আগৈলঝাড়ায় ১৫৪টি মন্ডপের অন্যতম আকর্ষণ ১শ হাতের দূর্গা প্রতীমা
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল
দুয়ারে কড়া নাড়ছে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত প্রধান উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের অন্যতম উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজায় ভক্তদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে আকর্ষণীয় প্রতীমা, মন্ডপ নির্মাণের পাশপাশি সমান তালে চলছে তোরণ-প্যান্ডেল নির্মানের কাজ। এবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ১৫৪টি পূজা মন্ডপে পূজার আয়োজন হলেও এর মধ্যে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ থাকবে একশ হাতের নির্মিত দেবী দূর্গাা পূজা।
উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের জলিরপাড় গ্রামের বাসুদেব ওঝার বাড়ি আয়োজন করা হয়েছে ১শ হাতের ব্যতিক্রমী দেবী দূর্গা প্রতীমার পূজা। ইতোমধ্যেই প্রতীমা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ওঝা বাড়ির সার্বজনীন দূর্গা পূজার উদ্যোক্তা মৃত কালী চরণ ওঝার ছেলে বাসুদেব ওঝা ১শ হাতের দেবী দূর্গার ইতিহাস সম্পর্কে পুরাণের উদ্দৃতি দিয়ে জানান, “অদ্ভুত রামায়ন”-এ দেবীর দূর্গার শত হাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেই বর্ণনা অনুযায়ি রাবন বধের পরে দেবী সীতাকে সকল শংকা মুক্ত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন শ্রী রামচন্দ্র। দেবী সীতা তখন রামচন্দ্রকে বলেন “প্রভু, আপনি দশানন রাবন বধ করলেও ‘শতস্কন্ধ” রাবন বধ করতে পারেন নি, রাবন এখনও সাগরের নিমজ্জিত হয়ে জীবিত আছে”। তখন রামচন্দ্র দেবী সীতাকে নিয়ে “শতস্কন্ধ” রাবনের খোঁজে বের হন। সাগরের মলয় দীপে ‘শতস্কন্ধ’ রাবনের দেখা পান শ্রী রামচন্দ্র ও দেবী সীতা। সেখানে শতস্কন্ধ রাবনের সাথে দেবী সীতার যুদ্ধ বাঁধে। ওই যুদ্ধে দেবী সীতা শতহস্তে দেবী দূর্গার রুপ ধারণ করে ‘শতস্কন্ধ’ রাবন বধ করেন। সেই রুপেই দেবী দূর্গা পুজিত হয়েছেন।
১শ হাতের দূর্গা পূজার আয়োজন সম্পর্কে বাসুদেব ওঝা আরও বলেন, ৩০ বছর যাবত তার বাড়িতে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । তিনি হোমিওপ্যাথী চিকিৎসক হিসেবে সিলেটে অবস্থান কালীন ১শ হাতের দূর্গা পূজা দেখে তিনি আকৃস্ট হয়েছিলেন। তার এক বোনের মেয়ের ২০ বছরেও দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান না হওয়ায় শত হাতের দূর্গা পূজা মানত করেন। দুই বছর আগে তার বোনের মেয়ের (ভাগ্নি) একটি একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। সেই উদ্যেশ্যেই তিনি ১শ হাতের দেবী দূর্গার প্রতীমা নির্মান করে পূজার আয়োজন করেছেন।
বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশী পূজা আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত হলেও ১শ হাতের এমন ব্যতিক্রমী প্রতীমা এই প্রথম নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন পূজার আয়োজক বাসুদেব ওঝা।
১শ হাতের দেবী দূর্গার নির্মান শিল্পী মৌলভী বাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার কমলগঞ্জ চা বাগানের মানিক বাউরী পালের ছেলে সন্টু বাউরী জানান, বাপ দাদার আমল থেকেই তারা প্রতীমা তৈরীর কাজ করছেন। ৬০ হাজার টাকায় তারা বাসুদেব ওঝার বাড়ি ২০দিন কাজ করে প্রতীমা নির্মান সম্পন্ন করেছেন। এ বছর বাসুদের ওঝার বাড়ি ছাড়াও তাদের নিজ এলাকার পূর্ব শিমুলিয়া শম্ভু ভট্টাচার্যর বাড়িতে ১শ হাদের দূর্গা প্রতীমা নির্মানসহ মোট চারটি প্রতীমা নির্মান করেছেন। এসব প্রতীমা নির্মানে তার সাথে সহায়তা করছেন তার ছেলে দীপু বাইরী পাল ও স্ত্রীর বড় ভাই মোহন পাল।
পঞ্জিকা মতে, ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্তলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেঁজে ওঠবে। ৪ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দেবীর নবপত্র কল্পারম্ভ ষষ্ঠী পূজা, ওইদিন মন্ডপে মন্ডপে বেঁজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের বাজনার শব্দ। ৫ অক্টোবর সপ্তমী পূজা, ৬ অক্টোবর মহা অষ্টমী পুজা,৭ অক্টোবর নবমী পূজা ও ৮ অক্টোবর দশমী বিহিত পূজা ও দশহরার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপি পূজার আয়োজন সমাপ্ত হবে।
বাসুদেব ওঝার বাড়িসহ উপজেলায় ১শ ৫৪টি মন্ডপে চলছে পূজার আয়োজন। পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে প্রতীমার সাজসজ্জা ও উৎসব আয়োজনের শেষ প্রস্তুতি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপনের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দর সাথে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কয়েক দফায় মত বিনিময় করেছেন। সুষ্ঠভাবে পূজা সম্পন্ন করতে পূজা উদযাপন কমিটিগুলোর সাথে উপজেলায়ও মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলায় ১৫৪টি পূজা মন্ডপে সহায়তার জন্য ৭৭ মেট্টিক টন জিআর চাল বরাদ্দ করেছে সরকার। সে হিসেবে প্রতি পূজা মন্ডপে ৫শ কেজি করে চাল বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
থানা অফিসার ইন চার্জ মো. আফজাল হোসেন বলেন, অসাম্প্রদায়িক উপজেলা হিসেবে পরিচিত আগৈলঝাড়ায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজা শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তার জন্য গুরুত্ব বিেেবচনা করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ন বিবেচনায় ৩৯টি, গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৮০টি ও সাধারণ হিসেবে ৩৫টি পূজা মন্ডপকে চিিহ্নত করা হয়েছে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপে সম্প্রীতি কমিটি গঠনের পাশাপাশি পূজা মন্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করার সাথে আইন-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ, পুরুষ-মহিলা আনসার, র্যাব ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ কাজ করবে।