আগৈলঝাড়ার সার্বজনীন পূজা বারপাইকার সু-দৃশ্য তোরণ আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল
ব্যাপক আয়োজনে দেশের সবচেয়ে বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। পাঁচটি ইউনিয়নের পুজা মন্ডপের সংখ্যা ১৫৪টি। মঙ্গলবার দশমী তিথিকে প্রতীমা বিসর্জনের মদ্য দিয়ে পুজার আচার শেষ হয়েছে। এবছর দর্শনার্থীদের মধ্যে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে বারপাইকা সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সুদৃশ্য তোরণ, দেবাদিদেব মহাদেবের স্থাপন করা বিশাল মূর্তির নীচ দিয়ে সুরঙ্গ পথে প্রবেশ ও পুজা মন্দির থেকে বের হবার পথে পদ্মা সেতুর আদলে নির্মিত ১৫০ফুট দীর্ঘ সেতু। এই সুরঙ্গ পথের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে কৃত্তিম পাহাড় ও বিভিন্ন দেব-দেবীর মুর্তি।
বারপাইকা গ্রামের যুব সমাজের উদ্যোগে নয়নাভিরাম সুদৃশ্য নির্মাণ শৈলীর কাজ করেছেন এলাকার তিন হাজার স্বেচ্ছা শ্রমে শ্রমিক। পুজার দুই মাস আগে থেকে তারা কাজে লেগেছেন। তাদের সেই শ্রম সার্থক করেছে স্থনীয় দর্শনার্থীই নয়; ভারত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভূয়ষী প্রসংশায়।
প্রতিদিন আগৈলঝাড়াসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলার হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভীর করছেন বারপাইকা কেন্দ্রীয় সার্বজনীন পূজা মন্ডপের নয়নাভিরাম তোরন দেখার জন্য।
মন্দির কমিটির সভাপতি নিহার রঞ্জন রায় জানান, ১৯৬৭ সাল থেকে রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামে সার্বজনীন দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বারপাইকা যুবসমাজের উদ্যোগে গত সাত বছর যাবৎ বাহারী ভিন্ন রকমের আয়োজনে পুজার ব্যাপকতা লাভ করছে। এবছর দূর্গা পূজা উপলক্ষে দুই মাস আগে থেকে মন্দিরের সামনে সুদৃশ্য তোরন বা গেট নির্মানের কাজ শুরু করে এলাকাবাসী। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন যুবক থেকে চার হাজার স্বেচ্ছা শ্রমে তিল তিল করে দিনে ও রাতে বাঁশ, কাঠ, কাপড় ও কশীটসহ আনুসাঙ্গিক মালামাল দিয়ে দুই মাস কাজ করে নির্মান করেছে আজকে সু-দৃশ্য নয়নাভিরাম তোরণ (গেট), পদ্মা সেতুর আদলে দেড়শ ফুট লম্বা পদ্মা সেতু।
এই সেতুর এক দিকে রেলিংএ রয়েছে প্রধান মন্ত্রীর ভিশন ২০২১ বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র এবং অপর পাশে রয়েছে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন চিত্র।
নির্মান কাজের মূল কারিগর ছিলেন বারপাইকা গ্রামের বিবেক সরকার, প্রিয়লাল বিশ্বাস, হরবিলাস সরকার, গৌরাঙ্গ মন্ডল। প্রতিদিন আগৈলঝাড়া উপজেলঅসহ পার্শ্ববর্তী উজিরপুর, কোটালীপাড়া, গৌরনদী, কালকিনি, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ভুরঘাটা, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকারার হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ভীড় করছেন বারপাইকা পূজা মন্ডপে।
দুদৃশ্য তোরণ দেখতে ভারত থেকে এসেছেন সরস্বতী বেপারী ও রঙ্গলাল বাড়ৈ। তারা নয়নাভিরাম গেট দেখে অভিভুত হয়েছেন বলে জানান। সাথে মন্দির আঙ্গিনায় স›ন্ধার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতক অনুষ্ঠানেও মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানান তারা।
গেট ও পুজা দেখতে আসা পটুয়াখালীর বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী, ঢাকা থেকে আসা পলাশ সরকার বলেন, তারা পুজার সকল আয়োজন দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছেন। বিশেষ করে তোরন।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বাড়ৈ জানান, পূজা উলক্ষে যে আয়োজন হয়েছে তাতে প্রায় ১৫-২০লাখ টাকা খরচ হতো। তবে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় স্বেচ্ছশ্রমে কাজ করায় খরচ অনেক কম হয়েছে। বারপাইকা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজনের সম্পৃক্ততার কতঅ জানিয়ে তিনি বলেন, মন্দিরের সাজসজ্জা ও তোরন নির্মানে ৫ শতাধিক বাঁশ ও ২৫টি গাছ ব্যবহৃত হয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনিল কুমার বাড়ৈ বলেন, ১৫৪টি মন্দিরে পুজার মাধ্যমে বরিশাল বিভাগের তো নিশ্চই; দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা হচ্ছে আগৈলঝাড়ায়। এর মধ্যে বারপাইকা কেন্দ্রীয় সার্বজনীন পূজা মন্ডপে বিগত কয়েক বছর যাবত নয়নাভিরাম আয়োজন করে আসছে। যা সনাতন ধর্মাবম্বী^দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।