পলিথিনে মোড়ানো অভিজিত আর অপুর্বর ভবিষ্যত
আহছান উল্লাহ।
বিশাল বাংলার অভাবি কচি মুখের গল্প নতুন কিছু নয়। পর্দার অন্তরালে থাকা অনেক ঘটনার মাঝে কিছু ঘটনা হৃদয়ে রক্তক্ষরন ঘটায়। সে রকমই একটি মর্মস্পর্সি ঘটনা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত বাকাই (ইছাগুরি) গ্রামে। পিতাহারা স্কুল পড়–য়া অভিজিত আর অপুর্ব তালুকদারের পলিথিনে মোড়ানো জীবন নাট্যর করুন কাহিনী।
বাকাই (ইছাগুরি) গ্রামটি গৌরনদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিঃমিঃ দুরে। প্রত্যন্ত এলাকাটি অনেকটা কৃষি নির্ভর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর করোনা মহামারিতে এলাকার প্রায় সব মানুষই অভাবগ্রস্ত হয়ে পরেছেন। প্রত্যন্ত এই গ্রামের মৃত অনিল তালুকদারের দুই ছেলে অভিজিত তালুকদার আর অপুর্ব তালুকদার। অভিজিত এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছেন। অপুর্ব পঞ্চম শ্রেনী পাস করেছে। স্কুল চালু হলে ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হবে। ঘর জমি কিছুই নাই অভিজিতদের। অভিজিতের মা নিপু তালুকদার দিন মজুরের কাজ করতেন। বর্তমানে রোগে শোকে জড়াজীর্ন, কোন কাজকর্ম করতে পাড়ছেন না। অভিজিত পড়ালেখার সাথে চায়ের দোকানে কাজ করে আর মায়ের দিন মজুরের কাজ করা আয়ে কোনমতে চলত তাদের জীবন জীবীকা।
অন্যের জায়গায় পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করেন এই অসহায় পরিবারটি। অর্ধাহার অনাহার আর নির্ঘূম রাত তাদের প্রতিদিনের চিত্র। কাঁচা মাটিতে পলিথিনের ঘরে আছে সাপের ভয়ও। বৃষ্টি হলে পলিথিনের ঘরেই অভিজিত আর অপুর্বর বই খাতা এক জায়গায় করে পলিথিনে মুরিয়ে রাখা হয়। তারপরও থেমে নেই অভিজিত অপুর্ব। জীবনযুদ্ধ যত কঠিন হউক না কেন পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে মানুষের উপকার করার ব্রত তাদের।
অভিজিতের মা নিপু তালুকদার জানান, তার স্বামী দীর্ঘদিন বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন বছর পুর্বে মারা গেছেন। তিনি জীবিত থাকতেই তারা তার চিকিৎসা করাতে নিস্ব হয়েছেন। বড় মেয়ে তপুকে পাঁচ বছর আগে বিবাহ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন বর্তমানে আমি কাজকর্ম করতে পারছিনা বড় ছেলেটা কাজ করে আবার পড়ালেখা করে। করোনার মধ্যে কিছু সাহায্য পেয়েছি আর ছেলের জমানো কিছু টাকা দিয়ে ১১ খান পুরাতন টিন কিনেছি। এই জায়গাটুকুও আমাদের না। বাকীটাত দেখতে পারছেন বলে হাউমাউ করে কেঁদে দেন।
স্থানীয় বাসিন্ধা চিত্ত রঞ্জন বলেন অভিজতদের করুন কাহিনী ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এত কষ্টের মাঝেও ওদের পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহ।
বাকাই নিরজ্ঞন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক পার্থ সারথি হালদার জানান,অভিজিত আমার স্কুলেরই ছাত্র ছিল। স্কুলের তরফ খেকে আমরা যতটুকু পারছি সহযোগিতা করেছি। আসলে ওদের বিষয়টি বলতে গেলে চোখে পানি চলে আসে। পড়ালেখার প্রতি ওদের দুই ভাইর প্রবল আগ্রহ।