হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব ৫ম পর্ব

0
(0)

((মুহম্মাদ আহছান উল্লাহ)) = পূর্ব প্রকাশের পর t হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব। তারঁ গোটা জীবন-ই আমাদের জন্য ইসলামী জেন্দেগী গঠনের এক অনন্য পাথেয়। হুজুর কেবলা (রহ.) যেমন ছিলেন একজন কামেল মুর্শিদ, ওলী, দরবেশ, সূফী সাধক ও আধ্যাত্মিক নেতা, তেমন ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, লেখক ও সংগঠক।প্রজ্ঞায়, পান্ডিত্বে. আধ্যাত্মিকতায়, আদর্শবাদিতায়, সততায়, নিষ্ঠায়, উদারতায়, আমলে, আখলাকে তারঁ মত একজন মহত মানুষ সত্যিই বিরল। তারঁ জীবন ও কর্মই তাঁর বাস্তব প্রমান।পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে কিছু ক্ষণজন্মা মানুষের আবির্ভাব ঘটে। নিঃসন্দেহে মরহুম মাওলানা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন মানুষের এত বহুমুখী প্রতিভার সমনয় ঘটতে আমরা সচরাচর দেখি না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ বা ইনসানে কামিল।
ইসলামী আদর্শের সত্যিকার প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি। তাঁকে দেখলে নজরুলের কবিতার সেই পঙক্তির কথা মনে পড়ে ইসলাম সে তো পরশমানিক কে তারে পেয়েছে খুঁজি, পরশে তাহার সোনা হলো যারা তাদেরই মোরা বুঝি।’ তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে ইসলামের মহত্বের পরিচয় পাওয়া যেত, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশালতা প্রতিভাত হত।
জীবনের প্রতিটি স্তরে ছিল তাঁর সফল বিচরণ, প্রত্যেক স্তরে রেখে গেছেন তাঁর নিজস¦তা। আর এ নিজস¦তাই করেছে তাঁকে অন্য সকলের চেয়ে ; মানবকল্যাণের যে মহান ব্রত নিয়ে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে সে মানবকল্যাণই ছিল তাঁর প্রত্যেক কর্মের গন্তব্য। আর এ কারণেই ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে সব মানুষের জন্য তাঁর দ্বার ছিল উন্মুক্ত এবং সব শ্রেণীর মানুষও হয়েছে তাঁর ভক্ত ও অনুরক্ত। মানবীয় গুণাবলীর সমন¦য় ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। তিনি ছিলেন উদার, সদালাপী, পরমত সহিষ্ণু, নিরহংকার, বিনয়ী, জ্ঞানী, পরোপকারী, অতিথিপরায়ণ, অধ্যাবসায়ী, দানশীল, ক্ষমাশীল ও আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি ছিলেন সত্যিকারের মুমিন।
কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পথেই তিনি তাঁর জীবন পরিচালিত করেছেন। পার্থিব ও আধ্যাত্মিকতার এক অপূর্ব সমন¦য় ঘটেছিল তাঁর জীবনে। সকল হক ছিলছলার শায়েখদের প্রতি হুজুরের মহব্বত ঃ
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) বাংলাদেশের সকল হকছিলছিলার শায়খদেরকে মহব্বত করতেন এবং তাঁদের দরবারে যেতেন। বিশেষ করে আমাদের সু-পরিচিত ও প্রবীন ছিলছিলা, জৌনপুর, বাহাদুরপুর, ফুরফুরা ও চরমোনাইর পীর ছাহেবদের সাথে হুজুর কেবলার সাথে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হুজুর বহুবার তাঁদের দাওয়াতে মাহফিলে গিয়েছিলেন এবং তাঁরাও হুজুরের আহ্বানে তাঁর বাড়ীতে বহুবার এসেছেন। হুজুর পীর-মাশায়েখ ও ওলামায়েকেরামদের ঐক্যবদ্ব করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তা সফল করার উদ্দেশ্যেই সকল হক ছিলছিলার শায়খদের দরবারে গিয়েছিলেন এবং তাদেরঁকে এব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ফুরফুরা শরীফের পীর মরহুম হযরত মাওলানা আব্দুল কাহার সিদ্দিকী (রহ.) হুজুরকে এত ভালবাসতেন যে, যখনই তিনি এই এলাকায় আসতেন, তখনই নেছারাবাদে তাশরীফ আনতেন। নেছারাবাদ দরবারকে তিনি নিজ দরবারের মত মনেকরতেন।
