টিডিএন বাংলা ডেস্ক : পকেট কম্পিউটিং ডিভাইজ গুলোর তুলনা হয় না—বিশেষ করে স্মার্টফোন। আজকের স্মার্টফোন গুলো অনেক স্মার্ট এবং সাথে পাওয়ারফুল হলেও ডেক্সটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কম্পিউটারের এক আলাদায় কদর রয়েছে। তবে সকলের এবং সব কাজের কম্পিউটিং চাহিদা কিন্তু এক নয়। গেমিং, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স প্রসেসিং এর জন্য দানবাকার কম্পিউটার মেশিন প্রয়োজনীয় হলেও ছোট ছোট প্রোজেক্ট তৈরির কাজে, রোবট তৈরির কাজে, কোডিং করার কাজে কিংবা সাধারন ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার চালানোর কাজে খুব বেশি পাওয়ারফুল কম্পিউটার প্রয়োজনীয় নয়। আর এসব ছোট খাটো কম্পিউটিং চাহিদা পূরণ করতেই ক্রেডিট কার্ডের সমান সাইজ নিয়ে প্রচণ্ড জনপ্রিয়তার সাথে জায়গা দখল করে নিয়েছে এক টেস্টি নাম; রাসবেরি পাই (Raspberry Pi)। এটি মূলত একটি মিনি কম্পিউটার বোর্ড, যেখানে রয়েছে একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারের সবকিছু। তো চলুন এ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…

রাসবেরি পাই

রাসবেরি পাই একটি ছোট খাটো একদম সস্তা মূল্যের সম্পূর্ণ কম্পিউটিং ডিভাইজ—যেটি বিশেষ করে ছোট খাটো কাজ এবং ছাত্রদের জন্য বানানো হয়েছে। প্রোগ্রামিং, কোডিং, বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোজেক্ট, রোবট তৈরির জন্য এটি একটি অত্যন্ত সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য উপায়। এর সবচাইতে অসাধারণ ব্যাপার হলো এর দামের তুলনায় এর ক্ষমতা এবং এর ক্ষমতার তুলনায় এর সাইজ। একে আপনি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। একে হোম থিয়েটার পিসি হিসেবে, লো পাওয়ার ডেক্সটপ কম্পিউটার হিসেবে, এবং ছাত্রদের থেকে শুরু করে ব্যবসার বিভিন্ন কাজে কম্পিউটিং ডিভাইজ হিসেবে একে ব্যবহার করা যাবে।

ছবিতে নিশ্চয় দেখতেই পাচ্ছেন এটি কতো ছোট। দেখতে রাসবেরি পাই খুব একটা আকর্ষণীয় না হলেও আকর্ষণীয় কাজ করতে কিন্তু ওস্তাদ এই মিনি কম্পিউটারটি। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা প্রোগ্রামিং করতে ভালোবাসেন, তো শুধু প্রোগ্রামিং করার জন্য ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে ডেক্সটপ কম্পিউটার বিল্ড করা বা ল্যাপটপ কেনা অনেকটা ব্যয়বহুল। যদিও ল্যাপটপ বা ডেক্সটপের মান আলাদা। আবার ধরুন আপনি কোন রোবট তৈরি করতে চাচ্ছেন কিংবা আপনি কোন একটি হার্ডওয়্যার তৈরি করলেন যা একটি কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করা প্রয়োজনীয়, তো এসব ক্ষেত্রে পুরা আস্ত পিসি লাগিয়ে রাখা বেমানান এবং সাথে ব্যয়বহুল। এ রকম অনেক কাজে এই ছোট্ট কম্পিউটার সহজ সমাধান দিতে পারে। এমনকি আপনি যদি একদম বেসিক কম্পিউটার ইউজার হোন, মানে সাধারন ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেইল চেক করা, ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা ইত্যাদিই যদি আপনার প্রধান কম্পিউটিং চাহিদা হয়ে থাকে তবে অঝথা ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করার কোনই দরকার নেই। তাছাড়া এটি আঁকারে অনেক ছোট হওয়াতে সহজেই পকেটে করে যেখানে সেখানে বহন করতে পারবেন।

স্পেসিফিকেশন এবং পারফর্মেন্স

আগেই বলেছি এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার—তাই একটি কম্পিউটার হতে যা যা লাগে সবই রয়েছে এতে, তবে ট্র্যাডিশনাল ল্যাপটপ বা ডেক্সটপের মতো এর কনফিগারেশন এতোটা শক্তিশালী নয়। কেনোনা শুধু বেসিক কাজের উপর লক্ষ্য করে একে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানের লেটেস্ট রাসবেরি পাই হলো Raspberry Pi 3B+ চলুন এক নজরে এর স্পেসিফিকেশন গুলো দেখে নেওয়া যাক…

  • একটি ১.২ গিগাহার্জ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬৪-বিট কোয়াড কোর এআরএমভি৮ প্রসেসর
  • ৮০২.১১ এন ওয়্যারলেস (ওয়াইফাই) লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক
  • ব্লুটুথ ৪.১
  • ১ জিবি র‍্যাম
  • ৪টি ইউএসবি পোর্ট
  • ৪০টি জিপিআইও পিন
  • ফুল এইচডিএমআই পোর্ট
  • ইথারনেট পোর্ট
  • একটি অডিও ইনপুট এবং আউটপুট করার জন্য ৩.৫ মিমি. জ্যাক
  • ক্যামেরা ইন্টারফেস
  • ডিসপ্লে ইন্টারফেস
  • মাইক্রো এসডি কার্ড স্লট
  • ৩ডি গ্রাফিক্স কোর

