মোগো টাহা নাই, তবে ভবিষ্যতে একদিন কুরবানী দিমু

0
(0)

মোগো টাহা নাই, তবে ভবিষ্যতে একদিন কুরবানী দিমু
মো: আছান উল্লাহ,
ইচ্ছা সখ আল্লাদ সাধ সবই আছে কিন্তুু সাধ্য নেই। পবিত্র ঈদ-উল-আজহার আগের দিনেও ওরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। রাত পোহালেই কুরবানী ? জবাব এলো-‘মোগো টাহা নেই, তবে টাহা হইলে ভবিষ্যতে একদিন কুরবানী দিমু।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের হাজাম পবিারের রেনু বেগম (৫০) এক সময় ঝিয়ের কাজ করত এখন কোন কাজ করতে পারেন না শরীরে নানা রোগে আক্রান্ত। তিন ছেলে এবং এক মেয়ে বড় ছেলে মারা গেছে। বাকী ছেলেমেয়েরা কী করে ? রেনু বেগমের জবাব একটা চার ক্লাস আরেকটা তিন ক্লাসে পড়েছে। এখন রিকশা ভ্যান চালায় মাইয়াডা বিয়া দিয়া দিছি।
উত্তর পালরদী গ্রামের বিরাট এলাকা জুড়ে প্রায় একশ বিশটি হাজাম মুসলিম পরিবারের বাস। সারা বছর বাশ টিন আর ঝুপরি ঘরে এদের বসবাস। কাঠের লাকড়ি আর বিভিন্ন জায়গা থেকে শুকনো ঝড়া পাতা সংগ্রহ করে তা দিয়ে রান্না করে করে খেতে হয় বছরের বারো মাসই।
রেনুর স্বামী সাদেক হোসেন হাজামের কাজ করেন। বার্ধক্যজনিত কারনে অন্য কোন কাজ করতে পারেন না। এখানের পুরুষ লোকরা এই কাজ করে। অবশ্য বছরের তিন মাশ এ কাজ হয়। এ কাজে তাদের ভালো কিছু আয় হত। বছরের অন্য সময় রিকশা ভ্যান বা হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
বিশাই হাজাম (৬৫) জানান গত কয়েক বছর অধিকাংশ পরিবারের লোকজন তাদের ছেলে বাচ্ছাদের হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে খতনার কাজ করান। এতে বংশপরস্পরায় হাজামের কাজ করা পুরুষদের রোজগারে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ধরতে গেলে সারাবছরই অন্যর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়।
শাহ আলম হাজাম (৫০) বলেছেন, একটা ভ্যান চালাই তাও আবার ভাড়ায়। মালিকের জমা দিতে হয় ১৮০ টাকা। এর পর নিজের কোনদিন ৩০০ কোনদিন ৪০০ টাকা থাকে। বর্তমানে অবস্থা খারাপ বৃষ্টির কারনে অনেকে ভ্যানে উঠতে চায় না। এ ভাবেই চলে তার ১১ সদস্যর সংসার জীবন।
কৃষি জমি নেই কোন রকম মাথা গোজার ঠাই আছে। বছরের নয়টি মাসই তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর কষ্ট করে পরিবার পরিজন নিয়ে বাচতে হয় । কোন কোন ঘড়ে ৪/৫ পরিবারও এক সাথে বাস করেন।
ঈদুল আজাহার আগের দিন রাত দুইটা আরজ আলী হাজাম,আলীম হাজামসহ আরো অনেকেই ভ্যান নিয়ে গৌরনদী বাসস্টান্ডে বসা। এরা বেশিরভাগই হাজাম। আলীম হাজাম বলছে, বাড়িতে গিয়ে কী হবে। টাকা নেই, কাজ করলে খাবার জোটে।
কিন্তু ঈদের আনন্দ ? আরজ আলী হাজাম বলেন, এভাবেই হবে আমাদের ঈদ। কেননা ঈদের দিনও ভ্যান রিকশা চালাতে হবে। প্রতিবেশীরা যারা কোরবানী দেবে তারা বিভিন্ন জনে মাংস দেবে। আমাগো কুরবানী দেওয়ার সাধ্য নেই। কোনদিন টাহা হলে মোরা কোরবানী দিমু।
ঈদুল আজহার দিন সকাল সারে সাতটা। হাজাম পাড়ার পাশ দিয়ে যেতেই ছোট্ট শিশু মুহাম্মদ লাবু,শান্ত,রাছেলের সঙ্গে দেখা। পড়নে পুরাতন কাপর মলিন চেহারা। প্রশ্ন ঈদ করবে না ? মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ’। ওরা গরিব কিন্ত ঈদের আনন্দে সামিল হতে তারাও তৈরি।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.