নারী-পুরুষ বৈষম্য ও নারীবাদ

0
(0)

মোঃ আহছান উল্লাহ
রুখতে হবে অপশক্তি ধরতে হবে হাল,লোক চক্ষুর আড়ালে এখনও রয়েছে অন্ধকার…!
প্রীয় পাঠক, আমি নামকরা কোন লেখক নই ,আসলে কূপের ব্যাঙের মতো একজন মানুষ। জলে ডোবার মতো আতঙ্কের মাঝে ভাবনার ব্যাপকতায় আমাকে গ্রাস করল, কেন আমাকে হতচ্ছারা পৃথিবীতে টেনে আনা হলো? আমার আতঙ্কের কারন জীবন এখানে ভয়ঙ্কর কঠিন, মানুষ এখানে মানুষকে পন্য করে জীবিকা করে,ব্যবহার করে এবং মানুষ হিসেবেই একজন নারী অথবা একজন পুরুষের আনন্দ এবং বেদনা এসব সত্যেও শেষ পর্যন্ত জীবনই জয়ী হয় কারন জীবন কখনো মরে না। এই কালোত্তীর্ন অনুভব আমাকে অনিবার্য দঃসাধ্য কাজে ঝাপিয়ে পড়তে প্ররোচিত করে।
একজন নারী যখন তোমার সাথে শারীরিক ভাবে সম্পর্কিত হয়,তোমরা তাকে পতিতা বল। এর সমন্তরালে পুরুষদের জন্য কোন বিশেষন অভিধানে নেই। এর কল্পনাও অনর্থক,হাজার হাজার বছর ধরে পুরুষতান্ত্রীক সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে এ সব শব্দাবলী ব্যবহার হচ্ছে চলমান গতিতে। পুরুষদের আদেশ,পুরুষদের অহঙ্কার দিয়ে নারীদের বিদ্ব করেছে। হাজার হাজার বছর ধরে পুরুষরা নারীদের শরীর ব্যবহার করছে এবং বঞ্চিত করেছে নারীদের। হাজার হাজার বছর নারীদের নিঃশদ্ব থাকতে বাধ্য করেছে। তাদের ওপর একটি মাত্র কাজ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটি হচ্ছে মাতৃত্ব।
কী দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে দিন। নারী পুরুষের সমানাধিকার আজ আর শুধু নারীবাদী মেয়েদের ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ নেই। পৃথিবীর সকল সমাজমনষ্ক,শিক্ষিত সচেতন আধুনিক যুক্তিবাদী মানুষের,নারী-পুরুষ উভয়ের অভিমত একই পথে চলছে আমাদের দেশেও এটাই সত্য। এর পরেও বৈষম্য,অবলা,নরীবাদ নিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে অন্ধকার।
সমাজে যেমন অচেতন কিছু অন্ধ নারী-পুরুষ উভয়ে মিলে সমাজে পুরুষতান্ত্রিক শোষন ব্যবস্থা আজও চালু রেখেছেন,তেমনি একদিন সমাজ সচেতন সুস্থ মনের নারী-পুরুষ উভয়ে মিলেই সেই অন্যায়ের প্রতিকারও করবেন। এটাও সত্য,যৌথ পন্তা ভিন্ন সমাজে নারী-পুরুষ বৈষম্য দুর হবে না। এখনও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যায় মুসলিম পরিবারে উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার সম্পদ ছেলে যা পায় তার অর্ধেক পায় মেয়ে। আবার স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পায় সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ। হিন্দু ধর্মের পরিবারগুলোতে পিতার কোন সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে মেয়ে পায় না, এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয় স্ত্রী। এটা কি নারী পুরুষের বৈষম্য নয় ? অথচ আমরা বুলি আওরাই নারী পুরুষের সমান অধিকারের। শ্রমবাজারে গেলেও আমরা দেখি নারীদের বেলায় বৈষম্য। কিন্তু কেন ? এটাত সামান্য পারিবারিক ব্যাপার। সামান্য ব্যাপারে যদি নারী পুরুষ বৈষম্য থেকে যায় তাহলে নারী মুক্তি হয় কিভাবে ? একটি কথা না বললেই নয় অনেকে নারীবাদ কথাটা নিয়ে কতিপয় লোক কুটুক্তি করেন। আসলে আপনারা অজ্ঞ। নারীবাদ কী আপনারা হয়তো এর সারমর্ম বা ভাবসম্প্রসারন বোঝেন না। আপনাদের কুটুক্তিতে মনে হয়,নারীবাদ সংকীর্নতার অন্য নাম। আসলে এটা ঠিক নয়। নারীবাদ পুরুষকে বাদ দেওয়া নয়। পুরুষ বিরোধীতাও নয়। নারীবাদ চায় নারী পুরুষের বৈষম্য দুর করতে। চায় সমান অধিকার। এটুকুই। অথচ এতেই পাহার সমান বাধা।
একজন নারী, পরিবারে তার প্রিয়জনদের জড়িয়েই জীবন কাটায়,তাদের (পুরুুষ) বাদ দিয়ে নয়। একজন নারীর পিতা আছেন,প্রেমিক আছেন,স্বামী আছেন,আছে সন্তানও। প্রাচিনকাল থেকে বাংলার নারীদের কথা আসলেই একটা শব্দ ব্যবহার হয় (বাংলার অবলা নারী) । এখানেও ছোট করে দেখা হচ্ছে নারীদের। কেননা অবলা অর্থ অবজ্ঞা,অসহায় ? অপ্রাসাঙ্গিক একটা কথা বলতে হয় সারা বিশ্বে আজ নারীদের পন্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা না হলে এক টাকার একটি শেম্পুর উপর একজন নারীর ছবি দিয়ে দেয়া হচ্ছে এটা কোন চোখে দেখব জানিনা !
