‘পকেট’কমিটিতে তৎপর জেলা বিএনপি, তৃণমূলের দাবি সম্মেলন

0
(0)

হযরত আলী হিরু,পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের জন্য তৃণমূলের দাবি উপেক্ষা করে ঢাকায় বসে কমিটি গঠন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি পক্ষ। জেলা কমিটির শীর্ষ এক নেতাসহ মঠবাড়িয়ায় বাড়ি দলটির কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না করে একটি ‘পকেট’ কমিটি করার চেষ্টা করছেন বলে দলের স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে উপজেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দিলওয়ার হোসেন মুন্সী সভাপতি ও রুহুল আমিন দুলাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্প্রতি উপজেলা বিএনপির সম্মেলন করার জন্য পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড ও ১১টি ইউনিয়নের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উপজেলা কমিটি সম্মেলনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে জেলা কমিটির কাছে তারিখ দেওয়ার অনুরোধ করেছে। কিন্তু জেলা কমিটির সভাপতি রহস্য জনক কারণে সম্মেলন না করে ঢাকায় বসে একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। মঠবাড়িয়ায় বাড়ি বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা জেলা কমিটিকে প্রভাবিত করে সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না করায় ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি দিলওয়ার হোসেন মুন্সী ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন দুলাল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। খালেদা জিয়া দলের মহাসচিবকে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কিন্তু চেয়ারপারসনের নির্দেশর পরেও সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করছেন না জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নূরুজ্জামান বাবুল। বিএনপির উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও আইনি লড়াইয়ে নেতা-কর্মীরা যাদেরকে সব সময় পাশে পেয়েছেন তাদেরকে দিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য কমিটি চান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের মতামত ছাড়া যে সকল নেতারা মাঠে থাকেন না তাঁদের দিয়ে কমিটি করা হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির কয়েক জন নেতা বলেন, জেলা কমিটির এক শীর্ষ নেতা টাকার বিনিময়ে তার পছন্দের লোকদের নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করতে চাচ্ছেন। সাপলেজা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদ নাসির খান বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে ঢাকায় বসে উপজেলা কমিটি গঠন করা হলে আমরা মেনে নিব না। আমরা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা আছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দুলালসহ দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাভোগ করেছে। রুহুল আমিন দুলাল ভাই জমি বিক্রি করে নেতা-কর্মীদের মামলা চালাচ্ছেন। অথচ কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা, যাদের আন্দোলনের সময় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পাশে পাননি। তাঁরা এখন ঢাকায় বসে পকেট কমিটি করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক বাদল বলেন, কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা আছেন যারা ঢাকায় থাকেন। মঠবাড়িয়ায় আসেন না। বিগত উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময় তাঁদেরকে মাঠে দেখা যায়নি। আন্দোলন ও নেতা-কর্মীদের মামলা থেকে জামিনের সময় খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ওই সকল নেতারা এখন উপজেলা বিএনপির কমিটির পদ পদবি পেতে সরব হয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলায় চার হাজার নেতা-কর্মী আসামি হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী নির্যাতিত হয়েছেন ও জেল খেটেছেন। তখন ঢাকার নেতাদের পাশে পাওয়া যায়নি। এখন ঢাকায় বনে ওই নেতাদের মত করে কমিটি গঠন করা হলে তা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা রুখে দিবেন। মঠবাড়িয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন উর রশিদ বলেন, যারা ঢাকায় বসে কমিটি করতে চান তাঁদের আমরা কখনোই মাঠে পইনি। আমাদের কয়েকশ নেতা-কর্মী করাভোগ করেছে। তখন ওই সকল কেন্দ্রীয় নেতারা কারাগারে আমাদের এক বার দেখতেও যাননি। অথচ এখন তাঁরা পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন দলের সকল কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে আন্দোলনে যারা মাঠে ছিলেন কমিটি গঠনে তাঁদের যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের দাবি হল কমিটি গঠনে যেন তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা না করা হয়। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন দুলাল বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন সম্মেলনের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সম্মেলনের সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে একটি মহল যারা নেতা-কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন না। অথচ পদ পদবি পেতে চাচ্ছেন। ওই পক্ষটি সম্মেলন না করে ঢাকায় বসে কমিটি গঠনের পায়তারা চারাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি দিলওয়ার হোসেন মুন্সী বলেন, আমার বয়স ৯৮ বছর। আমি জাগদল থেকে বিএনপির করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বলেছি একটি সম্মেলনের মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য কমিটি গঠন করে বিদায় নিতে চাই। নেত্রী আমার কথা শুনে সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু জেলা বিএনপির সভাপতি সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না করায় সম্মেলন করা যাচ্ছে না। পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নূরুজ্জামান বাবুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্র চিঠি পাঠানো হবে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.