ইসলামের জন্য প্রথম জীবন দেন যে নারী

0
(0)

কামরুন নাহার ইভা

ইসলামের জন্য প্রথম জীবন দেন যে নারী

ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শাহাদাত বরণ করে অমর হয়ে আছেন আসমা বিনতে খায়্যাত (রা.); যিনি উম্মে আম্মার নামেও পরিচিত। রাসুল (সা.) নবুয়ত লাভের পর প্রাথমিক অবস্থায় যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিল সুমাইয়া (রা.) ও তাঁর পরিবার। অসহায় ও দারিদ্র্য পীড়িত হওয়ায় কুরাইশ নেতাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন তারা। কিন্তু নির্যাতন-নিপীড়নের কঠিন মুহূর্তেও সুমাইয়া (রা.) ঈমান ত্যাগ করেননি। শিরকের পথে ফিরে যাননি এক মুহূর্তের জন্যও। আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে ইসলামের জন্য সঁপে দিয়েছেন নিজের প্রাণ। নবুয়তের ষষ্ঠ বছর তিনি নির্মমভাবে শহীদ হন। ইসলামের জন্য সর্বপ্রথম জীবনোৎসর্গকারী মুসলিম সুমাইয়া (রা.)।

সুমাইয়া (রা.) প্রথমে আবু হুজাইফা বিন মুগিরা মাখজুমির দাসী ছিলেন। আর তাঁর স্বামী ইয়াসির বিন আমের হারিয়ে যাওয়া এক ভাইয়ের সন্ধানে এসেছিলেন মক্কায়। ভাইকে না পেলেও মক্কায় তিনি স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন এবং আবু হুজাইফার মিত্র হিসেবে বসবাস করতে শুরু করেন। এ সময় তিনি সুমাইয়া (রা.)-কে বিয়ে করেন। তাঁর ঔরসে একটি পুত্রসন্তান (আম্মার) জন্মগ্রহণ করলে সুমাইয়াকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন তাঁর মনিব আবু হুজাইফা।

রাসুল (সা.) নবুয়ত লাভের পর ছোট্ট এ পরিবারের সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে তাঁদের ওপর নেমে আসে মক্কার কুরাইশ নেতাদের নানা রকম জুলুম-নির্যাতন। ঐতিহাসিক মুজাহিদ বর্ণনা করেন, ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কায় যাঁরা নিজেদের ইসলাম গ্রহণের খবরটি প্রকাশ করেছিলেন, সুমাইয়া ছিলেন তাঁদের মধ্যে সপ্তম ব্যক্তি। অন্য ছয়জন হলেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.), আবু বকর (রা.), বেলাল (রা.), সুহাইব (রা.), খাব্বাব (রা.) ও আম্মার (রা.)। প্রিয় নবী (সা.) ও আবু বকর (রা.)-কে তাঁদের গোত্রের লোকজন বিভিন্ন কাজকর্মে বাধা দিতে শুরু করে। কিন্তু বাকিদের ওপর শুরু হয় কঠিন শাস্তি ও নির্যাতন। যত রকম অত্যাচার হতে পারে, সবই তাঁদের ওপর প্রয়োগ করা হয়। লোহার বর্ম পরিয়ে সূর্যের উত্তপ্ত তাপের নিচে রাখা হতো ইসলাম গ্রহণকারীদের। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, পৃষ্ঠা ৪৭০)

ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, মুগিরার বংশের লোকজন সুমাইয়া (রা.) ও তাঁর পরিবারের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে। সুমাইয়া (রা.) ঘৃণার সঙ্গে কাফির হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে ইসলামের ওপর দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকায় আবু জাহেল প্রবলভাবে ক্রোধান্বিত হয়। তাই সে দৌড়ে এসে বৃদ্ধা সুমাইয়ার বুকে বর্শা নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যা করে।

সুমাইয়া (রা.) ছিলেন একজন অসহায় বৃদ্ধা নারী। এমন অসহায় নারীকে হত্যা করায় রাসুল (সা.)-এর অন্তর অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়। ইয়াসিরের পরিবারকে যখন মক্কার উত্তপ্ত বালুকা রাশির ওপর রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে তখন রাসুল (সা.) তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলতে থাকেন, ‘হে ইয়াসির পরিবার, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো। কারণ জান্নাত হলো তোমাদের প্রতিশ্রুত স্থান।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ১২০)

এদিকে ইয়াসির (রা.) ও আম্মার (রা.) পিতা-পুত্র কঠিন নির্যাতন সইতে না পেরে মুখে কুফরির প্রতি সম্মতি প্রকাশ করেন এবং অন্তরে ঈমানের কথা গোপন রাখেন। তাঁদের এ অপারগতা গ্রহণ করে মহান আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘আর যারা ঈমান আনার পর আবার আল্লাহকে অস্বীকার করে (তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি), তবে যারা বাধ্য হয় এবং ঈমানের প্রতি তাদের অন্তর প্রশান্ত থাকে (তাদের কোনো সমস্যা নেই)।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১০৬)

আবু জাহেলের নাম মূলত ছিল আমর বিন হিশাম বিন মুগিরা। প্রবল বুদ্ধিমত্তা ও মেধার কারণে আবুল হিকাম বা প্রজ্ঞাবান ছিল তার উপনাম। কিন্তু সুমাইয়া (রা.)-কে নির্মমভাবে হত্যার পর রাসুল (সা.) তার নাম রাখেন আবু জাহেল বা মূর্খ। পরবর্তী সময়ে আবু জাহেল ইসলামের প্রথম যুদ্ধে বদর প্রান্তে দুই কিশোর সাহাবি মুয়াজ ও মুয়াওওয়াজের হাতে নিহত হয়। তখন রাসুল (সা.) আবু জাহেলের মৃতদেহ দেখে আম্মার (রা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আজ আল্লাহ তাআলা তোমার মায়ের ঘাতককে হত্যা করেছেন।’ (আল ইসাবাহ, পৃষ্ঠা ৭১৩)

আম্মার (রা.) পরবর্তী সময়ে মদিনায় হিজরত করেন এবং বদর, উহুদসহ রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত সব কটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৩৭ হিজরিতে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধে তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

 

লেখক : শিক্ষার্থী

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা

সৌজন্যে দৈনিক কালের কন্ঠ

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.