কৃষি পৃথিবির একক শিল্প

0
(0)

আহছান উল্লাহ
একটি কৃষি প্রধান দেশের শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তাহলে সে দেশের কৃষি ও কৃষক জাতির হৃদপিন্ড। পরিবর্তিত পৃথিবীর খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের আগামীর কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোকপাত করার আগে একটি জোর দাবি বাংলাদেশের কৃষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে কৃষক সন্তানের কোঠা পদ্ধতি চালু করতে হবে। একজন কঙ্কালসার মানুষ মানেই একজন কৃষক যে চিত্রটি আমরা দেখে আসছি তার পরিবর্তন করে শুধু কৃষি ক্ষেত্রকেই আধুনিকায়ন করলে চলবে না আমাদের কৃষককেও আধুনিক করতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক বেশী বেশী কৃষি শিল্প গড়ে তুলতে হবে। ব্যাংক সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জবাবদিহিতার আওতায় এনে কৃষি ঋণ বিতরণে অতি সহজ পদ্ধতি চালু করতে হবে। সরকারী বেসরকারী কৃষির উপর সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কড়া জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে কৃষি বিষয়কে ঐচ্ছিক বিষয় না করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনার উপর জুরুরী গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। কেননা যে, কোন কৃষি ব্যবস্থায় ভূমি ও পানির সমস্যা সমাধান সবার আগে করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে যে অনুযায়ী জমি কিন্তু বাড়ছে না বরং জমি কমছে। শিল্প কলকারখানার অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মানের কারণে আবাদি জমির পরিমান কমে আসছে। সে জন্য অবকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পিত পদ্দতি চালু করতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে পানির সমস্যার সমাধান করতে হবে। এসব বিষয়ে ভিক্ষুকের রান্না ঘর থেকে রাজ দরবার পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত কৃষিজ উৎপাদনে আগাম ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের পরিত্যাক্ত জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে সুষম সার ব্যবহার ও বিষাক্ত কীটনাশকের ছোবল থেকে প্রকৃতি,মাটি ও পরিবেশকে রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে পাশপাশি কৃষির উপখাতগুলো যেমন মৎস্য,পশু সম্পদ,ভেষজ সম্পদ গুলোর প্রতি একই গুরত্ব দিতে হবে। উপরেলি¬খিত বিষয়গুলোর উপর গবেষনামূলক দৃষ্টি দিতে হবে।
বিগত দিনগুলোতে কৃষি উন্নয়নে দেশ কি করেছে, যে প¬্যান এবং প্রোগ্রাম ধরে কাজ করা হয়েছে, তা কতটুকু সফল হয়েছে কতটুকু ব্যর্থ হয়েছে; ব্যর্থ হলে, কেন ব্যর্থ হয়েছে এবং তাতে কত টাকা লাভ বা লোকসান হয়েছে ইত্যাদি খুটিনাটি হিসাব নিকাশ করে, ভবিষ্যৎ প¬্যান এবং প্রোগ্রাম নির্ধারণ করা উচিত। সরকারী প্রচার বিভাগ সার্থকতার যে হিসাব দিয়ে থাকেন, তা বাস্তব ক্ষেত্রে অচল । ‘‘অধিক খাদ্য ফলাও আন্দোলনের’’ ফলে, সরকারী প্রচার মতে, আমাদের দেশে যে পরিমাণ অধিক খাদ্য ফলেছে, তাতে দেশে খাদ্যাভাব থাকারতো কথাই উঠে না বরং দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু খাদ্য বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, বৎসরের পর বৎসর, তাদের অধিক খাদ্য বিদেশ থেকে আমাদানী করতে হয়েছে। যাহোক, এটা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়। বাস্তব পরিবল্পনা প্রয়নে সরকারী প্রচারের উপর কতটুকু নির্ভর করা উচিত, তাই মাত্র এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আমাদের