সবুজবাংলা : কথায় আছে, শকুনের অভিশাপে গরু মরে না। তবে গরুর দেহে প্রয়োগ করা ওষুধের প্রভাবে ধ্বংসের মুখে শকুনের বংশ। গত কয়েক দশকে গোটা দেশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গেও বিপজ্জনক হারে কমেছে শকুনের সংখ্যা। হোয়াইট ব্যাক্‌ড শকুনের সংখ্যা কমেছে ৯৯.৯ শতাংশ। যেখানে স্লেন্ডার বিল্ড এবং লং বিল্ড শকুনের বংশ হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশ হারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য শকুনের এমন সংখ্যা হ্রাসে বহু আগেই উদ্বেগের মেঘ ঘনিয়েছে পরিবেশবিদদের মধ্যে। বন দফতরের উদ্যোগে শুরু হয় পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ। শকুন প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলা হয় রাজাভাতখাওয়ায়। সেই প্রজননকেন্দ্র থেকে এ বার আকাশে ডানা মেলবে শকুন। যা বিশ্বে এই প্রথমবার বলেই দাবি।

রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রের কো–অর্ডিনেটর সৌম্য চক্রবর্তী জানান, শকুনের বংশ হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ গবাদিপশুর দেহে ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধের ব্যবহার। এই ওষুধ প্রয়োগ হয়েছে এমন গবাদি পশুর মাংস খেলে শকুনের মৃত্যু অবধারিত। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই মারণ ওষুধ প্রায় উজাড় করে দিয়েছে শকুনের বংশ। বিপদ বুঝেই শুরু হয়েছে শকুন সংরক্ষণের উদ্যোগ।

তিনি জানান, জ্বর ব্যথার জন্য গবাদি পশুদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর ব্যবহারও খুব বেশি মাত্রায় হয়। শকুনের জন্য তা যে বিপদজনক সেটা জানেন না অনেকেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শকুনের সংখ্যা হ্রাসে বিষয়টি নজরে আসে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮০ ও ৯০ এর দশকে দেশে শকুনের সংখ্যা ছিল ৪ লাখের বেশি। সেখানে ২০১৭ সালের গণনা অনুযায়ী গোটা দেশে শকুনের সংখ্যা ৫০ হাজারের নীচে চলে এসেছে। শকুন সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে হরিয়ানার পিঞ্জোরের পর ২০০৫ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় শকুন প্রজননকেন্দ্র তৈরি হয় রাজাভাতখাওয়ায়। বর্তমানে ১৩০ টি শকুনের ঠিকানা এই কেন্দ্র। এরমধ্যে প্রজনন হওয়া শকুনের সংখ্যা ৫৭।

সৌম্যবাবু জানান, এই প্রথমবার রাজাভাতখাওয়া প্রজননকেন্দ্র থেকে শকুনকে প্রকৃতির মধ্যে ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন বনকর্তারা। আগামী দু–চার মাসের মধ্যেই ছাড়া হবে ছ’টা শকুন। বিশেষজ্ঞদের পরিভাষায় যেটাকে বলা হচ্ছে ‘‌সফ্ট রিলিজ’‌। বড় একটি জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে রিলিজ অ্যাভিয়ারি। আপাতত ৬টি ‘‌সারোগেট স্পিসিস’‌ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন বনকর্তারা। এর জন্যে তাঁরা বেছেছেন হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনকে। তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে দুটি শকুনের শরীরে বসানো হচ্ছে স্যাটেলাইট ট্যাগ। এমন এক একটি ট্যাগের দাম সাত লক্ষ টাকা। আনা হয়েছে আমেরিকা থেকে। প্ল্যাটফর্ম টারমিনাল ট্রান্সমিটার বা পিটিটি–র মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে ২৪ ঘণ্টা মনিটর করা হবে শকুনের গতিবিধি।

তিনি বলেন, “এই ঝাড়ুদার পাখি মৃত প্রাণী দেহ খেয়ে তাদের দেহে থাকা ব্যাকটিরিয়া খুব সহজে হজম করে ফেলতে পারে। যার ফলে অনেক রোগের সংক্রমণ ছড়াতে বাধা দেয় এরা। তবুও শকুন নিয়ে গৃহস্থের নানা কুসংস্কার। তাই পরিবেশ বাঁচাতে যে একে দরকার, সেই সচেতনতা তৈরি হয়নি।”

বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি (‌বিএনএইচএস)‌–র অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর শচীন রানাডে বলেন, ‘‌শকুন মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার কারণ গবাদি পশুর দেহে ডাইক্লোফেনাক ওষুধের ব্যবহার। যদিও এই ওষুধ এখন ভারত সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন ক্যাপটিভ ব্রিডিং করে প্রজননে জোর দেওয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ডাইক্লোফেনাক মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রধান তিন প্রজাতির ১০০ জোড়া শকুনকে পুনঃপ্রতিস্থাপিত করা।’‌দ্য ওয়াল