গৌরনদীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারে সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা লোপাট প্রথম পর্ব

0
(0)


বিডি কামাল স্টাফ রিপোর্টার।
বরিশালের গৌরনদী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারে সরকারি বরাদ্দের অর্থ প্রাথমিক শিক্ষা অফিস,শিক্ষক ও একাধীক দপ্তরের যোগসাজসে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধানী ধারাবাহিক রিপোর্টের প্রথম পর্ব।
আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম মাত্র সংস্কার কাজ করে কয়েকজন শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামিলের যোগসাজশে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ লোপাটের মহাউৎসব চলছে। তালিকাভূক্ত কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিনসেড ঘর ক্ষতিগ্রস্তের কথা উল্লেখ করা হলেও সরেজমিনে কোন টিনসেড ঘর পাওয়া যায়নি। এমনকি শিক্ষা অফিসারের সাথে দুর্নীতির সক্ষতা না থাকায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল বরাদ্ধই পায়নি। অনেক শিক্ষক চাকুরির সুবাদে বাদ্য হচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতির সহযোগী হতে। নির্ভরযোগ্য সুত্র মতে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারী একাধীক দপ্তর ফ্রি স্টাইল দুর্নীতি করেও রহস্যজনক ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কেঁচো খুরতে সাপ বেড়িয়ে যাওয়ার মত এ দুর্নীতি থামাতে দুর্নীতিদমন কমিশন সহ সরকারের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
জানাগেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করেন। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় গুলো সংস্কারের জন্য ২০১৯-২০ অর্থ বছরের আওতায় উপজেলার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সমরসিংহ, লাখেরাজ কসবা, টরকীর চর, ইল্লা, নরসিংহলপট্টি, দক্ষিন বিল্বগ্রাম, উত্তর রামসিদ্দি, উত্তর চাঁদশী, কাঁঠালতলী, মিয়ারচর, জয়শুরকাঠি, সাহেবেরচর, দক্ষিণ হোসনাবাদ, উত্তর পালরদী,কান্ডপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে দেড়লাখ টাকা করে সর্বমোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা টরকীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি পাকা ভবন রয়েছে। এর একটি ভবনের নির্মাণ কাজ গত বছর সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে কোনটিই আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই বিদ্যালয়টিকে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় দেখিয়ে সংস্কারের জন্য দেড়লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুল হাছান বলেন, পুরানো ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কারণে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে ছাদে প্যাটেনস্টোন করা হয়েছে।
বেজগাতি মৈস্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২টি পাকা ভবন রয়েছে। এরমধ্যে কোনটিই আম্পানে ক্ষতিগ্র্স্ত হয়নি। অথচ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই বিদ্যালয়টিকে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভূক্ত করে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। এমনকি ওই বিদ্যালয়ে কোন টিনের ঘর না থাকা সত্তেও প্রতিবেদনে একটি টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে দেড়লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্পনা রানী জানান, বিদ্যালয়টিতে পূর্বে টিনসেড ঘর ছিলো। ৩ বছর পূর্বে নতুন পাকা ভবন নির্মাণ হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করা হয়নি। তবে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে নতুন করে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হবে। একই ভাবে ইল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সরমসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আম্পানে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ওই বিদ্যালয়ে কোন টিনসেড ঘর দেখা যায়নি।

একাধিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকায় লাখেরাজ কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব সমরসিংহ, টরকীর চর, ইল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিদ্যালয় নামেমাত্র সংস্কার কাজ করে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
উত্তর পালরদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। অথচ ্ওই স্কুলে আম্পানে কোন ক্ষতিগ্রস্তর প্রমান পাওয়া যায়নি। ্ওই স্কুল কমিটির সভাপতি ছালাম মিয়া জানান তারা বরাদ্ধের দের লাখ টাকার মধ্যে হাতে পেয়েছেন ১লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং কাজ করেছেন । একই ভাবে দক্ষিন বিল্বগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিমল কর বলেন বরাদ্ধকৃত ১লাখ ৫০ হাজার টাকার অনুকুলে তারা পেয়েছেন ১ লাক ২৩ হাজার টাকা সেখান থেকেও শিক্ষা অফিসকে বাড়তি ৫হাজার টাকা দেয়া হয়েছে উৎকোচ। বাকী টাকা নাকি ভ্যাট হিসেবে কাটা হয়েছে। কিন্ত সরকারী বিধি অনুসারে এসব বরাদ্ধে সারে সাত পার্সেন্ট ভ্যাট কাটা হয়।
উপজেলা সদরের দক্ষীন বিজয়পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ সিকদার জানান,আম্পানে স্কুলের একটি ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি ভবনের উপর গাছ পরে আছে অথচ আমাদের স্কুলে কোন বরাদ্ধ আমরা পাইনি। শিক্ষা অফিস থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দুরে হরিসোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিলন খলিফা জানালেন তার স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন বরাদ্ধ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এখাধীক শিক্ষক জানান মহান পেশায় এসে বিলের জন্য ২হাজার ৫শ টাকা উৎকোচ দেয়া লাগল। সুত্রটি আরো জানায় এ বছর ৩৫ জন নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকের প্রত্যেককে বিলের জন্য ২৫শ টাকা করে উৎকোচ দেয়া লাগছে শিক্ষা কর্মকর্তাকে। শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক মুখ খুললে তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হয়। যে কারনে প্রকাশ্যে কেহ এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে মূখ খুলতে চান না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর বিভিন্নখাতে সরকারি বিভিন্ন বরাদ্ধের অর্থ লোপাটের এক মহা উৎসব চলছে। এ গুলি দেখার কেহ নাই। অফিসের সামনে ”প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতি মুক্ত” সাইন বোর্ড লাগিয়ে নির্বিগ্নে দুর্নীতি করা হচ্ছে।
সুত্রমতে শিক্ষা অফিসের দুর্নীতির মহা উৎসবের ঘটনাটি এলাকায় চাউর হয়ে যাওয়ায় কয়েকজন শিক্ষক প্রতিনিধি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রভাবশালীদের দারস্ত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, মূলত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে যে সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সখ্যতা ও সু-সম্পর্ক রয়েছে, সে সব বিদ্যালয় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাভূক্ত করে বরাদ্দসহ সব রকম সরকারী সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রথান শিক্ষকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আতাত করে জুন ক্লেজিংয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামীল করোনার আগে এক যোগে ২৪টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ রেখে বনভোজনে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছিলেন।
গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামিলের বক্তব্য নিতে একাধীকবার মুঠো ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিপ করেননি। তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন জবাব দেননি।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন এ বিষয়ে আমি কোন অভিযোগ পাইনি, যদি কেহ অভিযোগ করে এবং তদন্ত সাপেক্ষ প্রমান পেলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল জেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল লতিফ মজুমদার বলেন এ বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি, তবে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
(আগামি পর্বে গৌরনদীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটিকোটি টাকা লোপাট ২য় পর্ব)

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.