শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের একজন: ফাতিমা (রাঃ)

0
(0)
ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কনিষ্ঠ এবং প্রিয়তমা কন্যা।[১] একটি বড় ঘটনা সমগ্র মক্কা নগরীকে আন্দোলিত করেছিলো এবং এর কারণে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার উপক্রম হয়েছিলো। সে বছরেই ফাতিমা (রাঃ) জন্মেছিলেন। এটা ছিলো কা’বা পুনর্নির্মাণ করার সময়ের ঘটনা। আবু ওয়াহাব আল মাখযুমী এই ঘটনা সংক্রান্ত একটি কবিতা রচনা করেন, যার অর্থ নিম্নরূপ:

“গোত্রগুলো একটি উত্তম পরিকল্পনার ব্যাপারে একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়েছে;

এবং এই বিবাদ সুখের পর প্রায় দুর্ভাগ্যই ঘটিয়ে দিয়েছিলো।

এই কারণে, পারস্পরিক ভালোবাসা, পারস্পরিক ঘৃণায় প্রতিস্থাপিত হলো এবং যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠলো।

যখন আমরা লক্ষ্য করলাম অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং লোকেরা তাদের তলোয়ারগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে উত্থাপন করছে;

আমরা সম্মত হলাম এই সালিসির ভার তাঁকে দেওয়া উচিৎ যে ব্যক্তি কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই প্রথমে প্রবেশ করবে;

অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে প্রবেশ করে মুহাম্মাদ, যে পরম বিশ্বস্ত, এবং আমরা বললাম, আমরা বিশ্বাসযোগ্য মুহাম্মাদের প্রতি সন্তুষ্ট।

সমগ্র মক্কা নগরী উপলব্ধি করলো মুহাম্মাদ তাদের বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছে এবং কালো পাথর বহন করার সম্মানে অংশগ্রহণ করতে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন নেতা নির্বাচন করে দিয়েছিলো।

যেন সকল গোত্রই এটি বহন করেছিলো।”

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমার ডাকনাম রেখেছিলেন আয-যাহ্‌রা (চমৎকার একজন)।[২]

ফাতিমা (রাঃ)-এর সম্পর্কে আইশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর সাথে তাঁর চোখে পড়ার মতো সাদৃশ্য ছিলো। তাঁর কথা বলার ধরন, উঠাবসা, চালচলন- এক কথায় তাঁর সবরকম আচরণ এবং পদক্ষেপ হুবহু রাসূল (সাঃ) এর মতো ছিলো।”[৩]

ফাতিমা (রাঃ) পিতার অত্যধিক ভালোবাসা এবং মাতার আদর যত্নে বেড়ে ওঠেন। যেহেতু ফাতিমা (রাঃ)-এর বোনেরা বিবাহিতা ছিলেন, তাই তিনি পরিবারের একমাত্র সন্তানের মতোই হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পিতার মধ্যে নবুয়তের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছিলেন। কারণ তাঁর রব তাঁকে চমৎকারভাবে পরিশুদ্ধ করেছেন। তিনি তাঁর মায়ের পবিত্র স্বভাব এবং প্রশংনীয় গুণাবলী দ্বারাও প্রভাবিত ছিলেন।[৪]

আপনি হয়তো ভাবছেন যে ফাতিমা (রাঃ) কীভাবে তাঁর বড় বোনদের চেয়েও বেশি মর্যাদাসম্পন্না হলেন। এর অনেকগুলো কারণ উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। এগুলোর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে তিনি তাঁর মাতা খাদিজা (রাঃ) এর সাথে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন, যিনি নিজেই ছিলেন আরেক অসাধারণ ঈমানদার নারী। আর এজন্যই তিনি মায়ের নৈতিক গুণাবলী ও চারিত্রিক মাধুর্য অন্য বোনদের তুলনায় বেশি করে রপ্ত করেছিলেন। আরেকটি কারণ হলো যে, তিনি এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সাথে ছিলেন, যখন কেউ তাঁর সাথে ছিলো না।[৫] যখন তাঁর পিতার কাছে মহিমান্বিত আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথম ওহী আসে, তিনি ছিলেন মাত্র পাঁচ বছরের শিশু।[৬] পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য প্রবল আগ্রহ এবং ধার্মিকতার প্রতি ভালোবাসা তাঁর স্বভাবের গভীরে প্রোথিত ছিলো।[৭]

