0
(0)


আহছান উল্লাহ।
সম্মানীত পাঠক,
‘করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিরাময়ের সম্ভাব্য ঔষধ বা প্রতিসেধক আবিষ্কারে যখন সমগ্র পৃথিবীর বিজ্ঞানী,গবেষকরা হিমসিম খাচ্ছেন। সেখানে প্রকৃতির ছয়টি উপাদান করোনার সমাধান কথাটা পাগলের প্রলাপ বলে কথাটা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। ভেষজবীদদের আশা একটা করোনা বিজয়ের সম্ভানাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যে ছয়টি প্রাকৃতিক উপাদানের কথা বলা হযেছে সে উপদানগুলোর মাঝে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক জিবানু নাষক। এমনকি এসব প্রকৃতিক উপাদানের একটিতে প্রচুর পরিমানে ট্রাইটারপিন ও লিংকজাই-৮ নামক পদার্থ আছে যাহা মানবদেহের ভীতর এবং বাহিরের যে কোন সংক্রনের জিবানুর প্রতিকার এবং প্রতিরোধে অত্যান্ত কার্যকরী।
এ ছয়টি প্রকৃতি দিয়ে তৈরিকৃত উপাদান পরিমানমত মানব শরীরে প্রযোগ করা যায়। এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। এটি মানব শরীরে ৩ থেকে ৬ ঘন্টায় কাজ শুরু করে। এর যেমন রয়েছে প্রতিকারের ব্যবস্থা তেমনি রয়েছে প্রতিরোধক ব্যবস্থা। করোনা আক্রান্তদের বিষয়ে ভালো ফল দিতে পারে। প্রাকৃতিক প্রতিরোধক ব্যবস্থায় একটা ইতিহাস রচনা হতে পারে আমাদের দেশে। চড়ম এ ক্রান্তিকালে আমাদের দেশে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যারা গবেষনা করছেন। তারা কোন বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া আমাদের নিজ্স্ব ভাবধারায় প্রকৃতির এ ছয়টি উপাদান নিয়ে জরুরি গবেষনা করলে একটা ভালো খবর হতে পারে।

 

কালের কন্ঠের সাথে এরকমই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলেছেন গ্রামীন জনপদে পর্দাড় আড়ালে থাকা কিছু প্রকৃতি নির্ভর অতি-সাধারন মানুষ। সংক্ষেপে তাদের পরিচয় পুর্ব পূরুষ থেকেই তারা যে কোন জটিল রোগে শোকে প্রকৃতিই তাদের একমাত্র ভরশা। তারা কবিরাজ চিনলেও ডাক্তার চিনেন না বললে মিথ্যা হবে না।
করোনা শুধু শহরকেন্দ্রিক মানুষদের ভাবায় না। এ সমস্যা এখন গ্রামীন জনপদের অতি সাধারন মানুষকেও ভাবাচ্ছে। কতিপয় প্রকৃতি নির্ভর আয়ুর্বেদ পন্ডিত,আয়ুবের্দ এর শিক্ষকসহ বর্ষীয়ানদের প্রকৃতি নিয়ে কিছু নিজস্ব ভাবনার বহিপ্রকাশ মাত্র এটি। তাদের বিভিন্ন পরামর্শর গুরত্বপূর্ন অংশ তুলে ধরা হল।
তাদের ভাবনায় পৃথিবী এখন জিবানু যুদ্ধর দ্বার প্রান্তে তাই সময় থাকতে প্রতিকারের চেয়ে প্রেিরাধক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাদের মতে প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক জাতির মধ্যে নিজস্ব কিছু চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। এ জ্ঞান শ শ বছর ধরে অর্জিত। এ জ্ঞানকে উপেক্ষা করা যাবে না। মূলত বৃক্ষরাজির ওপর মানুষের জ্ঞানকে কেন্দ্র করে এ্যালোপ্যাথী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠিত। এ কারনে এ্যালোপ্যাথী চিকিৎসা যদি বিজ্ঞান ভিত্তিক হয় তাহলে ভেষজ চিকিৎসাও তার ভিত্তি। তবে কথাটা সাংঘর্ষিক নয় দরকার সম্পুরুক ব্যবস্থা। আমাদের ভ’লে গেলে চলবে না আবহমান কাল থেকে প্রচলিত রোগ-শোকের চিকিৎসায় ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল ভান্ডার। ফলজ,বনজ উদ্ভিদের পাশাপাশি ভেষজ উদ্ভিদ দেশের বিশাল সম্পদের একটি বড় অংশ।

