গৌরনদীর অসহায় পারভীনের সংগ্রামী পথচলা

0
(0)

রাবেয়া বিনতে রাবু গৌরনদী,
দার্শনিক ব্যাক্তিরা বলে গেছেন পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে কুঁড়ে ঘরে থাকাও ভালো, অতৃপ্তি নিয়ে বিরাট অট্টালিকায় থাকার কোন সার্থকতা নেই বরিশালের গৌরনদী বন্দরের সংগ্রামী নারী পারভীন বেগম (৩৫)। শিশু বয়সে মা মারা যাওয়ার পর তছনছ হয়ে গেছে তার সুখের জীবন। পারভীন উত্তর সিহিপাশা গ্রামের মৃত সোবাহান ফরিয়ার কন্যা। পারভীনের বাবা পেশায় দিন মজুর ছিলেন। ৮ বছর বয়সে মা মারা যাবার পর পারভীনের বাবা পূনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই থেকে তার দুঃখের দিন শুরু হয়। সৎ মায়ের তাড়নায় শিশু বয়সে তাকে বাবার গৃহ থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। এর পর গৌরনদী বন্দর সংলগ্ন দক্ষিন পালরদী গ্রামে মামার বাড়ীতে আশ্রয় নেন। মামারা গরীব তাই সেখানেও বেশী দিন তার ঠাঁই হয়নি। পরবর্তিতে গৌরনদী বন্দরের একটি রাইচ মিলে সামান্য মজুরীর ভিত্তিতে তিনি কাজ শুরু করেন। এরপর টিকাশার গ্রামের জামাল পাইক নামের এক বিবাহিত যুবকের সাথে তার বিয়ে হয়। এ কারণে স্বামীর সংসারেও সুখের নাগাল পাননি তিনি।
দীর্ঘ দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে পারভীন এখনও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বর্তমানে গৌরনদী বন্দরের কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরা ও মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন শতাধিক কলসি পানি সরবরাহ করেন তিনি। আগে কাঙ্খে পানি টানতেন। রাতে কোমর ব্যাথায় ঘুমাতে পারতেন না। তাই অতিকষ্টে ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি ভ্যান কিনেছেণ। এখন ভ্যানে করেই পানি টানছেন পারভীন। দিনের শেষে পান দেড়শ টাকা থেকে ২শত টাকা। তাই দিয়ে ২ মেয়ের লেখাপড়ার ব্যয়ভার,বাসা ভাড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালান পারভীন।
পারভীন জানান, ১৫/১৬ বছর আগে তার বিয়ে হয় গৌরনদীর টিকাসার গ্রামের মৃত ইসমাইল পাইকের পুত্র জামাল পাইকের সাথে। পারভীনের গর্ভে জন্ম নেয় ২টি কন্যা সন্তান। জামাল ছিল বিবাহিত তাই স্বামীর সাথে পারভীনের বিরোধ শুরু হয়। পরবর্তিতে জামাল পাইক স্ত্রী ও ২ কন্যাকে ফেলে চলে যান। এর পরেও দমে জাননি পারভীন। শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছেন। এখন ২ মেয়ে লামিয়া (১৩) ও মিম (৮) এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের ন্যায় মানুষ করতে চান তিনি। তারা ২ জনই মেধাবী। লামিয়া গৌরনদী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী ও ছোট মেয়ে মিম গৌরনদী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেনীতে পড়ে।
পারভীন জানান, মোর কোন জমিজমা ঘরবাড়ী নাই। মুই জনম দুখি, জীবনে সুখ কি তা পাই নাই।পানি টাইন্যা ভাতের টাহা যোগার করি। মাইনসের বাড়ী ভাড়া থাহি। মাইয়াগো পড়া শোনার খরচ চালাই। সংসারের খরচ বাইর‌্যা গেছে। আ্যহন মুই ক্যামনে বাচমু জানিনা। যে কয়দিন বাচমু হেকয়দিন মুই হাল ছাড়মু না মোর মাইয়াগো পড়ালেহা করাইয়া মানুষ বানামু।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.