0
(0)

 

রাজু হামিদ : ১৯৭১ সালে নিরীহ বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলো কথিত মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের শোষকরা। আবার সেদিন আমাদের বড় একটি অংশকে আশ্রয় দিয়েছিলো কথিত হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের সরকার। ২০১৭ সালে এসে দেখছি কথিত বৌদ্ধ রাষ্ট্র মিয়ানমারের সরকার সে দেশেরই নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে নির্যাতন চালাচ্ছে; যদিও এই নির্যাতন শুরু হয়েছে আরো অনেক বছর আগেই।

বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ি – ১৯৭১ সালে নিজ মাতৃভূমি রক্ষায় অন্যদের মতো হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৌদ্ধধর্মাবলম্বিরাও। অথচ স্বাধীন রাষ্ট্রে তাদের ওপরও হামলা হয়েছে বহুবার। আবার প্রায়শ: শুনি হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে।

বাংলাদেশ এখন একটি কথিত মুসলিম রাষ্ট্র। আমরা কি বলবো- বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ওপর মুসলিমরা হামলা করেছে? আসলে বাস্তবতা কি তাই? আপনার কোন বন্ধু যে কিনা মসজিদের ইমামতি করেন, সেকি কখনো কোন হিন্দুর বাড়িতে কিংবা বৌদ্ধের বাড়িতে হামলা করেছে? নাকি শোষক শ্রেনী তাদের স্বার্থে হামলা করেছে?

আসলে একটি রাষ্ট্র মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান নাকি বৌদ্ধ হবে-এটা কে নির্ধারণ করেন? সহজ জবাব-আপনার আমার শোষকরা। ধর্ম বরাবরই শোষকশ্রেনীর একটি বড় হাতিয়ার। এজন্য কোনভাবেই ধর্ম দায়ি না। কেননা সকল ধর্মেই শান্তি এবং মানুষের জয়গান গাওয়া হয়েছে। কোথাও বলা হয়নি- রোহিঙ্গাদের কিংবা বাঙালিদের ওপর হামলা করো।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। হবে নাই বা কেন? মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে, তা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। রোহিঙ্গাদের ওপর আমার ভাই-বন্ধুদের সহমর্মীতা দেখে সত্যিই গর্বিত। ওইসব ভাই-বন্ধুদের উদ্দেশ্যেই বলছি-রোহিঙ্গাদের কেবল মুসলিম হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখুন। শুধু রোহিঙ্গা কেন, আমিতো ভারতের স্বাধীনতাকামীদেরও সহায়তা করার পক্ষে। যেমনটি আমারাও সহায়তা চেয়েছিলাম ’৭১ এ এবং পেয়েছি।

‘মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই’ ওহে পাগলা এ আমার কথা নয়। কাজী নজরুল ইসলামের মতো এক মানবতাবাদীর কথা। তার কথা ধরেই বলতে চাচ্ছি-মিয়ানমার সরকারকে বৌদ্ধ ধর্মের ধারকবাহক মনে না করে তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবেই

বিবেচনা করুন। সন্ত্রাসীদের ধর্ম কিংবা জাত নেই।

একটু ভাবেন তো আপনার আমার বোন তনু কিংবা রূপাকে যারা ধর্ষণ করেছে তারা কোন ধর্মের? তখনতো একটি বারের জন্যও আপনি ধর্ষকের ধর্মীয় পরিচয়টা সামনে আনেন না। আমিও আনতে চাই না। আপনি-আমি সবাই জানি তাদের কোন ধর্ম নেই।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানোর পর আমারই কিছু ফেসবুক বন্ধু আহ্বান জানিয়েছে-মিয়ানমার সরকারকে দমাতে আমাদের দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের (যারা কিনা বাংলাদেশের নাগরিক) ওপরও একই কায়দায় নির্যাতন চালানো হোক। তাদের অপরাধ তারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী।

ভাই আপনি নিজেকে কেন ওইসব পশুর কাঁতারে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। এতই যদি আপনার সহানুভূতি উপচে পড়ে তাহলে চলে যান সীমান্তে। ওখানে রোহিঙ্গাদের অনেক সাহায্য প্রয়োজন। ফেসবুকে বিপ্লব না করে মানুষের পাশে দাঁড়ান।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.