হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব ৭ম পর্ব

0
(0)

((মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ)) = পূর্ব প্রকাশের পর হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব। তারঁ গোটা জীবন-ই আমাদের জন্য ইসলামী জেন্দেগী গঠনের এক অনন্য পাথেয়। হুজুর কেবলা (রহ.) যেমন ছিলেন একজন কামেল মুর্শিদ, ওলী, দরবেশ, সূফী সাধক ও আধ্যাত্মিক নেতা, তেমন ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, লেখক ও সংগঠক।প্রজ্ঞায়, পান্ডিত্বে. আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শবাদিতায়, সততায়, নিষ্ঠায়, উদারতায়, আমলে, আখলাকে তারঁ মত একজন মহত মানুষ সত্যিই বিরল। তারঁ জীবন ও কর্মই তাঁর বাস্তব প্রমান।পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে কিছু ক্ষণজন্মা মানুষের আবির্ভাব ঘটে। নিঃসন্দেহে মরহুম মাওলানা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন মানুষের এত বহুমুখী প্রতিভার সমনয় ঘটতে আমরা সচরাচর দেখি না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ বা ইনসানে কামিল।মানুষ চলে যায়, থেকে যায় তার কর্ম ও স্মৃতি। কর্মই মানুষকে পৃথিবীর বুকে অমর করে রাখে। এ জন্যই বলা হয় ‘যার কর্ম ভাল তাঁর সকল ভাল’। মানুষ তার ভাল কর্মের দ্বারাই ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এ কর্মের কারণের যুগযুগ ধরে মানুষ তাকেঁ স্মরণ করতে থাকে। চর্চ্চা করতে থাকে তাঁর কর্ম জীবন। জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে এদেঁর প্রতিটি কাজ ও কর্মকে এদেঁর মধ্যেই অন্যতম এক মহা মনীষী হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.। হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. এর কর্ম জীবন মানুষের জন্য এক অনন্য পাথেয়। তাঁর কর্ম জীবন ছিল এক বিশ্ময়কর কর্ম জীবন। যা ভাবতেও অবাক লাগে। তিনি একদিকে ছিলেন একজন পীর, সূফী ও সাধক, অন্যদিকে ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সমাজ সেবক, সাংবাদিক, যুবসংগঠক, চিকিৎসক, গরীব ও মজলুম মানুষের বন্ধু ও সঠিক দিকের দিশারী একজন সিপাহসালার। হুজুর তাঁর কর্ম দ্বারাই উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছিলেন। একজন মানুষ তাঁর জীবনে এতগুলো কাজ করতে পারেন যা চিন্তাও করা যায়না। এ জন্যই হুজুর কেবলার কর্ম জীবন বিস্ময়কর ও ব্যতিক্রমধর্মী। খনজন্মা এই মহা মনীষীর কর্ম জীবন ছিল বিশাল ও বি¯তৃত। তাঁর কর্ম জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. কর্ম জীবনের শুর”তেই কর্ম সূচী নির্ধারণ করেন। এই কর্মসূচীর ভিত্তিতেই সারাটি জীবন তিনি আন্দোলন চালিয়েছেন। তাঁর আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল সংশোধন ও সংস্কার। এ সংস্কার ও সংশোধনের পর্যায় ও কর্মসূচী ছিল তিনটি। ১. ইসলাহে নফছ (আত্ম শুদ্ধি) ২. ইসলাহে কওম (সমাজ শুদ্ধি) ৩. ইসলাহে হুকুমত (রাট্র শুদ্ধি)। এ সংস্কারের ব্যাপারে ছিল তাঁর নিজস্ব দর্শন, কর্মপন্থা, পদ্ধতি ও বাস্তব তৎপরতা। তিনি উচ্চস্তরের দার্শনিক ছিলেন। সে দর্শন কল্পনা বিলাসী কোন দর্শন ছিলনা। দর্শনকে তিনি চিন্তার স্তর থেকে বাস্তবের জমিনে নিয়ে এসেছিল এবং সেই আলোকে ব্যাপক কর্ম তৎপরতা পরিচালনা করেছেন। উপযোগী কর্ম তৈরী করেছেন। আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। ‘‘হয় মন্ত্রের সাধন নয় শরীরের পতন’’ সংকল্প নিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে এগিয়ে গেছেন। তিনি কোন ব্যাপারেই উগ্রপন্থা সমর্থন করেননি। তেমনি মাত্রাতিরিক্ত লাগামহীন উদারতাও ছিল তাঁর অপসাদনীয়। মধ্যপন্থা বা সীরাতুল মুস্তাকীম-ই ছিল তাঁর অনুসৃত নীতি। তাঁর অভিযান ছিল ইসলাহী (সংশোধন মূলক), ধংসাত্মক নয়। তাঁর অনুসৃত পদ্ধতি ছিল তাঁবলীগী পদ্ধতি। চরমপন্থা, উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী।