তাঁর ধার্মিকতার ব্যাপারে সহীহ বুখারি ও মুসলিমে ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ হতে কিছু বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লার (ক্বাবার) পাশে সালাত আদায় করছিলেন এবং সেখানে আবু জাহেল ও তার সাথীরা বসা ছিলো। এমন সময় তাদের একজন অন্যজনকে বলে উঠল, “তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়িভুঁড়ি এনে মুহাম্মাদ সাজদা করার সময় তার পিঠের উপর চাপিয়ে দিতে পারে?” তখন তাদের মধ্যকার নিকৃষ্টতম লোকটি তা নিয়ে এলো এবং তাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখলো। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদায় গেলেন, তখন সে তাঁর পিঠের উপর দুই কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিলো। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, আমি (এ দৃশ্য) দেখছিলাম কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না, কারণ আমি ছিলাম ক্ষমতাহীন। তিনি বলেন, তারা হাসতে লাগলো এবং একে অন্যের উপর লুটোপুটি খেতে লাগলো। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় পড়েই থাকলেন, মাথা উঠালেন না। অবশেষে ফাতিমা (রাঃ) এসে সেটি তাঁর পিঠের উপর হতে ফেলে দিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা উঠিয়ে বললেন, “হে আল্লাহ! আপনি কুরাইশের ব্যাপারে ফায়সালা করুন।” এরূপ তিনবার বললেন। তিনি যখন তাদের বদদু’আ করেন, তখন তা তাদের অন্তরে ভয় জাগিয়ে তুললো।  তারা বিশ্বাস করতো যে, সেই ভূমিতে করা দু’আ কবুল হয়।[৮]

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীরা প্রত্যহ কুরাইশদের দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছিলেন। ফাতিমাও (রাঃ) তাঁর প্রিয়তম বাবাকে অস্বীকারকারী মুশরিকদের দ্বারা যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন। দা’ওয়াহ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করেছিলেন শিয়াবে আবু তালিবের ঘটনায়, যখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র দশ বছর।[৯] বানু হাশিমের কতিপয় সদস্যের সাথে মুসলিমদের বয়কট করে সেখানে আবদ্ধ রাখা হয়েছিলো।[১০]

এই সময়ে তিনি অসাধারণ সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তাঁর স্বাস্থ্যের উপর আমৃত্যু স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিলো।[১১]

অবরোধ প্রত্যাহারের কিছুকাল পরেই তিনি তাঁর স্নেহশীল মাতা খদিজা (রাঃ)-কে হারানোর মানসিক আঘাত পান।[১২]

ফাতিমা (রাঃ) সত্যিই ধৈর্যশীল ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাওয়ার প্রত্যাশায় সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছেন, কষ্টকর ঘটনাবলী ধৈর্যের সাথে সহ্য করেছেন। তাঁর মা ছিলেন এক প্রাণপ্রিয় মাতা এবং উত্তম স্ত্রী। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পিতার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিলো, তা পূরণ করতে তিনি পিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহর রাসূলও (সাঃ) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-কে অত্যধিক ভালোবাসতেন এবং আদর-যত্ন করতেন।[১৩]

ফাতিমা (রাঃ) তাঁর বোন রুকাইয়্যা (রাঃ), উম্মে কুলসুম (রাঃ) এবং সৎ মা উম্মুল মু’মিনীন সাওদাহ বিনতে জামাহ (রাঃ) এর সাথে হিজরত করেন। সেই সময়ে ফাতিমা (রাঃ) ছিলেন আঠারো বছর বয়সী তরুণী।[১৪]

আয়িশা (রাঃ) বলতেন যে, তিনি ফাতিমা (রাঃ) এর চেয়ে অধিক সত্যভাষী নারী দেখেননি। উহুদ যুদ্ধে তিনি মক্কা এবং মদীনার আনসার ও মুহাজির মহিলাদের সাথে কঁধে কাঁধ মিলিয়ে আহত এবং মৃতপ্রায় সৈন্যদের পরিচর্যা করেন।[১৫]

তিনি হিজরী দ্বিতীয় সনের সাফার মাসে আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ)-কে বিয়ে করেন। তিনি আল-হাসান, আল-হুসাইন, উম্মে কুলসুম এবং যয়নাবকে গর্ভে ধারণ করেন।[১৬] আলী (রাঃ) ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর মধ্যে একজন, ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম বালক এবং শূরা-কাউন্সিলের ছয় সদস্যের একজন।[১৭] আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ্‌! যে আলীর সাথে বন্ধুত্ব করে, আপনি তার সাথে বন্ধুত্ব করুন এবং যে তার সাথে শত্রুতা করে, আপনিও তার সাথে শত্রুতা করুন।”[১৮]

