রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা শিবিরে

0
(0)

স্টাফ রিপোর্টার
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নতুন করে গড়ে ওঠা ১২টি রোহিঙ্গা শিবিরে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছে রোহিঙ্গারা। কয়েকটিতে টয়লেট থাকলেও তা অপ্রতুল। এতে তীব্র দুর্গন্ধে বিষিয়ে উঠেছে চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেখানে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাদুর্ভাব ঘটেছে নানা রোগ-ব্যাধির। বর্তমানে লাখো রোহিঙ্গা শিশু ও নারী নানা রোগে আক্রান্ত। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, জন্ডিসসহ নানা রোগে আক্রান্তের পাশাপাশি নারীরা এইডসসহ নানা রোগে ভুগছেন বলে জানা গেছে। এসব নারী ও শিশু পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিন ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের একটি বিচ্ছন্নতাবাদী সংগঠন পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে একসঙ্গে হামলা চালানোর পর থেকে মিয়ানমারের মগ সেনা ও বর্ডার গার্ড পুলিশের রাখাইনের রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা, তার মধ্যে গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়িতে আগুন এবং সর্বশেষ দেশটি থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করাসহ নানাবিধ নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে সুচি সরকারের সেনারা। খাদ্যাভাব, অবরুদ্ধ অবস্থা, গণহত্যা থেকে বাঁচতে গেল এক মাসে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে। এ অনুপ্রবেশ এখানো অব্যাহত রয়েছে। রাখাইন থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসতে গিয়েও নাফ নদীর মোহনায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। তার পরেও নাফ নদী পার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা পালিয়ে আসছে। গেলে এক মাসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি স্থানে গড়ে উঠেছে নতুন রোহিঙ্গা শিবির। এসব শিবিরে খাদ্য সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
হোয়াইক্যংয়ের রইক্ষ্যংয়ের নতুন রোহিঙ্গা শিবিরে হাত-মুখ ধোয়া, শৌচ সব কিছুর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রইক্ষ্যং খালের পানি। রোহিঙ্গারা মলমূত্র ত্যাগ করছে খোলা জায়গায়। খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে ডায়রিয়া, আমাশয়, চোখ ওঠাসহ নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি দেখা দিয়েছে।
এ শিবিরের মিয়ানমার কুমিরখালী এলাকার ফাতেমা খাতুন (৪৫) জানান, এখানে তেমন কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ছড়ার ঘোলা পানি খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এতে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বাসিন্দারা।
শীলখালী এলাকার নুর আহমদ (৫৫) বলেন, এখানে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে ড্রাম ভর্তি পানি আনা হয়। কিন্তু প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গার জন্য তা অপ্রতুল।
পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন জানায়, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি তাদের জীবন ধারণে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।
উনচিপ্রাংয়ের বাসিন্দা মুহাম্মদ তাহের নঈম জানান, রোহিঙ্গারা নানাবিধ রোগে আক্রান্তের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যেও নানাবিধ রোগ ছড়াতে শুরু করেছে। দ্রুত এ অবস্থা নিরসনে এগিয়ে না এলে কক্সবাজার জেলাজুড়ে রোগ-ব্যাধি মহামারি আকার ধারণ করবে।
ইউপি সদস্য আবদুল বাসেত জানান, দুর্গম এলাকা পুটিবনিয়ায় দ্রুত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা জরুরি। বিশুদ্ধ পানিরও ব্যবস্থা করা দরকার বলেও জানান তিনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক মনজুর কাদির আহমেদ রোহিঙ্গাদের নানা রোগ-ব্যাধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রইক্ষ্যংয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি তার মেডিকেল টিমের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, হঠাৎ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।
এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করায় দ্রুত গতিতে রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, রোহিঙ্গাদের মলে জীবাণু পাওয়া গেছে। জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে পুরো কক্সবাজার জেলায়। তখন সামাল দেয়া দায় হয়ে পড়বে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.