প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেটের হাতে অরক্ষিত গৌরনদী ভুমি অফিস সেবা গ্রহিতারা জীম্মী

0
(0)

আহছান উল্লাহ, গৌরনদী :

দালালদের হাতে অরক্ষিত বরিশালের গৌরনদী ভুমি অফিস। প্রভাবশালী দালালদের হাতে জিম্মী হয়ে পড়েছে সেবা গ্রহিতারা। অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারির যোগসাজশে চলছে নানা অনিয়ম। প্রভাবশালী দালালরা অফিসের গোপনীয় ও গুরত্বপূর্ন নথি অবাধে নারাচারা করেন। নতুন কোন সেবা গ্রহিতা অফিসে গেলে দালালদের দেখলে মনে হবে এরা (দালালরা) ই অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী। কোন সেবা গ্রহিতা অনিয়মের প্রতিবাদ বা অভিযোগ করলে সিমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদেরকে। হয়রানীর ভয়ে কেহ মূখ খোলার সাহস পান না। এখানে সরকারি বিধির কোন তোয়াক্কা করেন না কেউ। আবার অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী দীর্ঘদিন একই অফিসে চাকুরি করার সুবাদে প্রভাবশালী হয়েছেন । মোটা অংকের উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ হয় না এ অফিসে। সাম্প্রতি দুদুক বরিশালের পরিচালক মো.জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে একটি টিম গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন অফিসে হানা দেন। ওই সময় ভুমি অফিসের নানা অনিয়মের ব্যাপারে চড়ম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গত শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ভুমি অফিসের অফিস সহকারি আলওয়াল হোসেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিসের কক্ষ খুলে বারান্দা দিয়ে হাটা চলা করছেন। আর অফিস কক্ষের ভিতরে প্রভাবশালী দালাল ওহাব সিকদার ও দালাল সুলতান আহম্মদ অফিসের সুরক্ষিত আলমিরা খুলে ফাইলপত্র নারাচারা করছেন। এ সময় ওই কক্ষে উপজেলার পিংগলাকাঠী গ্রামের আবদুল গফুর নামের একজন সেবা গ্রহিতাও বসে ছিলেন। এ সময় অপর দালাল আনোয়ার সংবাদকর্মীর উপস্তিতি টের পেয়ে কয়েকজন গ্রাহক নিয়ে সটকে পড়েন।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানাযায় প্রভাবশালী ছয় দালালের কথা শোনা গেলেও পাঁচ দালাল নিয়মিত ভুমি অফিস চষে বেড়ান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও একাধীক অফিস সহকারী দালালদের নিয়ে অফিসের গুরত্বপুর্ন নথি বেড় করে রহস্যজনক কার্জক্রম চালাচ্ছেন। পাঁচ দালাল হচ্ছেন যথাক্রমে ওহাব সিকদার,আনোয়ার হোসেন,সুলতান আহম্মেদ,নাসির উদ্দিন ও ইউনুচ মিয়া। এর মধ্যে দালাল সুলতান আহম্মদ ভুমি অফিস থেকে দু বছর আগে পিয়নের পদ থেকে অবসরে গেছেন। গৌরনদী ভুমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাযশে দালালরা বেপরোয়াভাবে সেবা গ্রহিতাদের হয়রানী করছেন। নামজারী কেস থেকে যে কোন কাজের জন্য মোটা অংকের উৎকোচ দিয়েও দিনের পর দিন মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর সেবা গ্রাহিতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দালালদের দাপটে সেবা গ্রহতিরা কোন অনিয়মের প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
অফিসের একটি সুত্র জানায় বিগত ২০১৮/১৯ অর্থ বছরের প্রায় ৬১৮ টি নামজারী কেস বর্তমানে পেন্ডিং আছে। এরপর চলতি বছরের আরো অনেক নতুন কেস জমা হচ্ছে। সুত্রটি আরো জানায় সরকারি বিধি মোতাবেক একটি নামজারী কেস ওনলাইনে আবেদনের পর সরকারি নির্ধারিত ফি ১১৭০ টাকা জমা নিয়ে ২৮ দিনে নিস্পত্তি করার কথা। সরকারি ফির কয়েকগুন বেশী উৎকোচের টাকা দিয়েও গ্রাহক ভোগান্তি কমছে না। টিকাসার গ্রামের কৃষক সেলীম বেপারি জানান অফিস সহকারি আলওয়াল হোসেনকে একটি নামজারী কেসের জন্য সারে আট হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে প্রায় দুই বছর ভোগান্তীর পর উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে বরিশাল জেলা প্রসাশকের কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করেন। আমার সাক্ষ্যও নেয়া হয় কিন্ত কোন প্রতিকার আজ পর্যন্ত পাইনি। অভিযোগ দেয়ার কারনে উল্টো প্রভাবশালী আলওয়াল আমাকে চড়মভাবে নাজেহাল করেছেন। একইভাবে গৌরনদী বন্দরের জৈনক কামাল হোসেন জানান এদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই অনেক টাকা খরচ করেও বলতে পাড়ছি না। কেননা ঘুষ দেয়ার কোন প্রমান থাকে না। এছাড়া তাদের নেপথ্য শক্তির কারনে এখানে অনেকেই সুবিচার পাচ্ছে না । এখানের দালাল সিন্ডিকেট অনেক প্রভাবশালী।
আরো জানাযায় গৌরনদী ভুমি অপিসের অফিস সহকারি কাম কম্পিউিটার অপারেটর সাজেদা বেগম ২২ বছর , একই পদের নুর হোসেন পাইক ১৭ বছর অত্র অফিসে কর্মরত আছেন। এদের ৫/৬ বছর পর পার্শবর্তী কোন উপজেলায় ১/২ মাসের জন্য বদলি করার পর পুনরায় তারা গৌরনদী ভুমি অফিসে যোগদান করেন। বিষয়টিকে আই ওয়াস বলে মনে করছেন অনেকেই। এবং একই অফিসে দির্ঘদিন কর্মরত থাকার কারনে প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেটের যোগসাজশে অনেক অনিয়ম করছেন তারা। সরকারি একটি জনগুরত্বপুর্ন অফিসের গোপন নথিপত্র,ফইল,ভলিয়ম দালাল কতৃক এভাবে আদান প্রদান নারাচার করার কারনে গৌরনদী ভুমি অফিস অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা দুর্নিতী প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন বলেন ভুমি অফিসে প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেট দারা প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ রকম অভিযোগ অনেক আছে।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা দুর্নিতী প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন ভুমি অফিসে প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেট দারা প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ রকম অভিযোগ অনেক আছে।
সহকারী কমিশনার (ভ’মি) গৌরনদী ফারিহা তানজিন কালেরকন্ঠকে বলেন এ ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ বা প্রমান পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে । আর অফিসে কে কত দিন থাকবে না থাকবে এটা সম্পূর্ন জেলা প্রসাশক মহদয়ের উপর নির্ভর করে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.