ফাতিমা (রাঃ) কখনোই তাঁর স্বামী আলী (রাঃ)-কে বিরক্ত করেননি। তিনি তাঁর সাথে জীবনের কঠিন সমস্যাগুলি সহ্য করেছেন। তিনি চমৎকারভাবে তাঁর সন্তানদের যত্ন করতেন, পারিবারিক কাজকর্ম করতেন এবং একজন দায়িত্বশীল মা হিসেবে তাঁর কর্তব্য পালন করতেন।[১৯]

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, ফাতিমা (রাঃ) যাঁতা চালানোর কষ্ট সম্পর্কে একদা অভিযোগ প্রকাশ করলেন। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসলো। ফাতিমা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট তাঁর কথা বলে আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ঘরে আসলেন, তখন ফাতিমা (রাঃ)-এর আগমন ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আয়িশা (রাঃ) তাঁকে জানালেন। আলী (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন, “তোমরা যে অবস্থায় আছো, সে অবস্থায় থাকো।” তিনি আমাদের মাঝে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাঁর দু’পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, “তোমরা যা চেয়েছিলে আমি কি তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিবো না? তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাবে, তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবার’, তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে নিবে। এটা খাদিম অপেক্ষা অনেক উত্তম।”[২০] ফাতিমা (রাঃ) দৃঢ় আস্থা সহকারে আল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন এই আশায় যে, আল্লাহ তাঁর ধৈর্যের জন্য বড় পুরষ্কার দিবেন।[২১]

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “ফাতিমা (রাঃ) আমার একটি অংশ; যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট করলো, সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করলো।”[২২]

ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো সফর বা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসতেন, তিনি প্রথমে মাদীনার মসজিদে দু’ রাকাত নামায আদায় করতেন এবং তারপর তিনি ফাতিমা (রাঃ)-এর গৃহ পরিদর্শন করতেন এবং তারপর তাঁর স্ত্রীদের বাড়িতে যেতেন।[২৩]

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, একদিন ফেরেশতা আমাকে সুসংবাদ দিলেন যে, ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতের নারীদের নেত্রী হবেন।[২৪]

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, ফাতিমা (রাঃ) ঠিক রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভঙ্গিতে হেঁটে আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “স্বাগতম হে আমার প্রিয় কন্যা!” তিনি তাঁকে নিজের বাম অথবা ডান পাশে বসান, অতঃপর তাঁর সাথে একান্তে কিছু কথা বলেন। এতে ফাতিমা (রাঃ) কাঁদেন। আমি তাঁকে বললাম, “তুমি কাঁদছো কেন?” তিনি পুনরায় তাঁর সাথে গোপনে কিছু কথা বলেন। এতে তিনি হাসেন। আমি বললাম, “দুঃখের এতটা কাছাকাছি আনন্দের এমন দৃশ্য আজকের মতো আমি আর কখনো দেখিনি।” আমি ফাতিমা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, “তিনি কী বলেছেন?” তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোপন তথ্য প্রকাশ করবো না।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করার পর আমি ফাতিমা (রাঃ)-কে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, ‘জিবরাঈল (আঃ) প্রতি বছর আমাকে একবার কুরআন পড়ে শুনাতেন। এ বছর তিনি আমাকে দু’বার পড়ে শুনিয়েছেন। মনে হয় আমার মৃত্যু নিকটবর্তী হয়েছে। তুমিই আমার পরিবারের মধ্যে সবার আগে আমার সঙ্গে মিলিত হবে।’ তাই আমি কাঁদলাম। এরপর তিনি আমাকে  বললেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি মু’মিন নারীদের বা জান্নাতী নারীদের নেত্রী হবে?’ এ কথা শুনে আমি হেসেছি।[২৫]

এই হাদীস সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে নবী (সাঃ) তাঁর মৃত্যুর নিকটবর্তিতা সম্পর্কে জানতেন এবং সেই সংবাদ কেবলমাত্র তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-কে জানিয়েছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অন্য কোনো মুসলিমকে ফাতিমা (রাঃ) সেই তথ্য জানাননি।[২৬]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর ছয়মাস পর ফাতিমা (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন। রাসূলুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তিনি (রাঃ) ছিলেন তাঁর (সাঃ) সাথে মিলিত হওয়া পরিবারের প্রথম সদস্য।[২৭]

