হাদিসের নির্দেশনা তিন কাজ মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়

0
(0)

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

তিন কাজ মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়

এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না। সেগুলো এতটাই জঘন্য যে সেসব কাজে লিপ্ত হলে তাদের জাহান্নামের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না : অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও জাদুতে বিশ্বাসী।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৯৫৮৭)

অনেক পাপই মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। এর মধ্যে এখানে তিনটি উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হলো অভ্যস্ত মদ্যপায়ী। যে সব সময় মদপান করে। কারণ কোনো ব্যক্তি একবার মদপান করলে তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদপানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তাওবা করলে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদপান করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। সে চতুর্থবারে মদপানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ হতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার), খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুঁজের ঝরনা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৬২)

তা ছাড়া মদপান স্বাস্থ্যের পক্ষে কোনো অবস্থায়ই ভালো নয়। বিএমসি পাবলিক হেলথ নামের গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের জরিপে বলছে, অ্যালকোহল পানে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার এবং পুরুষদের লিভার ও অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। (বিবিসি)

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের ওই প্রতিবেদনে গবেষকরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা করেছেন। মদপানের মাত্রা এবং মানবদেহের ওপর প্রভাব দেখা হয়েছে গবেষণায়। বিশেষ করে, এডিএইচওয়ানবি জিনের ওপর মদের প্রভাব দেখার চেষ্টা করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অল্প মদপান করে, তাদের চেয়ে যারা মদপান করে না, তাদের হৃদেরাগের আশঙ্কা ১০ শতাংশ কমে যায়।

এ কারণে অনেক মুসলিম দেশেই মদকে অবৈধ করা হয়েছে। আমাদের এ দেশের মুসলিম নাগরিকদের জন্যও মদ অবৈধ। কোনো মুসলমান চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া মদ বা মদজাতীয় পানীয় পান করতে পারবে না। চিকিৎসকের সনদ নির্ধারিত ফরমে যুক্ত করে তাকে আবেদন করতে হবে। অমুসলিম নাগরিকরা কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। তা ছাড়া মুচি, মেথর, ডোম, ঝাড়ুদার ও চা বাগানের শ্রমিক ‘পারমিট’ নিয়ে দেশি মদ কিনতে পারবে। (প্রথম আলো)

দ্বিতীয়ত, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী। এটি আমাদের সমাজে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষ তাদের আত্মীয়দের থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে, যা সত্যি উদ্বেগের বিষয়। কারণ মহান আল্লাহ এমন লোকদের অভিসম্পাত করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর (ইবাদত করার) দেওয়া প্রতিশ্রুতির পর তা লঙ্ঘন করে, আর (আত্মীয়তার) সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।’ (সুরা : আর রাদ, আয়াত : ২৫)

তৃতীয়ত, জাদুতে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা জাহান্নামে যাবে। ইসলামী শরিয়তে জাদুবিদ্যা শেখা হারাম এবং তা বিশ্বাস করাও হারাম। অনেকে অন্যের ক্ষতি করার জন্য জাদুটোনার আশ্রয় নেয়। আবার অনেকে নিজের ভাগ্য জানার জন্য গণকের শরণাপন্ন হয়। ইসলামে এসব কর্মকাণ্ড হারাম। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের কাজকে কুফরি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি, বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে ‘আমরা তো পরীক্ষা’ সুতরাং তোমরা কুফরি কোরো না। এর পরও তারা তাদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোনো ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদের বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০২)

এই আয়াত দ্বারা আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে জাদুটোনার নিজস্ব কোনো শক্তি নেই, বরং আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত জাগতিক নিয়ম ও নির্দেশেই তা প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ, যা কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না, বরং দুনিয়া ও আখিরাতের ধ্বংসই ডেকে আনে।

আল্লাহ এসব কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। সৌজন্যে ,দৈনিক কালেরকন্ঠ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.