নেছারাবাদের এক মাহফিলে ফুরফুরার পীর ছাহেব কেবলা হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরকে তাঁর খলীফা হিসেবে ঘোষণা করেণ।
জৌনপুরের পীর হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ জৌনপুরী (রহ.) ও হযরত মাওলানা জালিছ মাহমুদ জৌনপুরী (রহ.) তাঁরাও হুজুর কেবলার দাওয়াতে নেছারাবাদ দরবারে তাশরীফ এনেছেন এবং দোয়ার মাহফিলে আলোচনা করেছেন।
হুজুর কেবলার আব্বা বাহাদুরপুরের খলীফা ছিলেন। এ কারনে বাহাদুরপুরের পীর ছাহেবও নেছারাবাদে বহুবার এসেছেন। বিশেষ করে পীর দুদুমিয়া ও পীর দাদনমিয়ার সঙ্গে হুজুর কেবলার খুব মহব্বত ছিল। বৃদ্ধ বয়সেও তাঁরা হুজুরের দাওয়াতে নেছারাবাদের মাহফিলে উপস্থিত হয়েছিলেন।
চরমোনাইর মরহুম পীর হযরত মাওলনা মুহাঃ ফজলুল করীম (রহ.) হুজুরকে খুব মহব্বত করতেন। হুজুর কেবলার দাওয়াতে তিনি নেছারাবাদের মাহফিলে একাধিকবার এসেছেন। হুজুর বাংলাদেশের যেখানেই সফরে যেতেন, সেখানে সে এলাকার হক্কানী পীর ছাহেবদের দরবারে যেতেন। আর তাঁরাও হুজুরকে পেয়ে খুবখুশী হতেন এবং আন্তরিক ভাবে হুজুরের খেদমত করতেন।
হুজুর একবার আটরশি দরবারে গিয়েছিলেন। এসময় হুজুরের সাথে মাদরাসার শিক্ষক ছাত্র ও ভক্ত বৃন্দ সহ প্রায় শতাধিক লোক ছিল। হুজুর সেখানে দুই তিন দিন অবস্থান করেছিলেন। পীর ছাহেব কেবলার সাথে হুজুর একান্তে বৈঠকে বসেছেন। পীর ছাহ্বে হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরকে খুব তাজিম তাকরীম করেছেন। হুজুর সেখানে অবস্থানকালীন সময় যাতে সেখানের কেউ হুজুরের সাথে কোন প্রকার বেয়াদবী বা অসৌজন্য মুলক আচরণ না করেন এ ব্যাপারে পীর ছাহেব মাইকে তাঁর সকল মুরীদ ও ভক্তদেরকে সর্তক করেদিয়েছিলেন। হুজুর সেখানে পৌছার সাথে সাথে আটরশির পীর ছাহেব তাঁর মুরিদ ও ভক্তদেরকে মাইকের মাধ্যমে এভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, “ বাবারা! আমার দরবারে আল্লার এক খাছ ওলী এসেছেন। তাঁর সাথে কেউ কোন প্রকার বেয়াদবী করবেন না। তিনি যতক্ষন এখানে থাকবেন আপনারা তাঁর খেদমত করবেন এবং তাঁর থেকে দোয়া নিবেন।” এসময় হুজুর কেবলার সাথে তাঁর একমাত্র ছাহেবজাদা মাওঃ মোঃ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর ছিলেন। সেখান থেকে বিদায়ের পূর্ব মুহুর্তে আটরশির পীর ছাহেব জনাব মাওঃ খলীলুর রহমান নেছারাবাদীকে ডেকে বললেন “ আপনার আব্বা একজন উঁচু পর্যায়ের ওলী। তাঁর এই লোকালয়ে থাকার কথা না। কিন্তু আল্লাহ তা’লা মেহেরবাণী করে তাঁকে আপনাদের কাছে রেখেছেন। আপনারা তাঁর প্রতি খুব খেয়াল রাখবেন।তথ্য সূত্র নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্ট ঝালকাঠি। চলবে

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.