0
(0)


মোঃ আহ্ছান উল্লাহ
তিলে তেল হয় এমন কথাই সবার জানা। আর সে তিল যাদি বাংলাদেশের কালো হিরা (ডায়মন্ড) হয়। কথাটা একটু ভিন্ন হলেও এটাই সত্য আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সহজে চাষযোগ্য এবং বছরে তিনবার চাষ করা যায় এমন একটি তৈল জাতিয় সষ্য ও ভেষজ গুনে গুনান্নিত কৃষি অথনীতির একটি গুরত্বপূর্ন উপখাত তিল তাহলে তিলকে বাংলাদেশের কালো হিরা বলা যায়। বর্তমানে সচেতন কৃষকরা তিলকে কালো হিরাই বলছেন। উন্নত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তিল খাবার ও ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিল দিয়ে তেল হলেও পুরো তিল গাছটাই ঔষধী গুনে ভরা বর্তমানে তিল নিয়ে পৃথিবীর ২৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনা চলছে।
কালের ¯্রােতে সেই তিল এখন গ্রাম-বাংলার ফসলের মাট থেকে প্রায় উঠে যেতে বসেছে অথচ গ্রামীন অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এবং জমির উর্বরা শক্তি ধরে রাখতে তিলের ভূমিকা অপরিসীম। তিলের রয়েছে বিচিত্র ঔষধীগুন। চার রকম তিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় সাদা,কাল,রক্তাভ ও মেটে রঙের । কাল তিলই সাধারনত ঔষধে বেশী ব্যবহার হয়। সাদা তিলের তেলে গন্ধ কম হয় এবং খেতেও ভালো লাগে সে জন্য খাবার ও প্রসাধন শিল্পে এ তেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী। তিলের বীজ,তেল,খইল,তিল ফুল ও শুকনা গাছ ঔষধরুপে ব্যবহৃত হয়। রক্ত আমাশয়,সাধারন আমাশয়,টাক পড়া,ফোড়া,মাথার রোগ,পিপাসা আমবাত রোগে কাল তিলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য । ভেষজ গবেষকরা জানিয়েছেন শরীরের যে কোন পচা ক্ষতে কাল তিল বেটে ক্ষতে লাগালে পূজপড়া বন্ধ হবে এবং ঘা সুখাতে থাকবে। ভেষজ গবেষকরা আরো জানিয়েছেন তিলের শুকনো গাছকে প্রাক্রয়াজাত করে চুল কালো করার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহিন কলব তৈরি করা যায়। অতীতে আমাদের দেশে তিলের আবাদ ভালো হলেও মাঝে তিল দেশ থেকে প্রায় হাড়িয়ে গিয়েছিল বর্তমানে কিছু ব্যবসায়ী তিলের আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের দেশের তিলের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারনে তিল রপ্তানি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে আসছেন তাও বাজার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এরপরেও কৃষকদের মাঝে বর্তমানে তিল চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
তিল চাষে কৃষকরা বিভিন্নরকম উপকার পাচ্ছে, যে জমিতে তিল চাষ করা হয় সে জমির মাটিতে অর্গানীক ম্যাটার বৃদ্ধি পায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে এক যাদুকরি পরিবর্তন দেখা যায় গবেষকদের মতে যে জমিতে পরিকল্পিত তিল চাষ করা হবে ঔইসব জমিতে পরবর্তী যে কোন ফসল চাষে সারের পরিমান কম লাগবে এবং ফলনও ভালো হবে। তিল থেকে যে আরও কত কিছু উৎপাদন হয় তা অনেকেরই জানা। তিলের সুস্বাদু নাড়– সাবার কাছেই মজাদার খাবার হিসেবে পরিচিত। তিলের রয়েছে অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভেষজগুন। তিল এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশ আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনাম সহ বিশ্বের বিভিন্ন নামি দামি দেশে প্রকৃয়াজাত তিল রপ্তানি করা হচ্ছে।

তিল ব্যবসায়ি সুমন জানান, বছরের জুন মাস তাদের তিল আহরণের সর্বোত্তম সময়। জুন মাস থেকে বাজারে তিলের আমদানি শুরু হয়। তারা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ও হাট বাজার থেকে তিল কিনে আনেন। গ্রাম বা হাট বাজার থেকে প্রতি মন তিল ১৭শ থেকে ১৮শ টাকায় তারা কিনে আনেন। বাজারে তেলের দাম বেশি হলে তিলের দামও বেড়ে যায়। তারা মন প্রতি ৫০ থেকে ১শ টাকা লাভে ওই তিল মিলে বিক্রি করেন।
তিল প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষে হলে তারা প্রথমে তিল ঢাকা পাঠান এর পর চিটাগাং হয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। চিন সহ বিভিন্ন দেশে প্রধানতঃ ফুড আইটেম হিসেবেই তিলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে আসছে। ফাষ্ট ফুড আইটেম ছাড়াও তেল হিসেবেও বিদেশে রয়েছে তিলের ব্যাপক চাহিদা।
মাট পর্যায়ে কৃষক,তিল ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল জানান আমাদের দেশে কৃষির গুরত্বপূর্ন এ খাতটির উপর সরকার এবং ব্যাংকগুলো সময়উপোযোগী পদক্ষেপ গ্রহন করলে আমাদের কৃষিজমিসহ মাট পর্যায়ের কৃষকরা লাভবান হবেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.