গৌরনদী উপজেলার সাড়ে চারশো বছরের পুরনো বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দিরে বাৎসরিক পূজা।
বিশ্বজিত সরকার বিপ্লব ও সঞ্জয় কুমার পাল।
অশান্ত বিশ্বে আজ পারস্পারিক হানাহানি। মানব জীবন মোহময় ও অন্ধকারছন্ন। এ মোহময় অন্ধকার দ‚র করতে, জীবনের দুঃখ মোচন ও শান্তি অর্জন এবং জগতের মঙ্গলার্থে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে প্রায় সাড়ে চার’শ বছরের পুরনো দেশের ঐতিহ্যবাহী ও গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র দৃষ্টিনন্দন করা বার্থী শ্রীশ্রী তারা মায়ের মন্দিরে বাৎসরিক প‚জা ও গ্রামীণ মেলা সরকারী সাস্থ্য বিধি মেনে আগামি ২১শে ফাল্গুন বাংলা ৬ই মার্চ ২০২১ ইংরেজি শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বার্থী শ্রীশ্রী তারা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক প‚জা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ভারত,নেপালসহ দেশের বিভিন্নস্থানের লাখো ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দরা। আগামি ২১শে ফাল্গুন বাংলা ৬ই মার্চ ২০২১ ইংরেজি শনিবার সকাল ৯টায় প‚জা আরম্ভ ও চন্ডীপাঠ, দুপুর ১১টায় বলিদান, ৪টায় প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা ৬টায় মায়ের সামনে আরতি ও ভক্তি ম‚লক সংগীতানুষ্ঠান, রাত ১১টায় বিশ্বশান্তি কল্পে প্রার্থনা, রাত বারোটায় রাতেরপুজা ও শিবাভোগ ও রাত ৪টায় প্রসাদ বিতরণ করা হবে। প্রতিবছরের ন্যায় বাৎসরিক প‚জা অনুষ্ঠানে আগত ভক্তবৃন্দের নিশ্চিত নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে গৌরনদী থানা পুলিশের সাথে মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, পুলিশ প্রসাশনের পক্ষ থেকে প‚জা ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠানে আগত ভক্তদের কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরের প‚জা ও গ্রামীণ মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর গৌরনদীতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পরে। বার্থী শ্রীশ্রী তারা মায়ের মন্দির পরিচালনা কমিটির কার্যকারী সভাপতি মন্দির ট্রাষ্টী সদস্য অবসরপ্রাপ্ত এএসপি শান্তুনু ঘোষ ও ট্রাষ্টী সদস্য প্রণব রঞ্জন দত্ত বাবু জানান, দেশের মধ্যে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বার্থী তারা মায়ের মন্দিরটি প্রায় সাড়ে তিন’শ বছরের পুরনো। ইতিহাসের আলোকে বার্থী এলাকার জমিদার প্রয়াত ভুবতী কান্ত বক্শির পুর্ব পুরুশ প্রথমে তারা মায়ের মন্দিরের নামে ৮৬ শতক জমি দান করেন। দেশের একমাত্র ঐহিত্যবাহী তারা মায়ের মন্দিরটি গৌরনদীর বার্থী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারই নামানুসারে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার্থী তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তারাকুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারাকুপি নামের একটি গ্রাম। বাংলা ১১১১ সালের দিকে বরিশালের বিখ্যাত জমিদার রাম লাল ভট্টাচার্য তারা মায়ের মন্দিরের পাকা ভবন নির্মান করে দিয়েছিলেন। ভারত,নেপালসহ বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার তারা মায়ের ভক্তদের অনুদানে প্রসিদ্ধ ও সার্বজনীন এ মন্দিরটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন ধর্র্মরক্ষিনী সভার বরাত দিয়ে তারা আরো বলেন, বৃট্রিশ সরকারের আমলে তারা মায়ের মন্দিরে সেবাইত হিসেবে ছিলেন ভগবান শ্যাননাল ও রমেশ শ্যাননাল। ১৯৮৪ইং সাল থেকে মন্দিরের সেবাইত হিসেবে অনিল চন্দ্র মৈত্র ও সার্বক্ষনিক মন্দিরের কাজের জন্য তিনজন কর্মচারী কাজ করছেন। স‚ত্রে আরো জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের আধুনিকায়নের জন্য বরিশালের দানবীর বিজয় কৃষ্ণ দে এবং অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারের নিজস্ব অর্থায়নে মন্দির ও কালী প্রতিমা পুণঃর্নিমাণ করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জুন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আধুনিকায়ন ঐতিহ্যবাহী এ মন্দির ও কালী প্রতিমা পুণঃনির্মাণের উদ্বোধন করা হয়। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুরম্য মন্দির প‚ণঃনির্মানের ফলে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের জৌলুস ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি এ মন্দিরটি গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র দৃষ্টিনন্দন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বাৎসরিক প‚জা উপলক্ষ্যে মন্দির ও তার পাশ্ববর্তী এলাকাকে আলোক সজ্জায় সজ্জিতসহ বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে। বাৎসরিক প‚জা ছাড়াও,বিশেষ পুজা শনি ও মঙ্গলবার এবং প্রতিদিন ত্রিসন্ধা এ মন্দিরে পুজা অনুষ্ঠিত হয়। বছরের বারো মাসই ভারত,নেপালসহ দেশের বিভিন্নস্থানের ভক্তদের সমাগম ঘটে থাকে।