রোগ একটা সার্বজনীন অভিজ্ঞতা। মানবজাতির ইতিহাস যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা গেছে সর্বকালের ইতিহাসে মানুষের রোগের অভিজ্ঞতা আছে। মানুষের ইতিহাস যতদিনের রোগের ইতিহাসও তার সমসাময়িক। সেই সাথে এও দেখা গেছে সর্বত্রই মানুষ এই রোগ মোকাবিলার নানা পন্থা অবলম্বন করেছেন। রোগ নিরাময়ের এই ব্যাবস্থায় দুইটা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। একটা হচ্ছে স্থানিয় প্রকৃতির নানা উপাদানের উপর এবং দ্বিতীয়ত রোগমুক্তির পুরো প্রক্রিয়াটি প্রভাবিত হয়েছে স্থানিয় ধার্মিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল দিয়ে। ফলে চিকিৎসা ব্যাপারটা হয়ে উঠেছে জাগতিক এবং আধ্যাতিক এই দুইয়ের সমন্বিত কর্মকান্ড। একটা ধর্মীয় ও সংকৃতিক কাঠামোর ভিতর দিয়েই মানব সভ্যতার বিভিন্ন অঞ্চলের রোগ নির্নয়ের পদ্ধতি, চিকিৎসার নানা স্বতন্ত্র গড়ে উঠে। এই ধারাগুলোর অন্যতম হছে আয়ুর্বেদ বা ভেষজ । খাদ্যের জন্য মানুষ উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। এই উদ্ভিদের মধ্যে আল্লাহ আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঔষধও দিয়ে দিয়েছেন। ভেষজ ওষুধ এখনো বিভিন্ন দেশে মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অগণিত মানুষ ভেষজ ওষুধের বদৌলতে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। পৃথিবীর সার্ভিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ ভেষজ ওষুধের ওপর নির্ভর করে তাদের রোগব্যাধির চিকিৎসা করে থাকেন। অর্থাৎ ভেষজ ওষুধ না থাকলে এই বিরাট জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতো। ভেষজ ওষুধ সম্পর্কিত এই সত্যটি অনুধাবন করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষে ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করার জন্য জোর সুপারিশ করেছে। ভেষজ ওষুধের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই গুরুত্বারোপ নিঃসন্দেহে এর কার্যকারিতার নিশ্চিত সাৰ্য বহন করে এবং ভেষজ ওষুধ যে যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে ভেষজ ওষুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিভিন্ন ঔষধি উদ্ভিদ উৎস থেকে সংগ্রহ বা আহরণ করা হয়। সাধারণত বনে-জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকা ঔষধি উদ্ভিদ থেকেই ভেষজ ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে জমিতে চাষকৃত উৎস থেকে ঔষধি উদ্ভিদ সংগ্রহ বাঞ্ছনীয়, নাহলে একসময় প্রকৃতি ভেষজ উদ্ভিদশূন্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া চাষকৃত ভেষজ উদ্ভিদের গুণগতমান অনেক উন্নত হয়ে থাকে। ভেষজ উদ্ভিদ যথেষ্ট মাত্রায় পরিবেশবান্ধব। প্রায় সব ভেষজ উদ্ভিদেরই পরিবেশ বিশুদ্ধকরণের ৰমতা রয়েছে। ভেষজ উদ্ভিদ বাতাসে বিরাজমান বিভিন্ন রোগ জীবাণুকে প্রাকৃতিকভাবে বিনষ্ট করতে সক্ষম। তাই অধিকহারে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ আমাদের ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়া পরিবেশ বিশুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
• অধিকাংশ ভেষজ উদ্ভিদ চাষে কৃত্রিম কীটনাশক ও সার প্রয়োজন হয় না। অধিকাংশ ভেষজ উদ্ভিদ থেকে সারা বছর ধরে অথবা খুব অল্প সময়ে ফল বা প্রয়োজনীয় অংশ সংগ্রহ করা যায়। এ কারণে তুলনামূলকভাবে ভেষজ উদ্ভিদ চাষে বিনিয়োগ অনেক কম কিন্তু লাভ বেশি।—- চলবে