গৌরনদীতে অধ্যক্ষের অপসারন দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
আহছান উল্লাহ,গৌরনদী ।
কলেজ অধ্যক্ষের অপসারন, ৪মাস ধরে বন্ধ থাকা বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবি ও কলেজের অচলবস্থা নিরসন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বরিশালের এ সময় তারা কলেজটির অধ্যক্ষ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিনের বিরুদ্ধে চরম খামখেয়ালীপনা, অনিয়ম ও ব্যাপক দুর্নীতির করেছেন।
শিক্ষক কর্মচারীগন জানিয়েছেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই সময় কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান জামায়াতের রোকন মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন। আওয়ামশীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি জামায়াত ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেন। পরবর্তিতে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কলেজটি সরকারি এমপিও ভূক্ত হয়।
কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ মোয়াজ্জেম সরদার, উদ্যোক্তা-উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক রাসিদা খানম, কলেজের হিসাব সহকারী ইয়াসমিন আক্তার, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী কহিনুর খানম অভিযোগ করেন, ২০০৬ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অধ্যক্ষ নিজে কলেজের টাকা খরচ করে ভাউচার তৈরী করেন এবং নিজে নিজেই ভাউচার অনুমোদন করে ক্যাশ খাতায় লিখে বিপুল পরিমান অর্থ আতœসাত করেছেন। কলেজের ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যগন বিষয়টি জানতে পারলে ২০১৭ সালে তারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের আয়-ব্যায়ের হিসাব নিরীক্ষা করান। সেখানেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ে। গত ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল কলেজের ব্যাবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি অনুমোদনের জন্য জামায়াতে ইসলামী দ্বারা পরিচালিত আল-হেলাল ট্রাষ্ট এর রেজিষ্ট্রেশন নবায়নের নামে গত ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই ব্যাংক থেকে কলেজ ফান্ডের এক লক্ষ টাকা তুলে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন দেখিয়ে ভাউচার তৈরী করে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীকে চাকুরী হারানোর ভয় দেখিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে অধ্যক্ষ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন গত ১৬ সেপ্টেম্বর কলেজ থেকে বেরিয়ে আতœগোপন করেন। সেই থেকে আজ অবধি তিনি আতœ গোপনে আছেন। এতে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তাদের গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্রসহ প্রশংসা পত্র, প্রত্যায়ন পত্র নিতে পারছেনা। সেই সাথে গত ৪মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সরকারি অংশ উত্তোলন করতে পারছেন না। ফলে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থায় একান্ত নিরুপায় হয়ে তারা বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমি কোন দিন জামায়াতের কোন কর্মী বা সমর্থকও ছিলাম না। আমি নিয়মিত আওয়ামীলীগের মিটিং মিছিলে অংশগ্রহন করি। মূলত কলেজের ব্যাবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করানো নিয়ে বিরোধের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ মোয়াজ্জেম সরদার কলেজ ফান্ডের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আতœসাত করেছেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে। এর পর থেকে আমি আর কলেজে যাইনি। তবে বেতন ভাতা তুলতে আমার ও সভাপতির স্বাক্ষর নিতে অনেকবার আমি শিক্ষকদেরকে আমার বাসায় অথবা কলেজ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বাসা বা তার প্রতিষ্ঠানে আসতে বলেছি। কিন্তু তারা আসেনি। তারা আসলে বেতন বকেয়া থাকেনা।
কলেজ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শরীফ মেজবাহ উদ্দিন ফিরোজ বলেন, কলেজটি আল-হেলাল ট্রাষ্টের একটি প্রতিষ্ঠান। ট্রাষ্টটির সরকারি অনুমোদন নবায়ন না থাকায় কলেজের এমপিও এবং ব্যাবস্থাপনা কমিটিও নবায়ন হচ্ছিল না। এ কারনে শিক্ষকদের সাথে পরামর্শক্রমে তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে কাগজ পত্র তৈরী করে ট্রাষ্টটি অনুমোদন করানো হয়। অনুমোদিত ব্যাবস্থাপনা কমিটি পছন্দমত না হওয়ায় কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ মোয়াজ্জেম সরদারের নেতৃত্বে কলেজে অচলাবস্থার পরিবেশ তৈরী করা হচ্ছে।
কলেজ অধ্যক্ষ ও ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতির অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ মোয়াজ্জেম সরদার বলেন, এক বছরে দায়িত্ব নিয়ে আমি কলেজ ফান্ডে ২ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা সঞ্চয় দেখিয়েছি। অথচ ১০ বছরে অধ্যক্ষ কোন সঞ্চয় দেখাতে পারেন নি। আয়ের এ টাকাগুলো গেল কোথায়। তদন্ত হলেই সব বেরিয়ে আসবে।