বরিশালের গৌরনদী প্রদীপের নিচে অন্ধকার—-!
আহছান উল্লাহ।
পুরো নাম প্রদীপ কুমার দাস। বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদি (টরকি) এলাকায়। পেশায় একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে)। বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত। আর এই প্রদীপের নিচেই ভয়াবহ অন্ধকার। অভিনব কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা,শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন জনের কাজ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই অভিনব প্রতারনার সহযোগী ছিলেন তার সহদর ভাইরা। প্রতরানার টাকায় ভারতের নদিয়ায় গড়েছেন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার এ প্রতারনার শিকার মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকসহ ২০ পরিবার, বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে আদালতে মামলা করেন শিক্ষকরা মামলাটি চলমান আছে।ওই মামলায় প্রদীপ দাস ও তার সহদর ভাই অঞ্জন দাসকে আসামি করা হয়। শিক্ষকদের পক্ষে মামলটি পরিচালনা করছেন বরিশাল-০১ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাটভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুছ। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়েছে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে করোনা মহামারির আগে প্রদীপ দাস কোন কারন ছাড়াই ছয় মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়ে মামলার বাদিকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ধামকি ও চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ ও মামলা সুত্রে জানাগেছে,উপজেলার ১৫ নং রামসিদ্ধি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চলতি দায়িত্বে প্রদীপ কুমার দাস ও তার সহদর ভাই অঞ্জন কুমার দাস দীর্ঘ্যদিন ধরে অভিনব কৌশলে বিভিন্ন ব্যাক্তি,ব্যবসায়ী,১৮ জন শিক্ষকসহ দুইজন মুক্তিযোদ্ধার কাজ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এর পর দীর্ঘ্যদিন গাঢাকা দিয়ে থাকেন।
ভুক্তভোগি শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধারা শিক্ষক প্রদিপের কাছে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন তালবাহনা শুরু করেন। উপায়ন্তর না পেয়ে ভুক্তভোগীরা ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই বছরের ২২ আগস্ট গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামিল বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের এর কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ৫১৭/৩ স্বারকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার টাকা আত্মসাত করার সত্ততা নিশ্চিত করে তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন, ১৫ নং রামসিদ্ধি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদিপ দাস ২মাস পরপর চিকিৎসা ছুটি ডাকযোগে প্রেরন করেন এবং তিনি শিক্ষা অফিস বা তার কর্মস্থলে কোন যোগাযোগ করেননি। শিক্ষক প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্ততা পাওয়া গেলেও রহস্যজনক কারনে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ ঘটনার পর স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার সহদর ভাই বিভিন্ন জনের কাজ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেয়া ১ কোটি ১২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে মুচলেকা দেন। কিন্তু কারো টাকা না দিয়ে আবার তালবাহানা শুরু করলে ভুক্তভোগিদের পক্ষে অবঃ প্রধান শিক্ষক টিএম আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে প্রদীপ কুমার দাস ও তার সহদর ভাই অঞ্জন কুমার দাসকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের এর পর প্রদীপ কুমার দাস আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরন করেন। জমি বিক্রি করে টাকা দেয়ার কথা বলে কয়েকদিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়ে বিভিন্ন কৌশলে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন রকম চাপ প্রয়োগ করছেন।
একটি সুত্র জানায় প্রদীপ মাস্টারের সহদর ছোট ভাই সুব্রত দাস ব্রাক ব্যাংক টরকি শাখা থেকে শিক্ষক মমিন খানকে জামিনদার করে ৬ লাখ টাকা লোন নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। তার অনুপস্থিতে ব্যাংক জামিনদার মমিন খানের বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি চরম বিপাকে পরেছেন। মমিন খান প্রদীপ মাস্টারের অনুরোধে তার ভাইর লোনের জামিনদার হন। সুত্রটি আরো জানায় বিভিন্ন জনের কাজ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে শিক্ষক প্রদীপ দাস ভারতের নদিয়ায় প্লট ক্রয় করেছেন। তার ছোট ভাই সুব্রত দাসকে সেখানে রেখে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করাচ্ছেন।
গতকাল মামলার বাদী ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি অবঃ প্রধান শিক্ষক টিএম আলতাফ হোসেন বলেন, শিক্ষক প্রদীপ দাস সরলমনা শিক্ষকদের সাথে চরম প্রতারনা করেছেন। আমরা সুবিচারের জন্য আদালতের সরনাপন্ন হয়েছি। জেলা পরিষদের সদস্য রাজু আহম্মেদ হারুন টরকি বন্দরে একটি দোকানে বসে শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে সালিস বৈঠক করেন। সেখানে শিক্ষক প্রদীপ জমি বিক্রি করে ্ওই নেতার কাছে টাকা জমা দিবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। এবং জমির কিছু অংশ ্ওই নেতায় ক্রয় করেন এবং জমি বিক্রির টাকা তার কাছে জমা দেন। চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্ভর আমাদের টাকা দেয়ার কথা বলে জেলা পরিষদ সদস্য রাজু আহম্মেদ হারুন টরকি বন্দরে খবর দিয়ে নিয়ে টাকা না দিয়ে উল্টো আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ধামকি দেন।
এ বিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতা ও বরিশাল জেলা পরিষদের সদস্য রাজু আহম্মেদ হারুন বলেন আমি জমি ক্রয় করিনি আমার সাথে একটা বায়নাচুক্তি হয়েছিল। আমি জমি ক্রয় করবো না বলে টাকা ফেরত চেয়েছি। তবে প্রদীপ দাস জৈনক ক্যাক্তির মাধ্যমে কিছু জমি বিক্রি করেছে এবং কয়েকটি মামলা উঠানো হয়েছে বাকী মামলাগুলো তোলার চেষ্টা চলছে।
শিক্ষক প্রদীপ কুমার দাস বলেন মামলা যখন হয়েছে তখন সব কিছু আদালতেই ফয়সালা হবে।