হুজুর কেবলার কর্ম জীবনের সূচনা হয় মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে। হুজুর কেবলার শিক্ষকতা জীবন ছিল গোটা শিক্ষক সমাজের জন্য এক আদর্শ দৃষ্টান্ত। শিক্ষকতাকে হুজুর পেশা হিসাবে গ্রহণ করেননি। তিনি যে এটাকে দ্বীনি খেদমতে একটি সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। নি¤েœ ঘটনায় তা সুস্পস্টভাবে প্রমাণ মেলে একবার পীরে মরহুম নেছারউদ্দিন রহ. এর কুতুব খানায় ছারছিনা মাদরাসার শিক্ষকদের এক জর”রী সভা আহবান করা হয়। সেখানে সকল শিক্ষক তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্য পীর ছাহেব হুজুরের কাছে আবেদন করেছিলেন। কায়েদ ছাহেব হুজুরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি নিরব রইলেন। পীর ছাহেব হুজুর রহ. কায়েদ ছাহেব হুজুরকে লক্ষ্য করে বললেন, বাবা! আপনি তো কোন কথা বলছেন না। আপনাকে কত বাড়িয়ে দিতে হবে? পীর ছাহেব কেবলার জবানে এই কথা শুনে কায়েদ ছাহেব হুজুর স্থীর থাকতে পারলেনা। তিনি কেঁদে ফেললেন। হুজুরের ক্রন্দন দেখে সবাই হতবাক। পীর ছাহেব কেবলা হুজুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, বাবা! কি হয়েছে বলুন, আপনি কাঁদছেন কেন? হুজুর কোন মতে ক্রন্দন সংরক্ষণ করে বললেন, আমি বেতনের জন্য ছারছিনা মাদরাসায় চাকরি করতে আসি নি। শুধু আপনার নির্দেশ পালন করেছি। বেতন বৃদ্ধির জন্য আজ আমি এখানে হাজির হইনি। আমার দুঃখ এইযে, আমার হৃদয়ের অবস্থাটা আপনাকেও বুঝাতে পারলাম না। পীর ছাহেব কেবলা বললেন, বাবা! আপনি মনে কোন কষ্ট নিবেন না আমি আপনার মনের অবস্থা অবশ্যই বুঝতে পেরেছি।
হুজুর ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। হুজুর তাঁর ছাত্রদেরকে অত্যন্ত ¯েœহ করতেন। ছাত্ররা অবাধে হুজুরের কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারত। ছাত্রদের চরিত্র গঠনের ব্যাপারেও হুজুর ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। হুজুর তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন ‘‘ আমরা যদি মনে করি যে ইসমে দ্বীন শিক্ষা দেয়াই শুধু আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, তা’মীরে আখলাক তথা চরিত্র গঠন আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত নহে, তাহলে আমরা মস্ত কড় ভুল করবো। আমরা যদি ছাত্রদের চরিত্র গঠনের দিকে লক্ষ্য না দেই তথা চরিত্রহীন ছাত্রদেরকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেই তাহলে উপকার না হয়ে ক্ষতিও হতে পারে। কোনো কবি বলেছেন- ‘‘চরিত্রহীনকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া আর ডাকাতের হাতে তরবারি দেয়া সমান কথা’’ (তা’মীরে আখলাক, পৃষ্ঠা: ৬)
ইনসাফের ব্যাপারে হুজুর ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও আপোষহীন। আবেগে অভিভূত হয়ে হুজুর কখনও কোন ছাত্রকে বেত্রাঘাত তো দূরের কথা ভর্ৎসনাও করেননি। আবার ন্যায় নীতির প্রশ্নে কাউকে কখনও ছাড়ও দেননি। একবার ছারছিনা মাদরাসার এমন এক ছাত্র বিচারে অভিযুক্ত হলো। বিচার করতে শিক্ষকগণ খুব হিমশিম খাচ্ছিলেন। কারণ তাঁর পিতা ছিলেন সবার শ্রদ্ধাভাজন ও অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। হুজুর তখন নিজে অত্যন্ত কঠোর হস্তে তার বিচার করলেন। হুজুর সেই ঘটনাকে উল্লেখ করে বলেছিলেন ‘‘যদি আমি তার বিচারে পক্ষপাতিত্ব বা নমনীয়তা প্রকাশ করতাম, তাহলে আমার প্রশাসন দুর্বল হয়ে যেত।’’
হুজুরকে দেখেছি অপরাধ করে যদি কেউ অনুতপ্ত হত সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দিতেন। চলবে

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.