আর হয়তো একশো বছর, কি তারও কম সময়ে। হিন্দুকুশ পর্বতমালার বেশির ভাগ হিমবাহই গলে যাবে। নগ্ন হয়ে যাবে তুষারে মোড়া পর্বতশ্রেণি। বুধবার প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্টে এমনটাই জানা যাচ্ছে। এশিয়া মহাদেশের মধ্য ও দক্ষিণের অনেকটা অংশ জুড়ে সুবিস্তৃত এই পর্বতমালা এভাবে গলে গেলে, একটা বড় অংশে জল-সরবরাহ প্রায় শূন্য হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা। কারণ বৃষ্টিচ্ছায় ওই অঞ্চলে বৃষ্টি হয় না। হিমবাহের জলই একমাত্র ভরসা।

ওই রিপোর্ট বলছে, খুব বেশি হলে ২১০০ সাল। তার মধ্যেই হিন্দুকুশের ৬০ শতাংশ হিমবাহ গলে যাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে। এবং এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। তিয়েনশান, কুনলুন, পামির, হিন্দুকুশ, কারাকোরাম, হিমালয়, গোটা টিবেটান মালভূমি এলাকা– এই সবটা জুড়ে বাস করেন ১২ কোটি মানুষ। খুব তাড়াতাড়ি জলকষ্টের মুখে পড়তে চলেছেন তাঁরা। এবং এই প্রভাব এসে পড়বে চিন, তিব্বত, নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারতেও।

ওই রিপোর্টে লেখা রয়েছে, “এখনই ওই পর্বতমালার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। এই শতাব্দীর শেষে সেটা ২ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে পরিস্থিতি।”

রিপোর্ট দেখার পরে ১৯০টি দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিয়রে সঙ্কট এসে পৌঁছেছে। বাঁচার কোনও রাস্তাই আর খোলা রইল না বলা যায়। এই রিপোর্ট কিন্তু মানুষের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। হিন্দুকুশ পর্বতের বরফ গলে গেলে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরের জলস্তরও বাড়বে। ফলে বাড়বে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের নদীর জল। ব-দ্বীপগুলি ডুবে যেতে বসবে। আন্দামান, লাক্ষাদ্বীপ, কচ্ছ উপকূলের কেরালার অবস্থা ইতিমধ্যেই বেশ খারাপ। ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামতে নামতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সে বিষয়ে আরও খারাপ ছাড়া, কোনও ভাল কথা শোনায়নি রিপোর্ট।

জলসংকট যে গোটা দেশে উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, সেটা এবার গ্রীষ্মে ভালই টের পেয়েছেন দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দারা। তামিলনাড়ুতে বিশেষ ট্রেনে করে জল পাঠাতে হয়েছে। তবে তামিলনাড়ু সবচেয়ে বেশি ভুগলেও, গোটা দেশেই ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মেট্রো শহরগুলিতে এই পরিস্থিতি বেশি তৈরি হয়েছে। তার অন্যতম কারণ, মাত্রাতিরিক্ত জনবসতি এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি। সেই কারণেই পানীয় জলের সংকট দেখা দিচ্ছে ভারতে।

পাশাপাশি, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ার কারণে নদীর মিষ্টি জলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সমুদ্রের নোনতা জল। সে কারণেই পানীয় জলের সংকট আরও তীব্র হবে আগামী কয়েক বছরে। আরও একটি উদ্বেগের কথা শুনিয়েছে জলবায়ু সামিটের এই রিপোর্ট। ভারতের প্রবাল প্রাচীর ধ্বংসের মুখে। আন্দামান, লাক্ষাদ্বীপ, কচ্ছ উপকূলে যে কোরাল রয়েছে সমুদ্রের জলের তাপ বৃদ্ধির কারণে সেগুলি বিপন্ন হতে বসেছে। সমুদ্রের তাপ বৃদ্ধির কারণে সামদ্রিক মাছও মরছে বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের প্রবাল প্রাচীর প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

সেই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, সমুদ্রের জলস্তরের এই বৃদ্ধি। ভারতের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ শহর সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে। কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই, কোচি, সুরাট, বিশাখাপত্তনমের অবস্থা সবচেেয় উদ্বেগজনক। উপকূলবর্তী এই শহরগুলি যে কোনও সময়ে বানভাসি হতে পারে। মুম্বইয়ের অবস্থা যে সংকটজনক তা এবারের বর্ষাতেই বোঝা গিয়েছে।

রিপোর্ট বলছে, সমুদ্রের জলস্তর আর মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার বাড়লেই ২৮ কোটি মানুষ বানভাসি হবেন।