সুদি মহাজন এর কারনে আগৈলঝাড়ায় দুই দিন পর বিধবার লাশ দাফন করা হল পৈত্রিক ভিটায়
সুদি মহাজন এর কারনে আগৈলঝাড়ায় দুই দিন পর
বিধবার লাশ দাফন করা হল পৈত্রিক ভিটায়
আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় এক সুদি মহাজনের খপ্পরে পরে বিধবার সহায় সম্বল ভুল বুঝিয়ে লিখে নেয়ার কারণে স্বামীর ভিটার পরিবর্তে দুই দিন পর পুলিশের হস্তক্ষেপে বিধবার লাশ দাফন করা হয়েছে পৈত্রিক ভিটায়। এঘটনায় এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের।
স্থানীয় মিরাজ ফকির ও সালিশ বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের মৃত বলু ফকিরের মেয়ে ও একই গ্রামের মৃত আলী সিকদারের স্ত্রী জরিনা বেগম (৬৫) তার বাবার বাড়ির ৮৬ শতক জমির মালিক হন। জরিনার সহজ সরল তিন সন্তান। জামাল ও জুয়েল পেশায় দিন মজুরী। আলম ঢাকায় ফেরী করে জিবীকা নির্বাহ করে আসছে।
জরিনার ওই সম্পত্তির উপর লোলুপ দৃষ্টি পরে প্রতিবেশী সুদি মহাজন মৃত মহর আলী ফকিরের ছেলে নুরুল ইসলাম ফকির। এলাকায় নুরুল ইসলাম সুদি নুরু হিসেবেই পরিচিত।
সুদি নুরু ওই সম্পত্তি তার নিজের দখলে নিতে তার আজ্ঞাবহ দালাল ও জরিনার আত্মীয় স্থানীয় রহমান ফকিরের ছেলে জাহাঙ্গীর ফকির, স্থানীয় আবুল মোল্লা ও সাবেক মেম্বর কামাল ফকিরের মাধ্যমে সম্প্রতি কৌশলে জরিনাকে আগৈলঝাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এনে সহজ সরল জরিনাকে ভুল বুঝিয়ে একাধিক দলিলের মাধ্যমে বাড়ি ও ধানি জমির ৮৬শতক জমি সুদি নুরু ও তার ছেলেদের নামে দলিল করিয়ে নেয়।
গ্রামবাসী জানায়, দলিল সম্পাদনের পরই জরিনাকে ৫শ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে ঢাকার লঞ্চে উঠিয়ে দেয় নুরু ও জাহাঙ্গীর।
বিধবা জরিনা ঢাকায় গিয়ে তার ছেলে আলমের কাছে ঘটনা জানালে আলম স্থানীয় গ্রামবাসীদের বিষয়টি অবহিত করেন। গ্রামবাসীর চাপের মুখে দলিল গ্রহীতা সুদি নুরু নয়-ছয় করতে শুরু করে। জমির শোকে জরিনা দু’বার স্টোক করে। অর্থভাবে হতভাগ্য জরিনার ভাল কোন চিকিৎসা করাতে না পেরে সোমবার দুপুরে ঢাকায় ছেলে আলমের বাসায় মারা যান। সোমবার রাতে জরিনার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। জরিনার বাড়িতে লাশ দাফন করতে গেলে নিজেকে জমির মালিক দাবি করে লাশ দাফনে বাধা দেয় সুদি নুরু। জরিনার নিজের বাড়িতে লাশ দাফনের জন্য গ্রামবাসীও একাট্টা হয়ে সুদি নুরুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে তোলে। লাশ দাফনের পক্ষে বিপক্ষ নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘঠে।
এক পর্যায়ে স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বিনয় ভুষণ বৈরাগী ও ওই ওয়ার্ডের আওয়মী লীগ সভাপতি অরুন মালাকাকারের উপস্থিতিতে গ্রামবাসী শালিশ বৈঠকে বসে। শালিস বৈঠকে জরিনাকে ভুল বুঝিয়ে লিখে নেয়া জমি থেকে সুদি নুরু ৪৬ শতক জমি জরিনার ছেলেদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়া ও বাকী সম্পত্তির স্থানীয় বাজার মূল্য ৩লাখ ৭৫হাজার টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় সুদি নুরু ও মধ্যসত্বভোগীদের উপস্থিতিতে মরহুমা জরিনার বাড়িতে শালিশ বৈঠকে। সালিশ বৈঠকে উপস্থিতিত জনিরার পক্ষের লোকজন বিষয়টি এক সপ্তাহর মধ্যে কার্যকর করার দাবি জানালে হৈ হট্টগোল বেঁধে সালিশ বৈঠক পন্ড হয় বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড মেম্বর বিনয় ভূষণ বৈরাগী।
মেম্বর বিনয় আরও বলেন, দু’পক্ষের চরম হট্টগোল বাঁধলে থানায় খবর দিলে এসআই মো. জামাল হোসেন মঙ্গলবার রাতে সাড়ে আটটায় সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে হতভাগ্য জরিনার লাশ দুই দিন পর মঙ্গলবার রাত একটায় তার বাবার বাড়িতে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি অরুন মালাকার প্রতারনার মাধ্যমে সুদি নুরুর জমি ক্রয় করার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন সুদি নুরু জরিনার ক্রয়কৃত জমির বাবদ ৩লাখ ৫হাজার টাকা জাহাঙ্গীর নিজে নিয়েছে বলে জনসমক্ষে জাহাঙ্গীর স্বীকার করেছে। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার থানায় সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
অভিযুক্ত নুরুর ছেলে মনির ফকির বলেন, ঘটনা নিয়ে শুক্রবার থানায় বসে সমাধান করার হবে বলে পুলিশ তাদের কাগজপত্রসহ থানায় যেতে বলেছেন।
এসআই জামাল হোসেন তার হস্তক্ষেপে লাশ দাফনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার থানায় সমাধান করার জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে সমাধান করা হবে।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বকিার করে বরেণ ওই ঘটনায় মরহমা জরিনার ছেলে জামাল বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় বসে সমাধানের চেস্টা করা হবে।