মোর নাম নাই !

0
(0)


আহছান উল্লাহ,
তারা যুদ্ধ না করে এমনকি ট্রেনিং না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত হয়েছে, কিন্তু মোর নাম নাই। এলাকার সবাই জানে মুই মুক্তিযোদ্ধা। এলাকায় তদন্ত করলেই জানা যাবে মুই মুক্তিযোদ্ধা কিনা ? প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বীকৃতি পাননি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কান্ডপাশা গ্রামের অসহায় মোঃ হারুন খলিফা (৭৪)। জীবন বাঁচাতে এ বয়সেও ভ্যানরিকসা চালাতে হচ্ছে এ বীর সন্তানের। তিনি ওই গ্রামের মৃত কেরামত খলিফার পুত্র।
জানাগেছে,১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেছিলেন মোঃ হারুন খলিফা। দীর্ঘ ৯ মাস পাকহানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে দেশকে শত্রু মুক্ত করেছিলেন । তিনি আজ জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে নিজেই এক পরাজিত সৈনিক। এই বৃদ্ধ বয়সেও ভ্যান চালিয়ে তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। তার সহযোদ্ধারা সবাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু তার নাম তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তিনি ভাতা পাচ্ছেন না।
মোঃ হারুন খলিফা জানান, ১৯৭১ সালে জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। যুদ্ধ শুরু হলে স্থানীয় নলচিড়া গুচ্ছ গ্রামের কালু খান,কান্ডপাশা গ্রামের কদম খান, মোফাজ্জেল বালী, আউয়াল প্যাদা, পিংগলাকাঠী গ্রামের আক্কাছ প্যাদা,বাসুদেব পাড়া গ্রামের কাঞ্চন প্যাদা সহ এলাকার আরো কিছু যুবকদের সাথে তিনি ( মোঃ হারুন খলিফা ) ট্রেনিং গ্রহনের জন্য ভারত গমন করেছিলেন। ওই সময় নলচিড়া বাজারের ব্যবসায়ী অজিত কুমার রায় তাকে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন বলে তিনি আজও সে কথা ভুলে যাননি।
মোঃ হারুন খলিফা আরও জানান,ভারতের চব্বিশ পরগানার হাসনাবাদের আম্লানী ক্যাম্পে ট্রেনিং গ্রহন করেন। ট্রেনিং শেষে গৌরনদীর বাসুদেবপাড়া গ্রামের এচাহাক প্যাদার নের্তৃতে ১৮ জনের একটি গ্রুপ দেশে ফিরে ৯ নং সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডার নিজাম উদ্দিনের বাহিনীর সাথে যুক্ত হন। এরপর নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে বরিশালের অফদা কলোনী,গৌরনদীর হোসনাবাদ,বাটাজোর,গৌরনদী কলেজ,কসবাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে সন্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার একবছর পর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুন খলিফা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় গিয়ে রিক্সা চালানো শুরু করেন। ২০০৩ সালে হারুন খলিফার বসত ঘর আগুনে পুড়ে যাবার কারণে তার মুক্তিযোদ্ধার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র বিনষ্ট হয়। দীর্ঘ ৩ যুগ ঢাকায় থাকার কারণে তিনি এলাকার সাথে তেমন একটা যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি তাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকা খেকে তার নাম বাদ পড়ে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য বিভিন্নস্থানে ধর্ণা দিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। তার প্রতিবেশী ইউপি সদস্য মোসলেম খান,আঃ রহিম খান সহ স্থানীয়রা জানান, হারুন খলিফা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ভাতা পাননা,তার নাম তালিকায় নেই এটা বড়ই কষ্টের কথা।
এই বৃদ্ধ বয়সেও অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুন খলিফা। তার জীবনের শেষ ইচ্ছা মরার আগে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম দেখা। এ জন্য তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.