0
(0)

আহছান উল্লাহঃ
আমাদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। যেমন- ধান, গম, পাট ইত্যাদিতে স্বয়সম্বর হলে আমাদের কৃষির সব সমস্যা মিটে যাবে এ ধারণাও ভুল। ধান, গম, পাট এসবের পাশাপাশি ডাল তেল ফল শাক সবজি জাতীয় কৃষির উপর একই গুরুত্ব প্রদান করে এগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে হবে। মৎস্য ও পশু সম্পদের দিকে একই গরুত্ব দিতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ্একটি সম্ভাবনাময় দেশ কোন সন্দেহ নেই। দরকার শুধু আন্তরিকতা ও সম্মিলীত প্রচেষ্টা।
একটি কৃষি প্রধান দেশের শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তাহলে সে দেশের কৃষি ও কৃষক জাতির হৃদপিন্ড। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের আগামীর কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোকপাত করার আগে একটি জোর দাবি বাংলাদেশের কৃষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে কৃষক সন্তানের কোঠা পদ্ধতি চালু করতে হবে। একজন কঙ্কালসার মানুষ মানেই একজন কৃষক যে চিত্রটি আমরা দেখে আসছি তার পরিবর্তন করে শুধু কৃষি ক্ষেত্রকেই আধুনিকায়ন করলে চলবে না আমাদের কৃষককেও আধুনিক করতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক বেশী বেশী কৃষি শিল্প গড়ে তুলতে হবে। ব্যাংক সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জবাবদিহিতার আওতায় এনে কৃষি ঋণ বিতরণে অতি সহজ পদ্ধতি চালু করা জরুরি প্রয়োজন। কৃষির উপর সেবামূলক সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কড়া জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে কৃষি বিষয়কে ঐচ্ছিক বিষয় না করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনার উপর জুরুরী গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। কেননা যে, কোন কৃষি ব্যবস্থায় ভূমি ও পানির সমস্যা সমাধান সবার আগে করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে যে অনুযায়ী জমি কিন্তু বাড়ছে না বরং জমি কমছে। আবার যথেষ্ঠ কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা গেলে জনসংখ্যা আপদ হয়না সম্পদ হয়। এ ছাড়া শিল্প কলকারখানার অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মানের কারণে আবাদি জমির পরিমান কমে আসছে। সে জন্য অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পিত পদ্দতি চালু করতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে পানির সমস্যার সমাধান করতে হবে। এসব বিষয়ে ভিক্ষুকের রান্না ঘর থেকে রাজ দরবার পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত কৃষিজ উৎপাদনে আগাম ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের পরিত্যাক্ত জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে সুষম সার ব্যবহার ও বিষাক্ত কীটনাশকের ছোবল থেকে প্রকৃতি,মাটি ও পরিবেশকে রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে পাশাপাশি কৃষির উপখাতগুলো যেমন মৎস্য,পশু সম্পদ,ভেষজ সম্পদ গুলোর প্রতি একই গুরত্ব দিতে হবে। এ বিষয়গুলোর উপর সংশি¬ষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের গবেষনামূলক দৃষ্টি দিতে হবে।
সম্ভাবনাময় আগামীর কৃষি ব্যাস্থাপনার জন্য দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে কোন মৌসুমে কোন এলাকায় কোন কৃষি দ্রব্য বেশী উৎপাদন করা যায় এবং সেখানে সে রকম কৃষি শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন, ধান, গম সহ বিভিন্ন ফসল দেশের সব জায়গাতেই কম বেশী জন্মে এ গুলোর পাশাপাশি উৎপাদন সমন্বয় করে অনান্য কৃষিপণ্যর উৎপাদন বাড়াতে হবে। অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয় সম্ভাবনাময় কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের আবাদি জমি দ্রুত আগ্রাসীদের গ্রাসে পরিনত হচ্ছে। খাদ্য সংকট অথবা খাদ্যভাবের আশংকা থেকে রক্ষা পেতে কৃষির বিকল্প নেই। এর জন্য কৃষি আবাদী জমির উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের কৃষি জমি মৌলিক ভাবে উৎকৃষ্টমানের হলেও অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়নের কারণে আবাদী জমির পরিমান কমে আসছে। এ ক্ষেত্রে দেশের কৃষিজ জমি রক্ষা করতে প্রচলিত ভূমি আইনের অধিকতর সময়োপযোগী করে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার কর্মসূচিভুক্ত করণের জন্য জাতীয় বিশেজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দূর্যোগের দেশ তাই আবহাওয়া, মাটির গুনাগুন তাপমাত্রা সহ ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরনের কথা বিবেচনা করে অঞ্চল ভিক্তিক কোন ফসল চাষ করতে হবে তা যেমন নির্নয় করা দরকার আবার ভাল ফসল উৎপাদন করতে ভাল বীজের উৎপাদন ও সরবারাহ করা দরকার। শহর গ্রামের সমস্ত ফাঁকা জমি এমনকি অফিস আদালত সহ প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনাতে চাষবাদ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আমাদের কৃষি ও কৃষিজ উপখাত গুলো ক্রমসংকুচিত হয়ে পরেছে। অধিক জনসংখ্যার জন্য আজ কৃষি জমি সংকুচিত হয়ে আসছে। বন ও চাষের জন্য উজার হচ্ছে। বেপরোয়া রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশকের প্রভাবে জীববৈচিত্র নিঃশেষিত হচ্ছে।
কৃষি ও কৃষির উপখাতগুলোর জন্য যেমন দরকার সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পৃষ্টপোষকতা তেমনী কৃষকদেরও পর-নির্ভশীলতা কমিয়ে আনতে হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.