দেশ যেমন ইউরোপ বা আমেরিকা নয়, তেমনি জাপানও নয়। আর আমাদের দেশের মাটি, আবহাওয়া এবং মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানের মত একরূপ নয়। সুতরাং ঐ সমস্ত দেশের কৃষি পদ্ধতি, বাস্তবক্ষেত্রে আমাদের দেশে কখনও হুবহু একই নিয়মে চলতে পারে না। প্রমাণের জন্য বেশী দূর যেতে হয় না। কৃষি বিভাগের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বেশীর ভাগই ঐ সমস্ত দেশের কৃষিবিজ্ঞানে পি-এইচডি এবং মাষ্টার ডিগ্রিধারী বা অন্যভাবে ট্রেনিং প্রাপ্ত; কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের কৃষি উন্নয়ন কতটুকু অগ্রসর হয়েছে, তা কাহারও অজানা নেই।
বিদ্যা, বুদ্ধি ও যোগ্যতা বিচার করে, যাদেরকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠান হলো, তারা ঐ সমস্ত দেখে ২।৩ বৎসর কোন কোন ক্ষেত্রে ৪।৫ বৎসর শিক্ষা লাভ করে, ‘বিশারদ’ (ঊীঢ়বৎঃ) হয়ে দেশে ফিরে কার্যক্ষেত্রে তাঁদের জ্ঞান-গরিমা, বিদ্যা ও বুদ্ধিমত্তার কতটুকু পরিচয় দিতে পেরেছেন ? তাঁরা বাস্তবে কতটুকু সফলতা অর্জন করেছেন তা প্রশ্ন করা কি অন্যায় হবে ? তাঁদের ব্যর্থতার কারণ কি ? খোলা মন নিয়ে বিশে¬ষণ করে দেখা যাক প্রকৃত গলদ কোথায় এবং প্রতিকার কি ? এর কারণ অনেক হতে পারে, যেমন- কেহ যদি বলেন যে, উচ্চ শিক্ষিত বুদ্ধিমান এবং বিশারদ হলেও তারা হয় অলস, অকর্মৃণ্য, ফাঁকিবাজ, নয় বোকা। তাই কোন পরিকল্পনাই সফল হচ্ছে না। অল্প দিন আগে যাদের যোগ্যতম বলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেপাঠানো হলো, বিদেশে থেকে ‘বিশারদ’ হয়ে ফিরে আসার পর, তাদের বিরুদ্ধে উপরোক্ত অপবাদ একটিও প্রযোজ্য হতে পারে না। যদিও হয় তা হলে এ সব অলস, অকর্মণ্য ও ফাঁকিবাজ দ্বারা ‘বোকার স্বর্গ সাজিয়ে রেখে লাভ কি ? কারো কারোর মতে বিশেষজ্ঞদের অনেককেই যাঁর যথা স্থান, তথায় সুযোগ দিয়ে তাঁর বিশেষ জ্ঞানের সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে না। যদি রসায়ন বিশারদকে কৃষি খামার উন্নয়নে নিযুক্ত করা হয়, তবে বিশারদকে দোষ দিয়ে লাভ কি ? কেহ কেহ বলেন, যথা সময় ব্যয় বরাদ্দের অভাবই সমস্ত পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ। কৃষিকার্য সবই মওসুমের উপর নির্ভরশীল। এ্মতবস্থায় আউশ ধান ও পাটের কোন পরিকল্পনা মওসুম চলে যাওয়ার পর শ্রাবণ-ভাদ্র, আমন ধানের পরিকল্পনা আশ্বিন কার্তিক এবং বোরো ধাান, আলু বা শীতকালীন শাক সব্জির কোন পরিকল্পনা শীতকালের শেষে মঞ্জুরীপ্রাপ্ত হলে, এ সমস্ত পরিকল্পনা সাফল্যমন্ডিত করা কোন বিশারদের পক্ষেই সম্ভব নয়। অনুরূপ ব্যর্থতার জন্য একমাত্র দায়ী ‘টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টর উপর ননটেকনিক্যাল কন্ট্রোল।’ এ অবস্থার পরিবর্তন যত শিগগির হবে ততই মঙ্গল। কাহারও কাহারও মতে আমাদের দেশের মাটি, আবাহওয়া এবং মানুষ, ঐ সমস্ত দেশের মত নয় বলে এসব বিশারদের বিশেষ জ্ঞান এদেশে প্রযোজ্য নয়। ফলে অনেক বিশারদই ব্যর্থ হন। তাঁরা কোন সমস্যারই বাস্তব সমাধান করে উঠতে পারেন না। সুতরাং তাঁদের উপদেশ দেশবসী কখনও গ্রহণ করে না।
আমি মনে করি, উপরোক্ত সব কয়টি কারণই কখনও একক ভাবে, কখনও সমষ্টিগতভাবে, কৃষি উন্নয়নে ব্যর্থতার জন্য কিছু না কিছু দায়ী। এমতাবস্থায় চিরাচরিত পন্থা অনুসরণ না করে, এখন আমাদের মত, পথ এবং কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করা অবশ্য প্রয়োজন।