 

বর্ষীয়ানরা যা মনে করেন, আমাদের চারপাশে যে প্রকৃতি,পরিবেশ আর প্রতিবেশের মায়ায় আমরা বেড়ে উঠি। অপরিকল্পিত নগর সভ্যতার অনিবার্জ বিকাশের সঙ্গে আমরা প্রকৃতিকে দুরে ঠেলে দিয়েছি। আমরা আমাদের আচার,আচরন,আহার-বিহার,বসন-ব্যাসনে কৃতিমতা নির্ভর হচ্ছি। আর এ কারনে মানব ও প্রকৃতির স্বাভাবিক আত্ময়িতা বিনষ্ট হচ্ছে। রোগ শোক জরাজির্নতা মানব জীবনকে করে তোলেছে বিপর্যস্ত। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার বিকাসের এই চড়ম যুগে,মাসুষ আবার বোধ করছেÑ প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়াটা হবে মানব স্বাস্থ্য রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়।
প্রিয় পাঠক প্রকৃতির নিরাপদ আশ্রয়ে মানুষ এবং প্রানী জগতের স্বাভাবিক বিকাশ এবং পরিনতিÑমানব সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু মানুষের অতিভোগ স্পৃহা এবং অপ্রয়োজনীয় বিলাস সেই স্বাভাবিক যাত্রাকে ব্যাহত করেছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটিযেছে। প্রকৃতির সম্পদ প্রয়োজনীয় ব্যবহারের বদলে লুন্ঠিত হয়েছে ভোগ চাহিদা পুরুনে। আর এ লুন্ঠনের অপপ্রায়াসে অনুষঙ্গি হয়েছে রাসায়নিক সার বিষাক্ত কীটনাসক,ই-বর্জসহ নানা উপযোগ। প্রকৃতি এ সবের অত্যাচারে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। এ কারনেই করোনা,পঙ্গপাল,কঙ্গো জ্বড় সামনে না জানি কতো কিছু——-!
প্রিয় পাঠক,
যে ছয়টি প্রকৃতিক উপাদানের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিত্যাক্ত লতা পাতা আর আবর্জনা হতে পারে দেশের সোনা। এ আত্মবিশ্বাসের আলোকে প্রকৃতির ছয়টি উপাদান যথাক্রমে,সিরাজী বিজের স্বাশ,বৌতা বা বাউতা পাতা,বাসক পাতা, কালোমেঘের পাতা,শ্বেতদ্রোন ও রিশি মাশরুম। দিয়ে পরিক্ষামূলক একটি প্রাকৃতিক খাবার তৈরি করা যেতে পারে। আর এতে করোনার বিষয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলেও তারা মত প্রকাশ করেছেন। নিন্মে ছয়টি উপাদানের সংক্ষিপ্ত বর্ননা দেয়া হল।
সিরাজী বিজের স্বাশ। মানবদেহের অভ্যান্তরীন ও বায্যিকভাবে ব্যবহারে যে কোন জ্বর ভাইরাস জনিত সমস্যায় প্রাকৃতিকভাবেই ৩ থেকে ৬ ঘন্টায় ভালো প্রতিকার পাওয়া যায়।
বৌতা বা বাউতা পাতা। এটি আমাদের দেশে অত্যান্ত পরিত্যাক্ত অথচ মহা-মুল্যবান ভেষজ। এর অনেক গুনের মধ্যে ফুসফুসের যে কোন সংক্রমনের বিষয়ে যাদুকরী কাজ করে। এর পাতা সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করলে শরীরের অভ্যান্তরে যে কোন সংক্রমন দুর করে শরীরের ্অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি গুলোকে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে।

