টিডিএনর সৌজন্যে আহছান উল্লাহ।আবিদ আলি খাঁ-উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের অধিবাসী।১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। মোরাদাবাদ জেলায় বিপ্লবী তৎপরতা বাড়ানোর জন্য আদেশ দেওয়া হয়। ১৮৫৭ সালের ২৫ এপ্রিল মোরাদাবাদ শহরে বিপ্লবী কর্মে নিয়োজিত অবস্থায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন। ১৮৫৭ সালের ২৭ এপ্রিল মোরাদাবাদে তাঁর ফাঁসি হয়।

মৌলভী আহমদউল্লাহ শাহ্- উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের অধিবাসী। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মহাবিদ্রোহে যোগ দিয়ে বিদ্রোহী বাহিনী সংগঠিত করেন। ব্রিটিশ সৈন্যের বিরুদ্ধে ফৈজাবাদ, লক্ষ্ণৌ এবং অন্যান্য স্থানে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালনায় বিদ্রোহীরা ইংরেজ শক্তির উপর এমন আঘাত করেন এবং ক্ষয়ক্ষতি করেন যে ইংরেজ সরকার তাঁর জীবিত অথবা মৃত মাথার মূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা করে। তিনি শাহজাহানপুর থেকে পালিয়ে ১৮৫৭ সালের ৫ জুন আভাধ রোহিলাখন্ড সীমান্তে পোলোয়েন-এ একটি ছোট্ট দূর্গ প্রবেশ করেন। পোলোয়েন-এর রাজা পঞ্চাশ হাজার টাকার লোভে বিশ্বাসঘাতকতা করে দূর্গের সমস্ত গেট বন্ধ করে দেয়। তাঁর হাতি দিয়ে একটি গেট ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। তখন তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর মাথা কেটে শাহজাহানপুরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পাঠায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেটি কোতোয়ালিতে প্রদর্শনের জন্য রাখে। তার দেহ পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এবং সেই ছাই নদীতে ছড়িয়ে দেয়।

নবাব আমির খাঁ- হরিয়ানার গুড়গাঁও এর অধিবাসী। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে অংশ নেওয়ায় ব্রিটিশ সৈন্য তাকে বন্দী করে এবং রাজদ্রোহের অভিযোগে তাকে মৃত্যু দন্ডাদেশ দেওয়া হয়। ১৮৫৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন।

মৌলভী আব্দুল জলীল- উত্তরপ্রদেশের ছাতারের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ১৮৫৭-র ব্রিটিশ বিরোধী মহাবিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৮৫৭ সালের ২১ শে আগষ্ট আলিগড়ের নিকট ব্রিটিশ সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুরের সহিত হাতাহাতি যুদ্ধে নিহত হন।

মৌলভী ফজল হক- মধ্যপ্রদেশ মালওয়া এলাকার অধিবাসী। তিনি ছিলেন একজন যোগ্য নেতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ছিল অগাধ পান্ডিত্য। ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে মহাবিদ্রোহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। শাহজাদা ফিরোজ শাহের বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ১৮৫৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রানোড-এ ইংরেজ সৈন্যের সাথে যুদ্ধে প্রধান সহকারী জহুর আলি এবং ৪৮০ জন দেশপ্রেমিক সহ নিহত হন। বিদ্রোহী বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন তাঁতিয়া টোপি, রাও সাহেব ও শাহজাদা ফিরোজ শাহ আর ব্রিটিশ সৈন্যের কমান্ডার ছিলেন জেনারেল নেপিয়ার।

মৌলভী মোহাম্মদ বাকির- দিল্লির অধিবাসী ‘শিয়া মুতাহিদ’। দিল্লির কাশ্মীরী গেটের ছোট বাজারে খাজুরওয়ালী মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক। ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দৈনিক সংবাদপত্র ‘উর্দু আখবর’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৮৫৭’র মহাবিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পত্রিকায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লেখেন এবং বিদেশী শাসকদের বিতাড়িত করার জন্য জনগণকে বিদ্রোহে যোগদানের জন্য আহবান জানান। একটি ইস্তাহার প্রকাশ করে হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে বিতাড়িত করার আহবান জানান। দিল্লির পতনের পরে গ্রেপ্তার হন এবং ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেজর হডসন তাকে গুলি করে হত্যা করে।

মেহমুদ খাঁ- উত্তরপ্রদেশের নাজিরাবাদের অধিবাসী। সিপাহী বিদ্রোহে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনী গঠন করেন এবং নেতৃত্ব দেন। সশস্ত্রবাহিনী গড়ে ব্রিটিশ সরকারকে তার নিকট বিজনর জেলার সর্বময় কর্তৃত্ব হস্তান্তর করার দাবী করেন। ব্রিটিশ সৈন্য অন্যত্র চলে গেলে বিজনর দখল করেন। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভারতীয় বাহিনী সাপার্স এর মাইনার্স এর সহিত রুরুকীতে মিলিত হন। তাঁর বাহিনী তার ভ্রাতুষ্পুত্র আহমাদুল্লা খাঁ পরিচালনা করেন। ২১ এপ্রিল নাগিনার সন্নিকটে আক্রমণকারী ব্রিটিশ সৈন্যের বিরুদ্ধে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। শাহাজাহানপুরে খাঁন বাহাদুর খানের বাহিনী ও ফিরোজ শাহ্ এর বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। নাগনায় তার বাহিনী পরাজিত হয় এবং ব্রিটিশ বাহিনী নাজিরাবাদ পুনরুদ্ধার করে। তিনি দেশ ছেড়ে নেপালে চলে যান। জানা যায় ১৮৫৯ সালের জুলাই মাসে নেপালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৌলভী লিয়াকত আলি এলাহাবাদী- উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের অধিবাসী। সম্রাট বাহাদুর শাহ-র এলাহাবাদে অবস্থিত সৈন্য বাহিনীর অধিনায়ক। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ করেন। এলাহাবাদ দখলের জন্য ব্রিটিশ সৈন্য আক্রমণ করলে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এলাহাবাদ রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেন। ১৮৫৭ সালে ১২ জুলাই তারিখে তার বাহিনী পরাজিত হলে, তিনি তার স্ত্রী ও কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরসহ গোপনে গুজরাতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি সচীন (গুজরাত) এর নবাবের আশ্রয়ে থাকেন। নবাব বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে ব্রিটিশের নিকট ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জানতে পেরে তিনি গোপনে পালিয়ে বোম্বাই চলে যান। বোম্বাই থেকে জাহাজে মক্কায় হজ করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বোম্বাইতে ধরা পড়ে যান। তাঁকে আন্দামানে নির্বাসিত করে। আন্দামান দ্বীপের জেলখানাতে এন্তেকাল হয়।

সৈয়দ আতাউল্লা খাঁ-দিল্লির ফটক হাবাস খাঁ এর অধিবাসী। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। দিল্লি অভিমুখে অগ্রগামী ব্রিটিশ সৈন্যের সহিত দিল্লি রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেন। তিনি ব্রিটিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং দিল্লিতে ১৮৫৮ সালের জানুয়ারিতে নিহত হন।
(সৌজন্য: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম শহিদ, লেখক: প্রশান্ত হালদার)