কে বলেছে নারী অবলা আগৈলঝাড়ায় এক নারীর দুই স্বামী !
আঞ্চলিক প্রতিনিধিঃ
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের যবসেন গ্রামে এক নারীর দুই স্বামী আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পঁচিশ বছর দাম্পত্য জীবন কাটানো স্ত্রী’কে ফিরে পেতে প্রশাসনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একই গ্রামের জনৈক এনায়েত পাইক। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃস্টি করেছে।
ভুক্তভোগী এনায়েত পাইকের (৭০) এর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বিশ বছর আগে পাশ্ববর্তি কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামের সোমেদ শেখ এর মেয়ে মেনোকার সাথে তার বিয়ে হয়।
এনায়েত পাইক জানান, তার প্রথম স্ত্রী মারা যাবার দুই বছর পর স্বামী পরিত্যাক্তা মেনোকাকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে। মেয়ে বিয়ে দেয়ার পরে ৮/১০ বছরের ছেলে নিয়ে তাকে কিছু না বলে গত ২/৩ বছর আগে তার স্ত্রী মেনোকা একই উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের নগরবাড়ি গ্রামের মৃত তালেব খানের ছেলে বেকারী ব্যবসায়ি হাকিম খান (৫৫)এর সাথে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে।
এনায়েত পাইক অভিযোগে আরও বলেন, তার স্ত্রী মেনোকা তাকে কোন রকম ডিভোর্স না দিয়ে অন্যজনের সাথে অবৈধভাবে বসবাস করে দেশের প্রচলিত আইন ও শরিয়া আইন বিরোধী কাজ করছে। হাকিম খানের সাথে বসবাস করলেও বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি চাল গ্রহনের সুবিধাভোগীর তালিকায়ও মেনোকার স্বামীর নাম এনায়েত পাইক লেখা রয়েছে।
এনায়েত পাইক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বাকাল ইউপি চেয়ারম্যোন, গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান এর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অুভযোগ করেছেন।
হাকিম খান ও মেনোকা নিজেদের স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে জানান তারা ২০১৬ সালের ২ জুন দুই লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন। কাবিনের রেজিষ্ট্রারের সত্যায়িত কপিও প্রদর্শন করেন। একই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পূর্বের স্বামী এনায়েত পাইককে ম্যানোকা তালাক দিয়েছেন বলেও জানান।
স্থানীয়রা জানান, হাকিম পাইকের এটা চতুর্থ ও মেনোকার তৃতীয় বিয়ে। এনায়েত পাইক কোন তালাকনামা পাননি বলে জানান।
নিকাহ রেজিষ্ট্রার আ. ছামাদ শেখ এর অনুপস্থিতিতে তার ছেলে বর্তমান নিকাহ রেজিষ্ট্রার মো. নাছির উদ্দিন খান তালাকনামা ও নিকাহর কাবিননামার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান বাবা ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ায় ২০১৭ সালের সভেম্বর মাসে তিনি সরকারীভাবে বিয়ে রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। উল্লেখিত তারিখে তার বাবার সঙ্গে তিনিও উপস্থিত থেকে উল্লেখিত হাকিম খান ও মেনোকার বিবাহ সম্পন্ন করান। নিকাহ রেজিস্ট্রার দেখতে চাইলে নাসির খান জানান, তার বাবার আমলের সকল ভলিউম গোপালগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে রক্ষিত আছে। নিকাহ রেজিস্ট্রারের বাড়ি পার্শ্ববর্তী কোটালিপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি এলাকায় । এই নিকাহ রেজিষ্টারের ব্যাপারে এলাকার অনেকেই তার বে-আইনি কাজের অভিযোগ করেছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ড কিপার নাজমা বেগম জানান, উল্লেখিত তারিখে মেনোকা ও হাকিম খানের বিয়ের কোন রেকর্ড রেজিষ্ট্রার বহিতে নেই।
বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস জানান, তিনি মেনোকাকে ভিজিডি কার্ড দেন নি। পূর্ববর্তি ইউএনওর শুপারিশে এনায়েত পাইকের স্ত্রী হিসেবে মেনোকাকে ভিজিডি কার্ড দেয়া হয়েছে। চাল উত্তোলন করে এনায়েতকে অর্ধেক দেয়া হয় আর অর্ধেক মেনোকা নেয়।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক মো. আফজাল হোসেন বলেন, এরকম একটি অভিযোগ পেয়ে এসআই জামাল হোসেনকে তদন্তর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, অভিযোগের কপি তিনি হাতে পান নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি প্রথমে সামাজিকভাবে দেখার দায়িত্ব দেয়া হবে। সমাধান হলে ভাল না হয় আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।