মরুঝড় হার মেনেছে বারিকের অভিনব চিন্তার কাছে। একই সঙ্গে, বিশ্বের কাছে প্লাস্টিক রিসাইকেলের এক নতুন বার্তা তুলে ধরছেন শরণার্থী শিবিরের এক উদ্বাস্তু যুবক।