ইবনুল আসীর তাঁর বই আসাদ-আল-গাবা-তে উল্লেখ করেছেন, রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর ফাতিমা (রাঃ)-কে কেউ কখনও হাসতে দেখেনি। আর ছয় মাস পর, তিনি মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর মুখমণ্ডলে গভীর মনস্তাপ দৃশ্যমান ছিলো।[২৮]

সত্যিকারের একজন নারী নেত্রী হলেন তিনিই, যার উপর তাঁর রব সন্তুষ্ট এবং যার আমল কবুল হয়। সর্বোত্তম মহিলা তাঁরাই, যারা জান্নাতের সুখ অর্জন করেন। জান্নাতী নারীরা বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জান্নাতি নারীদের নেত্রী সম্মন্ধে বলেছেন,

“জান্নাতের সর্বোত্তম নারী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারইয়াম বিনতে ইমরান এবং ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিন মুযাহিম।” (সিলসিলাত আল হাদিস আস-সহীহাহ, ৪/১৩ হাদীস নং, ১৫০৮, আহমেদ আত-তাহহাউয়ি হতে, আল হাকিম ইবনে আব্বাস হতে, সহীহ)

রাসূল (সাঃ)-এর কন্যা ফাতিমা আয-যাহরা (রাঃ) ছিলেন ধৈর্যশীলা, সহনশীলা ও মুত্তাক্বী। তিনি ছিলেন বিশুদ্ধ বৃক্ষের একটি শাখা, মানবতার শিক্ষক দ্বারা প্রতিপালিত।[২৯]

(“উল্লেখিত বয়স ও তারিখগুলো আনুমানিক হিসাব। গবেষকদের মাঝে ফাতিমা (রাঃ) জীবনীর এই বয়স ও তারিখগুলোর ব্যাপারে কিছুটা মতভেদ আছে।”- মূল লেখার সম্পাদক)

তথ্যসূত্র ও গ্রন্থাবলী

১. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৭

২. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতুব, পৃ. ৩০৯-৩১২

৩. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৫

৪. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতুব, পৃ. ৩১৩

৫. কুরআন উইকলি ভিডিও “ফাতিমা ডটার অফ প্রোফেট মুহাম্মাদ”, ওমর সুলায়মান

৬. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩৩৫

৭. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৭

৮. আল-বুখারী, ২৩৩; মুসলিম, ৩৩৪৯

৯. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৭-১৪৮

১০. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩১৭

১১. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৭-১৪৮

১২. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৫২

১৩. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩১৮

১৪. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩১৮, ৩১৯

১৫. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৮

১৬. আল বিদায়া ওয়া আন নিহায়্যা, ইবনে কাসীর, ৫/৩২১; যাদ আল মাআদ, ইবনে কাইয়্যুম, ১/১০০

১৭. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩২৫

১৮. সহীহ হাদীস আলবানী; সিলসিলাহ আস সহীহাহ, হাদিস নাম্বার. ১৭৫০

১৯. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩২৭, ৩৩৭

২০. আল বুখারী (৩৫০২) এবং মুসলিম (২৭২৭)

২১. উইমেন অ্যারাউন্ড দা মেসেঞ্জার, মুহাম্মাদ আলী কুতব, পৃ. ৩২৮

২৩. আল বুখারী, ৩৪৩৭; মুওসলিম, ৪৪৮৩

২৩. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৫৮

২৪. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৪৫

২৫. আল-বুখারী, আল-মানাকিব, ৩৩৫৩

২৬. মারাদুন-নাবী ওয়া-ওয়াফাতিহি, পৃ.৩৫

২৭. আল বিদায়া ওয়া আন নিহায়্যা, ইবনে কাসীর, ৫/৩২১; যাদ আল মাআদ, ইবনে কাইয়্যিম, ১/১০০

২৮. গ্রেট উইমেন অফ ইসলাম, মুহাম্মাদ আহমাদ গজনফার, পৃ. ১৫৯

২৯. আল-জান্নাহ ওয়া আন-নার ( ইন দা লাইট অফ দা কুরআন অ্যান্ড সুন্নাহ), ড. উমার সুলায়মান আল আস্কার, পৃ. ৭৯,৮০

মুসলিম মিডিয়া

 

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.