গৌরনদীতে হলুদ কস্তরী ফলের সবুজ বিপ্লব

0
(0)


আহছান উল্লাহ।
স্বাদ পুষ্টি ও ঔষধিগুনে ভরা ফলটি ইয়োলো মাস্ক বা হলুদ কস্তরী আবার সৌদি আরবসহ মরু অঞ্চলে সাম্মাম নামে পরিচিত। ফলটি কাঁচা খাওয়া যায়। আরবীয়দের প্রিয় খাবার এটি। সুগন্ধযুক্ত অত্যান্ত সুস্বাদু ও পুষ্টি গুনে ভরা এই ফলটির বানিজ্যিক চাষ করে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন প্রবাস ফেরত মজিবুর রহমান বিপ্লব। তার বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোড় ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের । ৪০ শতক জমিতে অল্প সময়ে অধিক ফলনের মিশ্র কৃষি ভোগ্যপন্য চাষ করে সফলতার গল্প তৈরী করেছেন তিনি। এ ছারাও থাই রকমেলন ও বারোমাসি তরমুজেরও বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। করোনাপরবর্তী সময়ে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় তার সফলতা এলাকার বেকার তরুন যুবকদের আশার আলো দেখাচ্ছে।

সফল কৃষক মজিবুর রহমান বিপ্লব কালেরকন্ঠকে জানান,১৭ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে এসে ৪০ শতক জমিতে মাছ ও ধানের চাষ করে লাভবান হয়েছেন। অল্প জমিতে অধিক ফলনের মিশ্র কৃষি পন্য করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকেন। দীর্ঘ্যদিন সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটানোর কারনে বিভিন্ন ফলের সাথে সক্ষ্যতা তার। সেই সখের বসে গত বছর হলুদ কস্তরী বা সাম্মাম,রকমেলন,বারোমাসি তরমুজ,মাল্টা ও সিডলেস লেবুর বানিজ্যিক চাষ শুরু করেন। প্রথমে কিছু সমস্যা হলেও হাল ছারেননি। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে আবার পুনরায় তিনি অর্গানীক পদ্ধতিতে মিশ্র প্রজেক্ট শুরু করেন। ঢাকার ছিদ্দিক বাজারের জামালপুর সিডস থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৫শ রকমেলন,৬শ বারোমাসী তরমুজ এবং ৭শ হলুদ কস্তরি বা সাম্মাম ফলের বীজ বপন করেন। চলতি বছর তিনি এর বাম্পার ফলন পেয়ে মহা খুশি। এলাকার মানুষকে অল্প দামে এ দুর্লভ ফল খাওয়াতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। প্রতিকেজী হলুদ কস্তরী বা সাম্মাম ১শ ৫০ থেকে ১শ ৭০ টাকা মুল্যে পাইকারী দরে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকালে স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা এসে ফল কিনে নেন।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি প্রায় দুশ কেজী বিক্রি করেছেন, আরো ৮/৯শ কেজী হলুদ সাম্মাম এ মৌসুমে বিক্রি করতে পারবেন। বারোমাসী তরমুজ ও রকমেলন আগামী এক মাসের মধ্যে বিক্রি শুরু করবেন। হলুদ কস্তরী বা সাম্মাম ৬০ দিনে,রকমেলন ৭০ দিনে,বারোমাসি তরমুজ ৬৫ থেকে ৭০ দিনে ফলে। অল্প সময়ে আমাদের মাটিতে এসব কৃষিভোগ্য পন্যর বাম্পার ফলন হওয়ায় এলাকার বেকার তরুনদের কর্মসংস্থানের পথ দেখাচ্ছে।

সৌদী প্রবাসী সেফ লিটন আকন জানান,সাম্মামের কয়েকটি জাত আছে এর মধ্যে ইয়োলো মাস্ক বা হলুদ কস্তরীটা সু-স্বাদু পুষ্টিকর ও সুগন্ধীযুক্ত। আরবে সাম্মামের প্রচুর চাষ হয়। আরবীয়দের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় হলুদ কস্তরী ঐতিয্যগত একটি খাবার। অধিকাংশ আরবীয় পরিবারের শিশু বাচ্চা থেখে শুরু করে বয়স্করা সবাই হলুদ কস্তরী বা সাম্মাম এর সাথে সামান্য এলাচ দিয়ে জুস তৈরী করে খান।
পুষ্টিবীদরা জানীয়েছেন হলুদ কস্তরী বা সাম্মামের প্রচুর পুষ্টি ও ঔষধিগুন রয়েছে। এতে আছে পায়েটারি ফাইবার,কার্বোহাইড্রেট,সুগার,ফ্যাট,প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,কপার,আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস,বিটামিন,পেন্টোথেনিক অ্যাসিডসহ প্রায় ৫৭ প্রকারের পুষ্টি গুন।
ভেষজবীদরা জানিয়েছেন হলুদ কস্তুরী বা সাম্মাম নিয়মিত সেবনে শরীরকে শীতল,তৃষ্ণানিবারন,হজমকারক,কোষ্ঠকাঠিন্য দুর,মুত্রাশয় সংক্রমন প্রতিরোধ,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক,কিডনিসমস্যাজনিত বিভিন্ন রোগে অবিশ্বাস্য উপকার পাওয়া যায়। তবে তারা উল্লেখিত রোগ প্রতিরোধে এ ফলটিকে খাওয়ার আধা ঘন্ঠা আগে খেতে বলেছেন ।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী নুরজ্জামান জানান হলুদ কস্তুরী বা সাম্মাম ফলটি এর আগে আমরা ঢাকার মোকাম থেকে চড়া দামে এন বিক্রি করে সীমিত লাভ হত। বিল্পব ভাই ফলটি ফলানোর পর আমরা সহজেই তাজা অবস্থায় বিক্রি করতে পারছি। হাতের নাগালে ফলটি পাওয়ায় আমাদের ভালো লাভ হচ্ছে।
সফল কৃষক মজিবুর রহমান বিপ্লব জানান, অল্প জমিতে অল্প সময়ে মিশ্র কৃষি প্রকল্প করে সবাই লাভবান হতে পারেন। আমার সফলতার পর অনেক যুবকরা উৎসাহী হয়ে আমার কাজ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আমিও তরুন যুবকদের আপনাদের মাধ্যমে কৃষি পন্য উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহবান করছি। কৃষিকে সম্মানজনক স্থানে নিতে আসুন আমরা একটি সবুজ অর্থনীতির আন্দোলন করি।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল বনিক জানান, মিশ্র প্রকল্পটি শুরুর থেকেই আমি নিয়মিত পরিদর্শন,পরামর্শ সহযোগীতা প্রদান করে আসছি। আর প্রকল্পটি আমার কর্ম এলাকায়। তার এ মিশ্র কৃষি প্রকল্পর সফলতায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। বেকারদের আশার আলো দেখাচ্ছে। (লেখক-ভেষজ গবেষক,উদ্ভাবক ও সাংবাদিক)

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.