জমি-কৃষক ছাড়াই কৃষি বিপ্লব !

0
(0)

ফলমূল ও সবজি মাঠে চাষ করেন না ইয়ুচি মোরি। তাঁর ক্ষেত্রে আসলে মাটি বলে কোনো জিনিস নেই। বরং এই জাপানি বিজ্ঞানী চাষাবাদের জন্য এমন একটি জিনিসের ওপর নির্ভর করেন, যেটি আসলে মানুষের কিডনির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হতো; আর তা হছে পরিষ্কার ও সহজ ভেদ্য পলিমারের ঝিল্লি। ওই ঝিল্লির ওপরে উদ্ভিদ বড় হয়ে ওঠে, যা তরল ও পুষ্টি মজুদ করে রাখে।

যেকোনো পরিবেশে সবজিগাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এ প্রযুক্তি প্রচলিত কৃষিকাজের তুলনায় ৯০ শতাংশ কম পানি ব্যবহার করে। সেই সঙ্গে কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না। কারণ পলিমার নিজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র, যা দিয়ে ভূমি ও কর্মশক্তির ঘাটতিতে থাকা জাপান কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছে।

ইয়ুচি মোরি বলেন, ‘কিডনি ডায়ালিসিসের কাজে যে ঝিল্লি ব্যবহার করা হতো, আমি সেসব বস্তু এখানে ব্যবহার করছি।’ তাঁর কম্পানি মেবাইওল প্রায় ১২০টি দেশে এই আবিষ্কারের পেটেন্ট বা স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করেছে। ইয়ুচি মোরির আবিষ্কৃত কৃষিপদ্ধতি এরই মধ্যে জাপানের ১৫০টি এলাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আরব আমিরাতের মতো অনেক দেশ এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।

জাপানের মাঠগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট আর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একেকটা টেকনোলজি সেন্টারে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতে ভালোভাবে ফসলের নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেবে।

ধারণা করা হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি থেকে বেড়ে ২০৫০ সাল নাগাদ ৯৮০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। ফলে বিশ্বের খাদ্য চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে বড় ব্যাবসায়িক সুযোগ হিসেবে দেখছে কম্পানিগুলো; পাশাপাশি যন্ত্রপাতির বড় বাজারও তৈরি হচ্ছে।

বর্তমানে ২০ ধরনের রোবট তৈরির ব্যাপারে ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করছে জাপানের সরকার, যেগুলো কৃষিকাজের নানা পর্যায়ে সহায়তা করতে পারবে। নানা ধরনের ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহের কাজ করবে এসব রোবট।

হাক্কাইডো ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে মেশিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইয়ানমার একটি রোবট ট্রাক্টর তৈরি করেছে, যেটি এরই মধ্যে ক্ষেতে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি একই সময়ে দুটি ট্রাক্টর চালাতে পারবে। সেন্সরের কারণে এসব ট্রাক্টর সামনে বাধা শনাক্ত করতে পারে এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে যেতে পারে।

এ বছরের শুরুর দিকে গাড়ি নির্মাতা নিশান সৌরশক্তিচালিত একটি রোবট তৈরি করে যেটিতে জিপিএস ও ওয়াইফাই রয়েছে। ডাক নামের ওই বাক্স আকৃতির রোবটটি বন্যার শিকার হওয়া ধানক্ষেতে ঢুকে পানি নিষ্কাশন, কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস আর পরিবেশগত প্রভাব নির্ণয়ে সহায়তা করেছে। সূত্র : বিবিসি।কালের কণ্ঠ

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.