ভারতে মরেও শান্তি নেই! দলিতের মৃতদেহ সৎকার করতে দিল না উচ্চবর্ণের লোকজন
ফের জাতি–বর্ণ বৈষম্যের নিকৃষ্ট উদাহরণ ধরা পড়ল। শ্মশানে যেতে যে রাস্তাটুকু পেরোতে হয় উচ্চবর্ণের নিষেধে সেখানে যাওয়ার অধিকার নেই দলিতদের। তাই ফুল দিয়ে সাজানো মৃতদেহ দড়ি দিয়ে বেঁধে সেতু থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিচে। নদীর ধারে সৎকার হচ্ছে। তামিলনাড়ুর মাদুরাই থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে ভেলোর জেলার পেরাইয়ুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। দলিত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করছে তারা বলে খবর।
ঠিক কী হয়েছে? স্থানীয় দলিতদের অভিযোগ, পালার নদীর ওপরে আরাসলন্থপুরম–নারায়ণপুরম সেতুটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। নদীর ধারে শ্মশানে পৌঁছনর যে রাস্তা, তার দু’পাশের জমি কিনে নিয়ে চাষবাস শুরু করেছেন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। তার পর থেকেই তাদের চাষের জমির মধ্যে দিয়ে তারা দলিতদের মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেন না।
কিন্তু দলিতদের দাবি, পালার নদীর ধারের ওই শ্মশানই বংশপরম্পরায় ব্যবহার করে এসেছেন দলিতরা। স্থানীয় নারায়ণপুরম দলিত কলোনির বাসিন্দা সানমুঘাভেল বৃদ্ধের মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায়। আদি দ্রাবিড় সম্প্রদায়ের ব্যক্তি তিনি। অর্থাৎ দলিত। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামের শ্মশানটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় নদীর ধারের পুরনো শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু মূলত বেলালার এবং বানিয়ার সম্প্রদায়ের হিন্দুরা তাদের ওই রাস্তায় যেতে বাধা দেন এবং দেহটি অন্য পথে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মৃতের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই রাস্তা দিয়েই শ্মশানে দেহ নিয়ে যেতেন। সম্প্রতি বেড়া দিয়ে রাস্তাটি আটকে দিয়েছেন উচ্চবর্ণের লোকেরা। আমরা বেড়াটি খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাই। ওরা শোনেননি। ফলে বাধ্য হয়ে সেতু থেকে দড়ি বেঁধে দেহটি নদীর ধারে নামাতে হয়।’
এই ঘটনার ভিডিও করেন এক আত্মীয়। সেটি ছড়িয়ে পড়তেই টনক নড়ে জেলা প্রশাসনের। তার পরেই দলিতদের শেষকৃত্যের জন্য আলাদা জমি বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে তড়িঘড়ি। তিরুপত্তুরের সাব–কালেক্টর প্রিয়াঙ্কা তিরুমূর্তি বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, স্থানীয় উচ্চবর্ণ ও দলিত সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে কোনও ঝঞ্ঝাট হয়নি। ওদের আলাদা জমির প্রয়োজন ছিল, আমাদের বললেই পারতেন। আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করতাম।আজকাল’