 

বাসক পাতা। সর্বজন সিকৃত বাসক পাতার রয়েছে অসাধারন কিছু ভেষজ গুনাবলী। এর নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। বাসক দেহের বিভিন্ন রোগ ছাড়াও পানির জীবাণু মুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়।
কালোমেঘ।এ ভেষজ উদ্ভদি স্থানভেদে আলাদা পরিচিতি আছে। কালমেঘ ঔষধী গুনাগুন সমৃদ্ধ । মানব দেহের বিভিন্ন জটিল রোগের কাজ করে। এর বাইরেও কালমেঘের পাতায় রয়েছে যে কোন জ্বড় ভালো করা এবং জীবানুরোধ করার কার্যকরী ক্ষমতা।
শ্বেতদ্রোণ। একে দন্ডকলসও বলে । ওষুধি গুণসম্পন্ন ও পাতাশাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শ্বেতদ্রোণ দেশের বিভিন্ন সমতল এলাকার পরিত্যাক্ত ভাবে জন্মে। পরিপক্ব গাছে ধবধবে সাদা রঙের ফুল হয় এবং ফুলে মধু হয়। ভেষজ চিকিৎসায় শ্বেতদ্রোণের পাতা ও শাখা প্রশাখা ব্যবহৃত হয়। পাতায় গ্লুকোসাইডস, ট্যানিন, স্যাপোনিন স্টেরোলস ও বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মতে, ছোট শিশুদের সর্দি, কাশি, কৃমি হলে এই শাক ভেজে খাওয়ালে নিরাময় হয়। আবার এই গাছের পাতার রস বুকে মালিশ করে দিলে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায়। শরীরের বাত রোগজনিত ব্যথা অনুভব হলে এই শাক ভেজে খেলে সেই ব্যথা ভালো হয়। এর মধ্যেও জিবানু ধ্বংশ করার প্রাকৃতিক উপাদান আছে।
রিশি মাশরুম। সমগ্র বিশ্বে রিশি মাশরুম সুপার ন্যাচারাল ফুড হিসেবে সর্বজন সিকৃত। বিভিন্ন জটিল রোগের পাশাপাশি ক্যান্সার,এইডসের মত রোগে ব্যাবহারে গুরত্বপূর্ন ফল পাওয়া গেছে। রিশি মাশরুমে ট্রাইটারপিন নামের একটি উপাদান এইডস রোগে ব্যবহৃত হচ্ছে। রিশি মাশরুমে লিংকজাইÑ৮ নামে একটি উপাদান আছে যাহা জিবানু ধ্বংস করতে অপ্রতিদন্ধি প্রাকৃতিক উপাদান। বর্তমানে এটি হোপাটাইটিস-বি ভাইরাসে ব্যবহার করেও ভালো ফল পাওয়া গেছে। রিশির গুনের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। রিশি মাশরুম পৃথিবীব্যাপী অপ্রতিদন্ধি সুপার ন্যাচারাল ফুড সিকৃত এবং পরিক্ষিত।
ঔষধি গাছের সফল চাষী রবিউল হোসেন বলেন,বাংলাদেশের পরিত্যাক্ত লতা পাতা আর অবর্জনা হতে পারে দেশের সোনা। আসলে প্রকৃতির কথা সংক্ষেপে বলার অবকাস নেই। দুঃখের বিষয় হল আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন গবেষনাগার না থাকায় আমরা অনেক লসে আছি। যাহাও আছে তাহা অপ্রতুল এবং পরনির্ভর। এসব প্রকৃতির উপাদান দিয়ে করোনার বিষয়টির সমাধান খুজলে একটা ভালো রেজাল্ট আসতে পাড়ে।
শতবর্শী আলেয়া বেগম ও রিজিয়া বেগম বলেন তোমাদের এসব করোনা মরনা বুঝি না। জীবনের এত সময় কাটিয়ে দিলাম কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়নি। তবে অসুখ বিসুখ হয়েছে আর সে গুলো লতা পাতা খেয়েই সারছি। তোমাদের করনা মরনা বুঝিনা তবে তোমরা যা বলেছ এটা ছোয়াছে রোগ এ ক্ষেত্রে উল্লেখিত ঔষধি গাছের সাথে নিম গাছ নিয়ে গবেষনা করে দেখতে পার।
