বরিশালে মরনব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধক উদ্ভিদ রুকোলা চাষে সফল আহছান
শান্ত পথিক
বরিশাল, ১৩ আগস্ট ২০১৬ (বাসস) : জেলার গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী এলাকায় চাষ করা হচ্ছে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধক ভেষজ গুণসমৃদ্ধ উদ্ভিদ রুকোলা। রুকোলা উদ্ভিদ দিয়ে বিকল্প চা উদ্ভাবন করে বাণিজ্যিকভাবে সফল ভেষজ গবেষক মো. উল্লাহ।
রুকোলা দেশের আবহাওয়ায় চাষ হওয়া প্রথম উদ্ভিদ। ভেষজ গবেষক মো. আহছান উল্লাহ ইতোমধ্যে রুকোলার পাতা দিয়ে রুকোলা বিকল্প চা এবং ডায়াবেটিকের জন্য একটি এনপি নাইন নামে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি করেছেন। যা ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গ্রামের ক্ষুদ্র প্রতিভাবান আহছান উল্লাহকে প্রথম আবিস্কার করেন কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। রুকোলা দিয়ে একটি বিকল্প চা উদ্ভাবন করে চলতি বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু করেছেন মো. আহছান উল্লাহ।
এ ব্যাপারে আহছান উল্লাহ জানান, প্রথম ২০০৬ সালে ইতালী থেকে তার ঘনিষ্ঠজন মোহাম্মদ খোকন মেজর ও ফুয়াদ হোসেনের মাধ্যমে রুকোলার বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর প্রাথমিকভাবে উদ্ভিদটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সফল ভাবে চাষ করা সম্ভব হলেও বর্ষা মৌসুমে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় চাষ করতে হয়। যদিও এটি শীত প্রধান দেশের উদ্ভিদ তার পরেও দেশে এটি বারো মাস চাষ করা সম্ভব। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে রুকোলা উদ্ভিদ দেশে একটি অপার সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য হতে পারে। রুকোলার বীজ দিয়ে ভোজ্য তেল বানানো যায়। যাহা মানব শরীরের জন্য বিশেষ উপকারি তেল। রুকোলার ফুলে মধুও হয়।
তিনি আরও জানান, রুকোলা হচ্ছে সরিষা পরিবারের (ইৎধংংরপধপবধব) একটি বর্ষজীবী, দুর্বলকান্ড ও সবুজ পাতা বিশিষ্ট উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম (ঊৎঁপধ ংধঃরাধ)। ভারত এবং থাইল্যান্ডে এটা (রুকোলা) আরগুলা নামে পরিচিত। বীজই হচ্ছে বংশ বিস্তারের একমাত্র মাধ্যম। রুকোলার উৎপত্তি স্থান হচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। ইতালীতে রুকোলা রোমান কাল থেকে চাষ হয়ে আসছে। তাই ধারণা করা হয় ইতালীতেই রুকোলার উৎপত্তি স্থান।
ইতালী থেকেই পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার লাভ করে এই রুকোলা। বীজ বপনের একমাস পরেই পাতা সংগ্রহ করা হয়। রুকোলার পাতা রসালো, লম্বাটে ও খাঁজযুক্ত। শিকড় ছাড়া এ উদ্ভিদের পাতা, ফুল ও বীজ খাবার উপযোগী। তবে পাতাই খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। রুকোলার সবুজ সতেজ পাতা সরাসরি কাঁচা খাওয়া যায়। রুকোলার স্বাদ হালকা ঝাল এবং ভাজা চিনা বাদামের ফ্লেবার আসে। রুকোলার এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যাহা মানব শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে সফলভাবে কাজ করে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন ও নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বাবলু জানান, রুকোলা উদ্ভিদটি মানব দেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক। এটি ইতালীসহ ইউরোপের অনেক দেশের চিকিৎসকরা ক্যান্সার ও ডায়াবেটিকসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর পরিমানে কাঁচা রুকোলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।