যুগে যুগে বাংলা ভাষা

0
(0)

-শিকদার রেজাউল করিম
ফকরা লিখিয়ে হয়ে প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্বা ও ঐতিহাসিকদের সমালোচনা করা মানে ছোট মুখে বড় কথা বলা কিন্তু প্রস্তাবিত বিষয়টিতে যদি প্রমাণিত সত্যের উপস্থিতি ঘটানো যায় তাহলে কিন্তু সাক্ষাত পুত্রের বাবাকে আনকুড়া বলা যায় না।
যাহোক বারটি দ্বীপ নিয়ে বঙ্গজনপদ সৃষ্টি হতে সত্য ত্রেতা ও দাপর যুগ চলে গিয়েছিলো এবং তাতে সময় লেগেছিল ৬৬ লক্ষ বছর। সত্য যুগেই বঙ্গজনপদ সৃষ্টি হতে শুরু হয়েছিল এবং তখনই এখানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোক আসতে শুরু করেছিল। ভিল, নাগ, নিষাদ, মাহিষ্য, হাড়ি, চন্ডাল ও বাঙ জনগোষ্ঠী ক্রমন্বয়ে, বন্য পশু পাখি শিকার, মৎস্য শিকার ও কৃষিকার্য দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতো। ক্রমন্বয়ে বাঙ জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রাধান্য পেল এবং এ জাতির নেতৃত্বে সৃষ্টি হলো বঙ্গজনপদ এবং এ ভাবেই হয়েছিলো বাঙজাতির আবির্ভাব এবং চন্ডাল জাতির চন্দ্রদ্বীপ। পরবর্তী সময়ে বাঙচন্ডালদের মিলিত সমাজ ব্যবস্থাই রাজ শক্তি রুপে বঙ্গজনপদ শাসন করে। বঙচন্ডালদের রাজ্য কখনো কোটালিপাড়া কখনো হরিকেল (শরিকল) কখনো বা মাদবপাশা এভাবে চলতেছিল।
বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা যায় যে, অনেকের ধারনা সংস্কৃত ভাষার অপভ্রংশ থেকে বাঙলা ভাষার ব্যুৎপত্বি কিন্তু বিশেষভাবে শব্দ বিশ্লেষণ করলে এ মন্তব্যের প্রামানিক কারন দেখা যায় না। যদি তাই হতো তাহলে শব্দ বিশ্লেষনে এমনটা হবে কেন? যেমনঃ তৎসম, অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশী, বিদেশী। যেহেতু দেশজ শব্দ রয়েছে যা থেকে বাঙলা ভাষার উদ্ভব। তাহলে একথা কেন মেনে নেব। এতে অনুমেয় যে, বাঙজনগোষ্ঠীর নিজস্ব শব্দ ও ভাষা ছিলো। সনাতন ধর্মগ্রন্থ’ ছিলো সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। মিশ্রিত রূপ নিয়েছিলো বাঙলা ভাষা। আর্য ব্রহ্মনদের বুঝতে অসুবিধা হয়েছিলো। তাইতো ধর্ম যাজকগণ বলে ছিলেন, “অষ্ঠাদশ পুরানানি রামস্য ভাষায়াং মানবঃ শ্রতা রৌরবং ব্রজেৎ”। অষ্ঠদশ পুরান এবং রামের চরিত বঙ্গ ভাষায় শ্রবন করলে রৌরব নরকে যেতে হবে। কিন্তু তা সত্বেও বাঙালি তার প্রানের সনাতন ধর্মকে গ্রহন করেছে; সংস্কৃত ভাষাকে বরণ করেনি। বাঙালি খ্রিস্টান যীশুর ধর্মকে গ্রহণ করেছে পালী ভাষাকে বরন করেনি। অনুরূপ বাঙালি মুসলিম নবীর ধর্মকে বরণ করেছে; আরবি ভাষাকে বরণ করেনি। যুগে যুগে বাংলাদেশ বিদেশীদের দ্বারা শাসিত হয়েছে তা সত্য কিন্তু শাসন কর্তাগণ বাঙালিত্ব বরণ করে বাঙলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। শাহ্-ই বাঙাল হোসেন শাহ্ বাঙলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সম্রাট আকবর বাঙলা সাল চালু করেছেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনীকার প্রথম গদ্যে স্বার্থকভাবে নির্ভুল বাঙলা ভাষায় লিখতে সক্ষম হয়েছেন। লর্ড উইলিয়ম কেরি বাঙলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। কেরি সাহেবের সহায়তায় গনেশ কর্মকার প্রথম ছাঁপার অক্ষর উদ্ভাবন করেছেন কিন্তু পাকিস্তানি রাহুচক্র বাঙলা ভাষা গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল। গীতি কবিতার ভাষায় তা হল “১৯৪৭ সনে স্বাধীনতা পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠন করা হয়, পাকিস্তান গণ পরিষদ ইচ্ছামতো খেল খেলায়, প্রথম হানে ভাষায় আঘাত, ও বাঙালির ভাষা রাখবে নয়”। কায়েদে আযম মোঃ আলী জিন্নাহ্ ঘোষণা করলেন (টজউট অঘউ টজউট ঝঐঝখখ ইঊ ঞঐঊ ঝঞঝঞঊ খঅঘএটঅএঊ ঙঋ চঅকওঝঞঘ) .এ ঘোষণার প্রতিবাদে বাঙালি ছাত্র জনতা কাঁপিয়ে তুলেছিল পাক মসনদ। বঙ্গবন্ধু সহ ছাত্র সমাজ আন্দোলনের জন্য গঠণ করেছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ভাষা আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে সরকার ঘোষণা করল ১৪৪ধারা। ছাত্র জনতা তা ভংগ করে শুরু করলো মাতৃভাষা দাবির মিছিল। পুলিশ গুলি করতে লাগলো। শহীদ হলেন-রফিক, সফিক,বরকত, সালাম, জব্বার সহ নাম না জানা অনেক দেশ প্রেমিক ভাই। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অভ্যস্থ বঙ্গবন্ধুর মাভৈ মন্দ্রিত বজ্রকন্ঠের রেনেসাঁদীপ্ত আওয়াজে বাঙালীর শিরায় শিরায় রোমাঞ্চিত হতে লাগলো স্বাধীনতার তুুঙ্গ তুর্য নিনাদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মূলে এই ভাষা আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু তনায়া জননেত্রী শেখ হাসিনার দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীসংঘ বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রমাণ্যভাবে বলা যায় যে, আদি নাগ জনগোষ্ঠীর নাগীর পাড় ভীল জনগোষ্ঠীর বিল্বগা বাঙ জনগোষ্ঠীর বাঙঢ়োড়া বা বাঙিলা বঙ্কুরা মাহিষ্য জনগোষ্ঠীর মহিষা এবং নিষাদ জনগোষ্ঠীর রাজা নইলের চারণভূমি নলচিড়া ও চন্ডালদের চন্দ্রদ্বীপ প্রাগৈতিহাসিক যুগেই সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি মীননাথের জন্মস্থান বৃহতী গৌরনদীর কান্ডপাশা বা জ্ঞানীর স্থানে। অনুরুপ নাথ সহজন কাব্যের বৌদ্ধ দোহাগানের রচয়িতা কবি ভুসুকুপাদনাম এর জন্ম বাঙালুবাগ যা বাংলা বাদ। পাল আমলের ভেষজ বিজ্ঞানী ও লেখক মাধবকরের জন্মস্থান নলচিড়া ১২০০ খ্রিষ্ঠাব্দে রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি গোবর্দ্ধন আশ্চর্যের বশতি স্থান গোবর্দ্ধন গ্রাম এবং মনসা মঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্তের জন্ম স্থান বৃহতী গৌরনদীর ফুল্লোশ্রী গ্রাম। যুগে যুগে বাংলা ভাষার বিবর্তনে এ সকল কবিদের যথেষ্ঠ অবদান রয়েছে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.