হামলা ভাংচুর সরকার দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের বাঁধার মুখে বিএনপির নেতার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় বন্ধ

0
(0)

গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
সরকার দলীয় নেতা, কর্মী ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বাঁধার মুখে রোববার দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির নেতা, কর্মী সমর্থকসহ বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র ও নানা শ্রেনী পেশার লোকজনের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠান করতে পারলেন না বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য এম, জহির উদ্দিন স্বপন। এ সময় সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপি ও যুবদলের ৫জন নেতা, কর্মী আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা বিএনপির দুই নেতাকে বহনকারী একটি মটরসাইকেল ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপর দিকে পুলিশ নিরাপত্বার নামে ওই বাড়িতে প্রবেশের পথে ৪টি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। অনেককে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। অপরদিকে এিনপির একাধীক নেতা এলাকায় ঈদের সূভেচ্ছা বিনিময় করলেও তাদের উপর কোন চাপ ছিলনা এটিও রহস্যজনক বলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বরিশাল-১ (গৌরনদী-অগৈলঝাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম, জহির উদ্দিন স্বপন প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ঈদুল আয্হা উদযাপনের জন্য শুক্রবার দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি গৌরনদী উপজেলার সরিকল গ্রামে আসেন।
সংস্কারের অভিযোগে দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকান্ড থেকে দুরে থাকার পর এম, জহির উদ্দিন স্বপন সম্প্রতি দলে ফিরে আসার পর গতকাল রোববারই প্রথম তিনি দুই উপজেলার সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন।
ঈদ উদযাপনের জন্য স্বপনের বাড়িতে ফেরার খবরে দুই উপজেলার হাজার হাজার বিএনপির নেতা, কর্মী, সমর্থকসহ তার ভক্ত বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র ও নানা শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিরা উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। তারা শুক্রবার বিকেল থেকে স্বতস্ফুর্ত ভাবে তার বাড়িতে ভীড় করতে থাকেন। তাদের আনন্দ উচ্ছাস দেখে এম, জহির উদ্দিন স্বপন অভিভূত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি সকলের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেন।
এম, জহির উদ্দিন স্বপনের ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে ঈদুল আয্হার দিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সঙ্গীয় ফোর্সসহ তার বাড়িতে হাজির হন গৌরনদী মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এস,আই মোঃ ছগির হোসেন। তিনি প্রায় আধাঘন্টা সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি এম, জহির উদ্দিন স্বপনকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামীরা আপনার বাড়িতে আসা যাওয়া করছে। আমরা চাই আপনি তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না এবং মামলার আসামীদের গ্রেফতারে আপনি পুলিশকে সর্বোতভাবে সহযোগীতা করবেন। সাবেক এমপিকে এভাবে সতর্ক করে তিনি থানায় ফিরে যান।
একই দিন রাত ৯টা ৪৭ মিনিটে এম, জহির উদ্দিন স্বপনের মোবাইল ফোনে ফোন করেন গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম। তিনি সাবেক এমপিকে বলেন পরদিন রোববার দুপুরে তার দলীয় নেতা, কর্মী সমর্থকসহ বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র ও নানা শ্রেনী পেশার লোকজনের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠানটি বন্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠানটি করা যাবেনা। করলেও শুধুমাত্র আতœীয় স্বজনদেরকে নিয়ে সীমিত আকারে অনুষ্ঠান করতে হবে। তাদের কাছে খবর আছে দলীয় নেতা, কর্মীদের নিয়ে ওই বাড়িতে অনুষ্ঠান করা হলে সরকারী দল সেখানে হামলা করবে। তাদের কথা অমান্য করে যদি সেখানে অনুষ্ঠান করা হয়, আর সেখানে যদি হামলা হয় তার দ্বায় দ্বায়িত্ব পুলিশ নিবেনা। এর একটু পরে রাত ৯টা ৫৩ মিনিটের সময় তাকে ফোন করেন গৌরনদী মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এস,আই মোঃ ছগির হোসেন। তিনিও একই ভাবে সাবেক এমপিকে তার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদেরকে ঘটনাটি জানিয়ে ওইদিন গভীর রাতে এম, জহির উদ্দিস স্বপন তার অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধ করে দেন।
এর পরও গতকাল রোববার সকাল ১০টার পর থেকে বিএনপির নেতা, কর্মী সমর্থকসহ বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র ও নানা শ্রেনী পেশার লোকজন ও স্বপন ভক্তরা দলে দলে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তাদেরকে ঠেকাতে তখন লাঠিশোটাসহ মটরসাইকেলের মহড়া নিয়ে মাঠে নামেন সরকারী দল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তারা এম, জহির উদ্দিন স্বপনের গ্রামের বাড়ির প্রতিটি সড়কের মুখে মুখে অবস্থান নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীসহ স্বপন ভক্তদের ওপর হামলা চালায়। হামলায়। সোহেল মোল্লা, নজরুল ইসলাম, আবুল হোসেন লাল্টু, আফজাল হোসেন সিকদার, শাহ আলম ফকির নামের বিএনপি ও যুবদলের ৫জন নেতা, কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি নেতা আবুল হোসেন লাল্টু ও আফজাল হোসেন সিকদারকে বহনকারী একটি মটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি এম, জহির উদ্দিন স্বপনের ফুপাতো ভাই মোঃ জামিল হোসেন পানু অভিযোগ করেন, আমি আমার মটরসাইকেল যোগে মামা বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাকে মটরসাইকেল নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। পরে আমি মটরসাইকেল অন্য যায়গায় রেখে পায়ে হেটে বিকল্প পথ দিয়ে মামা বাড়িতে এসেছি।
বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি এম, জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমার জনপ্রীয়তায় ইশ্বার্ন্বিত হয়ে একটি মহল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে তাদেরকে ব্যাবহার করেছে। তাদের ইশারায় পুলিশ আমাকে আমার দলীয় নেতা-কমীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পরও গতকাল দিনভর আমার সাথে দেখা করতে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। তারা লাঠিশোটাসহ মটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আমার সাথে দেখা করতে রওনা হওয়া বিএনপি নেতা-কর্মী সমর্থকসহ বিভিন্ন ধর্ম, গোত্র ও নানা শ্রেনী পেশার লোকজনের সমাগম ঠেকিয়েছে। তার পরও পুলিশ এবং সরকারী দলের নেতা, কর্মীদের চোখ এরিয়ে গতকাল দিনভর বিভিন্ন স্থান থেকে এক হাজারের অধিক বিএনপির নেতা-কর্মী আমার সাথে দেখা করেছে।
অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলার অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সাবেক এমপি এম, জহির উদ্দিন স্বপন স্যারের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলিনি। গোপণ সূত্রের খবর ছিল ওই বাড়িতে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামীসহ সন্ত্রাসীরা আনাগোনা করছে। আনাগোনাকারী সন্ত্রাসীদের প্রতিপক্ষরা তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। ফলে হামলার আশঙ্কায় সাবেক এমপির নিরাপত্ত্বার জন্য তার বাড়ির সামনের সড়কে ও সরিকল এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.