মজিবুর রহমান নামে একজন ভেসজ চিকিৎসক বলেন প্রায় ৫০ বছর গাছ পালা লতা পাতা দিয়ে মানুষের সেবা করে আসছি। আমার আত্মবিশ্বাস উল্লেখিত প্রাকৃতিক উপদানে করোনার বিষয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে বিষয়টি সব মহলের ভাবা উচিত।
গরীবের ডাক্তার খ্যাত আলতাফ হোসেন কবিরাজ বলেন ৭০ বছর ধরে লতাপাতা ও গাছ পালা দিয়ে মানুষের বিভিন্ন জটিল রোগের সেবা দিচ্ছি। সে আলোকে বলতে পারি উল্লেখিত প্রাকৃতিক উপদান নিয়ে একটু গভীরে যান সফলতা আসবে বলে মনে করছি। আমাদের পুথিগত বিদ্যা অপ্রতুল হলেও বাস্তব কর্ম যীবনে প্রকৃতিতে অবিস্বাশ্য কিছু পেয়েছি। তবে এই মুহুর্তে যারা সুস্থ আছেন তারা নিয়মিত নিমের ডালা দিয়ে মেসওয়াক করুন এবং নিয়মিত উষœ গড়ম জলে লেবুর রস ও এক চিমটি হলুদের গুড়া মিশিয়ে দিনে ২বার বা তিনবার গলগরা করুন। রাতে শোয়ার আগে অবশ্যই করুন দেকবেন প্রকৃতির উপকারিতা।
প্রবীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের পন্ডিত অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরী বলেন, প্রকৃতি আমাদের দেশে পর্দার অন্তরালে থাকা একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। করোনার এই চড়ম ক্রান্তিলগ্নে উল্লেখিত প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে আমি একটু হলুদ ও জাতি নিম বা কারী পাতা যোগ করতে চাচ্ছি। তবে এ বিষয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যারা গবেষনা করছেন, তাদের এ বিষয়ে গবেষনা করে সব উপাদান গুলোর সমন্নয়ে একটা প্রাকৃতিক খাবার তৈরী করে করোনা আক্রান্তদের প্রয়োগ করতে পারেন। আর এতে অনেক সু-খবর বেড়িয়ে আসবে বলে আশা করি। তবে এ গবেষনায় সময় অর্থ সবই সাশ্রয়ী। ন্যাচারোপ্যাথীর বাইরে যে কোন গবেষনা ব্যায় বহুল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর তা সরাসরি মানব দেহে প্রয়োগ করা যায় না। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ফুড সাবলিমেন্ট সরাসরি মানব দেহে প্রযোগ করা যায়, কোন পার্শপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না। উপরে বর্নিত প্রাকৃতিক উপাদান যে কোন সংক্রমন রোগে আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থতায় ভালো কাজ করবে। সুস্থদেরও প্রতিসেধক হিসেবে কাজ করবে। তবে কাউকে ছোট না ভেবে আন্তরিকতার সাথে এ বিষয়ে গবেষনা করলে দ্রুত আমাদের একটা অর্জন আসবে এ আশা করা অমূলক নয়। কাউকে ছোট ভাবার অবকাশ নেই কারন অতি সাধারন বস্তুর ভীতর দিয়ে অনেক বড় অর্জন হতে পারে ইতিহাসে এ রকম অনেক নজির আছে।-ahsangnd@gmail.com

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.