প্রিয় পাঠক,একজন নারী চাইছে তার প্রিয়োজনরা তাকে পায়ের তলায় দাবিয়ে রাখবে না,এক সঙ্গে পাশে নিয়ে চলবে। নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করে পুরুষের নয়। পুরুষতান্ত্রিক শাসনের অকল্যাণের যে অসংখ্য অনুচিত সামাজিক নিয়মের বলি হতে হয়েছে নারীজাতিকে,নারীবাদ চায় শুধু সে অনিয়মগুলোর পরিবর্তন। সে অন্যায়গুলোর প্রতিকার।
কেননা পৃথিবীকে চিনে,নিজের চোখে দেখে,নিজের পায়ে পথ চলার উদ্যমে এখন এগিয়ে এসেছে নারী। এখন নারী শুধু ঘরের চার দেয়ালের বন্দি গৃহসামগ্রীর মতো নয়। এক সময় সুচি শিল্পকেই নারীর যোগ্যতা বিচারের সর্বোচ্চ সীমা বলে ধরা হতো। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সে সময়ের এ কথার জবাব নারীরা অনলবর্ষী বক্তিতায় দেননি,দিয়েছেন নিজেদের কাজ দিয়ে। আজ এ দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিটিও একজন নারী। মেধা, চিন্তা ও চেতনায় যে নারী পিছিয়ে নেই তার প্রমান এ যুগে অন্তত খুজে দেখতে হবে না। চোখ খুললেই সামনে পড়বে। এত কিছুর পরও নারীর প্রতি বৈষম্য। আবার কতিপয় ব্যক্তি খুজে বের করছে নারীর দোষত্র“টি। জন্মজন্মান্তরে আমাদের মা,নানী,দাদী,খালা,চাচীরা যেভাবে কষ্ট পেয়েছেন আমরা তার চেয়ে বেশি স্বাধীনতার মধ্যে বড় হয়েছি। কিন্তু আমরা চাই আমাদের কন্যা ও তাদের কন্যাদের মুক্তি। তারা যেন আরও সর্বাঙ্গীন সুসামজ্ঞ্স্য হয়। যে বাধাগুলো আজও আমাদের জিবে,আমাদের কলমে শিকল জড়িয়ে রেখেছে ওদের বেলায় তা যেন খসে যায়। নারীবাদ অথবা নারীর প্রতি বৈষম্য দুর করা মানে কিন্তু এই নয় যে,পুরুষতন্ত্রের যা কিছু অনিয়ম,অসাম্য,অত্যাচার যেমন ছিল তেমনই চলতে থাকবে,কেবল যায়গা বদল করে নারীরা চাবুক হাতে উপরে উঠে আসবে পুরুষকে পদদলিত করে। প্রতিরোধ নয়, প্রতিকারই নারীবাদের উদ্দেশ্য। প্রকৃত নারীবাদ পুরুষের ন্যায্য অধিকার হরণ করে না। তারা যুগ যুগব্যাপী অনধিকার চর্চার দাঁড়ি টানতে চায়। চায় পুরুষ তন্ত্রের বদলে মানবতন্ত্র,নারীতন্ত্র নয়।
আমাদের দেশের নারীবাদের পথ তো পশ্চিমের পথ হতে পারে না। কেননা আমাদের বাঁচার মন্ত্রটাই আলাদা। রাস্তার মোড়ে অন্তর্বাসের অগ্নুৎসব করে আমাদের নারীমুক্তি স্লোগান উচ্চারন সম্ভব নয়,তার প্রয়োজনও নেই। সেহেতু আমাদের গুরত্ব দিয়ে বোঝা উচিত নারীবাদ মানে নারীতন্ত্র নয়,পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধও নয়,নারীবাদ চায় মানবতন্ত্র। নারীবাদ চায় সাম্য স্বাধীকার। আমাদের দেশে নারী-পুরুষ বৈষম্যের ক্ষেত্রেও নারীবাদ শব্দটির সঙ্গে এসে মিশেছে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক গন্ধ-বর্ন। আমরা চাই না মার্কিনি,ফরাসি নারীবাদ। আমরা আমাদের নিজস্ব নারীবাদ চাই। হ্যাঁ,বাংলাদেশী নারীবাদ। আমরা নারী-পুরুষ উভয়ের মনেই বিশ্বাসের মন্ত্র,সমতার মন্ত্র ছোয়াতে পারবেন। নারী-পুরুষের বৈষম্য দুর করে সমান অধিকারের প্রয়োজনীতা বুঝিঁয়ে দিতে পাড়বেন বিনা অভিযোগে,বিনা কলহে হাসি মূখে আলোচনার মাধ্যমে। ছেদহীন অভিযোগ কোনও মহৎক্রিয়ার অবলম্ভন নয়,চাই সদর্থক ভাব সম্মিলন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.