আহছান উল্লাহ : আমরা এমন অনেক খাবার খাই, যা বেশ স্বাস্থ্যকর মনে করেই খাই।  আসলে কিন্তু সেগুলো থেকে আপনার মৃত্যুও হতে পারে অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে।  জানেন কি সেগুলো কী কী খাবার ? এমন খাবার আছে, যা আপনার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।  এই খাবারগুলোয় এতটাই বিষ থাকে, যা বেশ কিছুটা তাপে না দিলে বা ফুটিয়ে না নিলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে।  জেনে নিন সেগুলো কী কী?

আপেল

বলা হয় একদিনে একটা আপেল খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।  কিন্তু জানেন কি, এই আপেলের গায়ে মোম লাগানো থাকে? বাজারে বিক্রির আগে, আপেলগুলোকে আরও বেশি চকচকে করে তুলতে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সস্তার মোমের প্রলেপ দেওয়া হয় আপেলে, তাই সবসময় আপেল খাওয়ার আগে ভালো করে জল দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে নিতে হবে।  তাছাড়া আপেলের বীজ সায়ানাইডের মতোই বিষাক্ত।  অনেকগুলো একসাথে খেয়ে ফেললে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে আপনার।  তাই আপেল খাওয়ার সময় একটু সাবধানি হওয়াই ভালো।

মধু

সকালে ওঠা থেকে রাত অবধি বারবার আপনি চামচে করে মধু নিয়ে নিয়ে খান? জানেন তো সেটা আদৌ প্রসেসড করা কি না? না জানলে খাবেন না।  আনপাস্তুরাইজ়ড মধুতে পাইরোলাইজ়িডিন উপক্ষার থাকে।  যা আপনার ক্যানসার বাধাতে পারে, লিভারের সিরোসিসও বাধাতে পারে অনায়াসেই।  কাজেই এই দুই বিপদ এড়াতে মধু খাওয়ার সময়ে নিশ্চিত হয়ে খান সেটা প্রসেসড মধু কি না।

 

টোম্যাটো

যে কোনও রান্না হোক বা কাঁচা স্যালাড, প্রচুর পরিমাণে টোম্যাটো অনেকেই পছন্দ করেন।  কিন্তু সাবধান! কোনওভাবেই ওতে টোম্যাটোর পাতা যাতে না চলে যায়।  কারণ তাতে আছে গ্লাইকোক্যালয়েড নামের বিষাক্ত যৌগ।  এই যৌগ আপনার পেশীতে টান, পেট খারাপ, অস্থিরতা ইত্যাদি সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে।  তাই টোম্যাটো খাওয়ার সময়ে সাবধান আপনাকে হতেই হবে।

আলু

দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে আলু চাষে প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক দফা রাসায়নিক আর কীটনাসক প্রয়োগ করা হয়। এক কথায় বলতে পারেন রাসায়নিক আর কীটনাসকের মাঝেই আলুর জন্ম।এ ছাড়া সোলানাইন নামক বিষাক্ত যৌগ থাকে আলুর পাতা এবং কাণ্ডে।  জানি আমরা এগুলোর একটাও খাই না।  তবে আলুতে অনেক সময় বেশ কিছু সাদা সাদা অংশ বেরোতে দেখা যায়, তা থেকে অনেকেই বলেন আবারও আলু গাছ জন্মাতে পারে।  তাই সেই অংশ গুলো ফেলে দেবেন।  নয় তো ফ্রেঞ্চফ্রাই হোক বা আলুর তরকারি বিপদ তো দোরগোড়ায় থাকবেই।

জায়ফল

অনেকেই বাহারি রান্নাতে জায়ফল দেন।  সেই জায়ফল কখনও কাঁচা বা গুঁড়ো করে কেমন খেতে লাগে, চেখে দেখতে যাবেন না।  খাবারে দারুণ গন্ধ, মিষ্টি-মিষ্টি স্বাদ আনে যে ফল, তাতেই আপনার বমি, পেট খারাপ ইত্যাদি হতেই পারে যদি কাঁচা খান এটি।

মাশরুম

খুব ভালোবাসেন মাশরুম? তা বলে যেখান থেকে তুলে খেয়ে ফেলবেন না এটা।  ‘অ্যামানিটা ভিরোসা’ প্রজাতির মাশরুম আপনাকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।  যদিও ঠিকঠাক মাশরুমে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন থাকে, সেটা আমরা জানি।  কিন্তু সঠিক মাশরুম আপনাকে বেছে নিতে হবে।  হাজারেরও বেশি প্রজাতির মাশরুম থাকতে পারে সারা পৃথিবী জুড়ে।  কিন্তু ঠিকঠাক প্রসেসড যে মাশরুম বাজারে বিক্রি হয়, সেটাই কিনবেন।  কিডনি থেকে পেটের সমস্যার দিকে অযথা ছুটে যাবেন না।

ধনেপাতা

ধনেপাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুবই ভালো সোর্স অবশ্যই।  কিন্তু এতে এত বেশি পরিমাণে কীটনাশক থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের সুরাহার বদলে অবশ্যই শরীর খারাপ করে দিতে পারে।  তাই ধনেপাতা রান্না করুন বা কাঁচা দিন কিছুতে, অবশ্যই ধুয়ে নেবেন ভালো করে।

কাঁচা মাংস

মাংস ভালো করে রান্না করে না খেলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে আপনার।  শুধু মাংসই নয়, কাঁচা অবস্থায় যে কোনও সি ফুড হোক বা পোল্ট্রির খাবার তাতে থাকে সালমোনেলার মতো ব্যাকটিরিয়া।  এগুলো আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।  তাই চেষ্টা করুন, খুব ভালো করে রান্না করে তবেই এই জিনিসগুলো খেতে।

পোটকা মাছ

জাপানের খাবারে এটা বেশ ডেলিকেসি ফুডের আওতায় পড়ে।  কিন্তু এতে প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে ঠিক করে রান্না করে না খেলে।  এই মাছ রান্না করার আগে, সঠিকভাবে পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে।  এর শরীরের ভিতরের অংশগুলো বেশ বিষাক্ত, তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে সচেতন হতে হবে।এবং টোটাল মাথার অংশ ফেলে দিয়ে রান্না করে খান।

চিনা বাদাম

বেশ হাতে হাত, গল্প চলছে।  আর একটা দুটো করে চিনে বাদাম আপনারা খেয়ে চলেছেন।  কিন্তু এতে আপনার অ্যালার্জি নেই তো ? হ্যাঁ, সেটা জেনে খাবেন।  কারণ এই বাদামে যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা বেশি মাত্রায় খেলে শিরা ধমনী ব্লক হয়ে যেতে পারে।  অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন আপনি।  তাই একটু বুঝে খেতে চেষ্টা করুন।

ব্লু বেরি

যদিও এ খাবারটি আমাদের দেশে বেশী একটা প্রচলন নাই। যে ভাবে ধনেপাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর, সেরকমই ব্লুবেরিতেও থাকে।  কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক দেওয়া হয়, এর ফলন বাড়ানোর জন্য।  কিন্তু প্রায় ৫২ রকমের কীটনাশক ব্যবহার করা ব্লুবেরি আপনি যদি ঠিক করে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে না খান, তাহলেই বিপদ । অতএব এই খাবারগুলো খাওয়ার সময়ে অবশ্যই সাবধানতা, সচেতনতা বজায় আপনাকে রাখতেই হবে।