বরিশাল নগরীতে আ’লীগ নেতা ও পুত্রের জমি দখলের মিশন

0
(0)


কাজী জাহাঙ্গীর ॥ বরিশাল নগরীর আমানগঞ্জের একটি বসতি জমি অবৈধভাবে দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পুত্র। ওই জমির উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টাকা খেয়ে জমি কেনা বেচা এমনকি শেষ পর্যন্ত ক্রেতাকে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে নিজের হাতে পিলার স্থাপন করতে বাড়িওয়ালীর ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে এসেছেন পিতা ও পুত্র। গত ১১ জুলাই শনিবার ওই আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আনিস ও তার ছেলে আবিদ নিজ হাতে পিলার পূঁতে দিয়ে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে যান। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কেটে পরেন তারা।
ভুক্তভোগী আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, নগরীর ৪ নং ওয়ার্ড আমানতগঞ্জ মুরগীর ফার্মের দক্ষিন প¦ার্শে পৈতৃক সুত্রে পাওয়া মোট ১০ শতক জমিতে দুই সংসারের ভাই বোন মিলে বসবাস করে আসছেন তারা। কয়েক বছর আগে তিনি কয়েকজন বোন ও এক ভাই এর ভাগের জমি ক্রয় করে নিজের অংশের সাথে মোট ৫ শতক জমিতে দখলীয় ভাবে দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। ২০১৬ সালে নিজেদের মধ্যে জমিজমা বিরোধের জের ধরে বরিশাল জেলা জজ আদালতে একটি মামলাও করেছিলেন তিনি। পরে সে মামলা তুলে নিলেও জমির উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। যে কারনে ওই জমি কেনা বেচাসহ কারো অনুপ্রবেশ এবং জমি ঘিরে সকল কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বহাল অব্যাহত আছে।
মান্নান আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও এ বছরের মার্চের দিকে তাদের বোনদের কাছ থেকে ২ দশমিক ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন পাশর্^বর্তী বরকত নামের এক বাসিন্দা। জমি ক্রয়ে আইনের বাঁধা আছে জেনে এ কাজে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আনিস কে অন্তরভুক্ত করেন রহমান। মোটা অংকের টাকা উপঢৌকন দিয়ে জমি দখলের সকল দায়িত্ব আনিস কে প্রদান করেন তিনি। যে কারনে গত শনিবার ছেলেকে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারিকৃত ওই জমিতে গিয়ে নিজ হাতে পিলার স্থাপন করে জমি বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায় সৈয়দ আনিস ও তার ছেলে আবিদ। এসময় সেখানে জমি ক্রেতা রহমত ছিলো না।
মান্নান আরো বলেন, ব্যত্তিগত বিরোধ থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আনিস ও তার ছেলে তার ভোগ দখলীয় জমির মধ্যে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে পিলার স্থাপন করার চেষ্টা করে। মান্নানের স্ত্রী মালা জানায়, সকাল এগারোটার দিকে আমার স্বামী বাসায় না থাকার সুযোগে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে সৈয়দ আনিস ও তার ছেলে সন্ত্রাসী কায়দায় ভূমিদস্যুর ভূমিকায় আমাদের জমিতে পিলার স্থাপন করতে আসে। আমি দেখে তাকে নিষেধ করি যে বাসায় কেউ নাই। আমার স্বামী আসলে তারপরে আসবেন। জবাবে আমাকে সে খুন করার হুমকী দিলে আমি ঝাড়– নিয়ে তাড়া করলে তারা বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে অবার বাসার বাউন্ডারী ওয়াল টপকে তার ছেলে আবিদ ভিতরে প্রবেশ করে গেট খুলে দিলে সৈয়দ প্রবেশ করে। পুনরায় পিলার স্থাপন করতে গেলে সাংবাদিকদের টের পেয়ে পিতা ও পুত্র দুজনেই পালিয়ে যায়। কিন্তু দলিলে আদৌ নির্দিষ্টভাবে বিক্রি হওয়া ওই জমির স্থান বা আকার উল্লেখ করা নেই।
এ বিষয়ে সৈয়দ আনিছের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ হোসেন বলেন, জমি ক্রেতা বরকত সম্পূর্ন বৈধভাবে আইনী প্রক্রিয়া মেনে জমি ক্রয় করেছেন। কিন্তু জমি দখলে নিতে গেলেই মান্নান বাঁধা হয়ে দাড়ায়। তাই স্থানীয় গণ্যামান্য ব্যক্তি হিসাবে বরকত আমাদের ডেকেছেন তাই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। স্থাণীয় কাউন্সিলরও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন।
স্থানীয়রা জানায়, আঃ রহিম হাওলাদারের দুই জন স্ত্রী ছিলেন। বড় জনের ৩ পুত্র ও ৪ মেয়ে। ছোট জনের দুই পুত্র ৬ মেয়ে। মান্নান বড় জনের ৩ মেয়ে ১ ছেলে এবং মান্নানের নিজ এক বোনের জমি ক্রয় করেন। সব মিলিয়ে মান্নান ও তার ভাই ছাত্তার এর অংশসহ ক্রয়কৃত ৪ বোন এক ভাইয়ের সম্পত্তি মিলিয়ে সর্বমোট পাঁচ শতক জমির পুরোপুরি মালিক আঃ মান্নান হাওলাদার ও আব্দুস সাত্তার হাওলাদার। যা তাদের দখলে আছে। উল্লেখিত ওই সম্পত্তি আলাদা ও বাউন্ডারী প্রাচীর নির্মান করা। মান্নান ও ছাত্তারের ভোগদখলীয় বাউন্ডারী প্রাচীর করা বাড়ীর ভিতরে তাদের জমি ব্যতিত অন্য কারো জমি নাই। স্থানয়ীরা আরও জানায়, সৈয়দ আনিস একজন লোভী ও স্বার্থবাজ। দীর্ঘদিন বরিশাল আ’লীগের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে রাজনীতি করতেন। এখন স্বার্থের লোভে পাল্টি মেরে প্রতিমন্ত্রীর দলে ভেড়েন। এখন মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে এলাকায় এভাবে বেআইনী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ান। তার বিরুদ্ধে এলাকায় এরকম ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.