আমাদের রয়েছে খাদ্য সমস্যা এ সমস্যার কথা ভাবলে দুটি দিক দেখা যায়। প্রথমত খাদ্যের পরিমাণগত সমস্যা, খাদ্যের পুষ্টিগত সমস্যা। খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য সরকারের সংশি¬ষ্ট কৃষি দপ্তর গবেষণা ও পরিকল্পনা করে চলছে। তাছাড়া খাদ্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধির দিকেও নজর দেয়া হচেছ। এর ক্ষেত্র আরও বহুগুন বাড়িয়ে দিতে হবে। ভিক্ষুকের রান্না ঘর থেকে রাজ দরবার পর্যন্ত কৃষকের বন্ধন করতে হবে বন্ধু সুলভ। পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ তারা আমাদের নিকট অনেক মূল্যবান। এমনকি গবেষকদের চেয়েও বেশী, কেননা গবেষকরা যা দিতে পারেনা একজন কৃষক তা দিতে সক্ষম হয়েছে। যদিও শ্রেষ্ঠ কৃষিপন্য উৎপাদনকারীকে সরকারীভাবে পুরস্কৃত করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এগুলো আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন উদ্ভাবন বা বিশেষ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করে প্রত্যেক গ্রামে শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারী দ্বারা তার আশপাশের অন্তত ১০ জন কৃষককে হাতে কলমে বাস্তব শিক্ষা দিয়ে শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারী হিসেবে তৈরি করতে হবে। আবার প্রথম বৎসরে হাতে কলমে বাস্তব শিক্ষাপ্রাপ্ত ১০ জনের দ্বারা পরবর্তী বৎসরে আরও ১০ জনকে একই নিয়মে হাতে কলমে বাস্তব শিক্ষা দিয়ে প্রত্যেকের জমিতে শ্রেষ্ঠ ফসল উৎপাদনে সাহায্য করার ব্যবস্থা করা। এভাবে প্রত্যেক চাষী তার প্রতিবেশী শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারী বলে প্রমানিত নিজেদেরই মত একজন চাষীর নিকট শিক্ষাপ্রাপ্ত হবে বলে এ শিক্ষা খুবই ফলপ্রসু হতে বাধ্য। উপরোক্তভাবে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েকবছর চালাতে পারলে দেশের সর্বত্রই শ্রেষ্ঠ ফসল ফলানো সম্ভব হবে। ধান, পাট ও অন্যান্য সব ফসলের উন্নয়ন একই নিয়মে এবং একই সময়ে করা যেতে পরে। তাহলে ৩-৫ বছরের মধ্যে আমাদের দেশে কোন কৃষকই উন্নত কৃষি ব্যবস্থায় অজ্ঞ থাকবে না এবং আমাদের দেশও কৃষি ব্যবস্থাপনায় একটি মডেল হতে পারে।
আমাদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। যেমন- ধান, গম, পাট ইত্যাদিতে স্বয়সম্বর হলে আমাদের কৃষির সব সমস্যা মিটে যাবে এ ধারণাও ভুল। ধান, গম, পাট এসবের পাশাপাশি ডাল তেল ফল শাক সবজি জাতীয় কৃষির উপর একই গুরুত্ব প্রদান করে এগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে হবে। মৎস্য ও পশু সম্পদের দিকে একই গরুত্ব দিতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ্একটি সম্ভাবনাময় দেশ কোন সন্দেহ নেই। দরকার শুধু আন্তরিকতা ও সম্মিলীত প্রচেষ্টা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাক্তি কেন্দ্রীক পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে দিতে হবে। কৃষকদেরও পরনির্ভশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোন দানই ভিক্ষার শামীল।
সম্ভাবনাময় আগামীর কৃষি ব্যাস্থাপনার জন্য দেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে কোন মৌসুমে কোন এলাকায় কোন কৃষি দ্রব্য বেশী উৎপাদন করা যায় এবং সেখানে সে রকম কৃষি শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন, ধান, গম সহ বিভিন্ন ফসল দেশের সব জায়গাতেই কম বেশী জন্মে এ গুলোর পাশাপাশি উৎপাদন সমন্বয় করে অনান্য কৃষিপণ্যর উৎপাদন বাড়াতে হবে।অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয় সম্ভাবনাময় কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের আবাদি জমি দ্রুত আগ্রাসীদের গ্রাসে পরিনত হচ্ছে। খাদ্য সংকট অথবা খাদ্যভাবের আশংকা থেকে রক্ষা পেতে কৃষির বিকল্প নেই। এর জন্য কৃষি আবাদী জমির উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের কৃষি জমি মৌলিক ভাবে উৎকৃষ্টমানের হলেও অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়নের কারণে আবাদী জমির পরিমান কমে আসছে। এ ক্ষেত্রে দেশের কৃষিজ জমি রক্ষা করতে প্রচলিত ভূমি আইনের অধিকতর সময়োপযোগী করে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার কর্মসূচিভুক্ত করণের জন্য জাতীয় বিশেজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দূর্যোগের দেশ তাই আবহাওয়া, মাটির গুনাগুন তাপমাত্রা সহ ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরনের কথা বিবেচনা করে অঞ্চল ভিক্তিক কোন ফসল চাষ করতে হবে তা যেমন নির্নয় করা দরকার আবার ভাল ফসল উৎপাদন করতে ভাল বীজের উৎপাদন ও সরবারাহ করা দরকার। শহর গ্রামের সমস্ত ফাঁকা জমি এমনকি অফিস আদালত সহ প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনাতে চাষবাদ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আমাদের কৃষি ও কৃষিজ উপখাত গুলো ক্রমসংকুচিত হয়ে পরেছে। অধিক জনসংখ্যার জন্য আজ কৃষি জমি সংকুচিত হয়ে আসছে। বন ও চাষের জন্য উজার হচ্ছে বেপরোয়া রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশকের প্রভাবে জীববৈচিত্র নিঃশেষিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব আধুনিক বিশ্ব। এক কথায় বলা যায় বিজ্ঞানের যুগ, সেমতে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন। বিজ্ঞান বহু অজানাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক একজন অনুসদ্ধিৎসুর এক একটি আবিষ্কারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে সকলের জন্য।
মানুষের মেধার ফসল সকল মানুষ ভাগ করে নেবে এটাইতো নিয়ম হওয়া উচিত। বিদ্যুত, বেতার তরঙ্গে বার্তা প্রেরন, আকাশ পথে চলাচলের যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলোর সুফল, যে কোন জাতি যে কোন দেশই পেতে পারে। আর এ সবকিছুরই কৃতিত্ব বিজ্ঞানীদের। বহু যুগ যুগান্তর ধরে যে চিত্রটি ভেসে আসে তাহলো এক নিঃসঙ্গ সাধকের মত আহার নিদ্রা ব্যক্তিগত সুখ সাচ্ছন্দ্য ভুলে যারা মানুষের উপকারের জন্য জ্ঞান সাধনা করে ছিলেন। এখন অবশ্য সে ভাবে বিজ্ঞান সাধনা করা হয় না। এখন সব প্রতিষ্টান অন্তর্গত। বিজ্ঞানের জয়জয়কার হলেও আমাদের দেশে ভেষজ সম্পদ নিয়ে এখনও তেমন কোন প্রতিষ্ঠান বা গবেষনাগার গড়ে উঠেনি। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যাহা ব্যক্তি নির্ভর এবং বানিজ্যিক। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান কারণ মানবদেহে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সকল ভেষজ বৃক্ষ, লতা, গুল্মর অবারিত জন্ম হয় বাংলাদেশের মাটিতে। আমাদের দেশের মানুষের প্রয়োজন শুধু এ সব গাছ-পালা, লতা-পাতা, ফুল-ফল চিনে নেওয়া এবং এর(ভেষজ) সম্পদের বানিজ্যিক উৎপাদন গড়ে তোলা পাশাপাশি আমাদের কৃষকজনকে আদি অকৃতিম প্রাকৃতিক জৈব চাষাবাদে ফিরিয়ে নিয়ে মরনমুখি রাসায়নিক প্রযুক্তিকে কৃষিজ উৎপাদন থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়া। এ কাজ খুব কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু একটি পদক্ষেপ। কেবলমাত্র উদ্বুদ্ধকরন এ ক্ষেত্রে সরকার ও এনজিও গুলোর জবাবদিহিতা মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। মোট কথা বিভিন্ন কারণে আমাদের কৃষি ক্ষেত্র প্রভাবিত হচ্ছে এজন্য পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে অঞ্চল ভিত্তিক এখনই কি করণীয় তা উপস্থাপন করে সে আলোকে পদক্ষেপ গ্রহন করা খুবই জুরুরী পরিবেশ ছাড়াও কৃষির উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি পর্যায়কে নিয়ে সমন্বিত নীতি বা কৌশল অবলম্বন করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহনে আমাদের দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে এবং কৃষির সাথে জরিত গবেষনা কেন্দ্রগুলো শহর কেন্দ্রীক না হয়ে গ্রামাঞ্চলে হওয়া দরকার কেননা কৃষি সংশি¬ষ্ট গবেষনা কেন্দ্রগুলো প্রায় সবই শহরে অবস্থিত। গ্রামাঞ্চলে এসব কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা করা হলে কৃষি ও কৃষকের বেশী উপকারে আসবে। কৃষকরা নানাবিধ সমস্যা নিয়ে সহজেই বিশেষজ্ঞদের মুখমুখি হতে পারতেন। আমাদের হয়ত অনেককিছু নেই। কিন্তু যতটুকু আছে ততটুকুই সঠিকভাবে ব্যবহার করে আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারি। সেখান থেকেই আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব। এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে কৃষক, বিজ্ঞানী, সরকারসহ সংশি¬ষ্ট সবাইকে কেননা আমাদের জমি কম জনসংখ্যা বেশী। চাহিদা অনেক এই কম জমিতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে ফসলের ভান্ডার। একই জমি দুবারের জায়গায় তিনবার চারবার ফসল ফলানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন বারাতে না পারলে খাদ্য সংকট লেগেই থাকবে। বর্তমান প্রেক্ষাপট যা বলছেতা হলো সব ধরণের কৃষি পন্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট হলো একক উৎপাদন ব্যবস্থা। কৃষক এককভাবে তার প্রয়োজন মেটাতে পারে না। এই প্রথা ভেঙ্গে যৌথ উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে অনেক বেশী সুবিধা পাওয়া যাবে। যৌথভাবে সামগ্রীক প্রয়োজন নিরুপন করে সবকিছুরই ব্যবস্থা করা যায়। ইতিপূর্বে আমাদের দেশে একটি বাড়ী একটি খামার শে¬াগান দিয়ে কৃষি আন্দোলন শুরু করা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘমেয়াদে দেশে কৃষি উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহন না করার ফলে কৃষি খাতের কাংখিত সফলতা আসছেনা। আমাদের এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কৃষক ভিন্ন ভিন্ন স্থান হতে প্রয়োজনীয় সকল ফসল উৎপাদন করে তা ভোগ করতে পারে এবং বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আবহাওয়া সহ অঞ্চল ভিত্তিক সহনশীল পরিবেশ বিবেচনা করে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এভাবে সকল কৃষি পন্য উৎপাদন করতে এলাকা বিভাজন ও চিহ্নিত করা এখন খুবই জরুরী, যাতে করে কোন উৎপাদনের অভাবে আমাদের অন্যের প্রতি নির্ভর করতে না হয়। পাশাপাশি কৃষির উপখাত হিসেবে পশু সম্পদ, মৎস্য সম্পদ ও ভেষজ সম্পদের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। কোটি কোটি মানুষের অন্ন যোগানদাতা আমাদের কৃষক। তাই সকল সমস্যার সমাধান করে কৃষককে তার কাজের যতটা স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন করা যাবে তাদের যতটা নিরাপত্তায় রাখা যাবে ততই আমাদের অর্থনীতি হবে স্বাবলম্ভী এবং গতিশীল। কৃষকদের তৈরী করে কৃষি এবং কৃষির উপখাতগুলোর উপর মহাপরিকল্পনা গ্রহন করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত পৃথিবীর খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের আগামীর কৃষি ব্যবস্থাপনা হবে একটি মডেল।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.