তো এই হলো মূলত রাসবেরি পাই এর স্পেসিফিকেশন—তবে নিশ্চয় দেখেই বুঝে গেছেন, এটি অত্যন্ত বেসিক একটি কম্পিউটার। প্রসেসরের ক্ষমতা খুব একটা বেশি নয় তবে এর কাজের জন্য যথেষ্ট। সাথে ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ বিল্ড ইন পাচ্ছেন, তাই কম্পিউটারটি ওয়াইফাই এ কানেক্ট করে ইন্টারনেট বা ফাইল শেয়ারিং করতে পারবেন। ৪টি ইউএসবি পোর্ট রয়েছে যেগুলোতে ইচ্ছা মতো ইউএসবি ডিভাইজ কানেক্ট করা যাবে—যেমন মাউস, কীবোর্ড, এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ ইত্যাদি। এর আরেকটি আকর্ষণীয় ফিচার হলো জিপিআইও (জেনারাল পারপাস ইনপুট/আউটপুট) পিন। এই পিন গুলোর মাধ্যমে যেকোনো প্রোজেক্টের সাথে এই মিনি কম্পিউটারটিকে কানেক্ট করা যাবে এবং এই পিন গুলোকে ইচ্ছা মতো প্রোগ্রামিং করা যেতে পারে। এমনটাও হতে পারে এই পিন গুলোকে কোন এলইডি বাল্ব জ্বালানো নেভানোর কাজেও ব্যবহার করা যাবে। বিভিন্ন পিনে প্রোগ্রাম অনুসারে বিভিন্ন মাত্রার ভোল্ট আউটপুট দেওয়া যাবে।

হ্যাঁ, রাসবেরি পাই এর সাথে যেকোনো ডিসপ্লে বা মনিটর কানেক্ট করা যাবে এইচডিএমআই কানেক্টর দ্বারা এবং আপনি চাইলে একটি ক্যামেরা মডিউল কিনে এর সাথে লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া পোর্টাবিলিটি বাড়ানোর জন্য এতে চাইলে টাচ ডিসপ্লে লাগাতে পারেন, এতে এটি অনেকটা ট্যাবলেট পিসি বা ট্যাব ল্যাপটপের মতো কাজ করবে। যেহেতু এর ইন্টারনাল স্টোরেজ অনেক কম তাই মাইক্রো এসডি লাগিয়ে এর স্টোরেজ এক্সপ্যান্ড করা যেতে পারে। সাথে পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ লাগানোর সুবিধা তো থাকছেই। এই কম্পিউটারটির ভেতরে ডিফল্ট কোন পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট নেই তাই অনেকটা মোবাইল চার্জারের মতো দেখতে পাওয়ার সাপ্লাই দ্বারা এতে পাওয়া দেওয়া হয়। এই কম্পিউটারটি ঠিকঠাক মতো কাজ করার জন্য ২ অ্যাম্পিয়ার কারেন্টের প্রয়োজন হয়।

এখন আসি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর অপারেটিং সিস্টেমের কথায়। এটি মূলত লিনাক্স নির্ভর রাসবিয়ান নামক একটি অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে, তবে লিনাক্স নির্ভর আরো অপারেটিং সিস্টেম যেমন— উবুন্টু ডেক্সটপ, স্ন্যাপি উবুন্টু, ডেবিয়ান ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া প্রোগ্রামিং এবং নানান কাজের জন্য আরো কিছু অপারেটিং সিস্টেমকে এটি সমর্থন করে। তাছাড়া মিডিয়া প্লে করার জন্য লিনাক্স নির্ভর ওপেন সোর্স মিডিয়া সেন্টার ইন্সটল করে ম্যানেজ করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, এতে উইন্ডোজ ১০ ও ব্যবহার করা যাবে তবে উইন্ডোজ ১০ ইন্টারনেট অফ থিংগস ভার্সন(IoT)—এর সাহায্যে যেকোনো ডিভাইজকে ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড করা যাবে। রাসবেরি পাই তে সমর্থন করানো যাবে এমন সকল অপারেটিং সিস্টেমের আইএসও সরাসরি এদের অফিসিয়াল সাইট থেকে ডাউনলোড দেওয়া যাবে। তাছাড়া এদের একটি শক্তিশালী কমিউনিটি ও রয়েছে যেখানে যেকোনো সমস্যার সমাধান দিতে প্রস্তুত রয়েছে অনেক ডেভেলপার।

শেষ কথা

বেসিক কাজ গুলোর জন্য রাসবেরি পাই সত্যিই এক অসাধারণ সলিউসন হতে পারে, বিশেষ করে প্রোগ্রামারদের জন্য। মূল্য ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে (ফুল সেটআপ)। যাই হোক, আশা করি আজকের পোস্টটি ভালো লেগেছে আপনাদের, এই মিনি কম্পিউটার সম্পর্কে যেকোনো প্রশ্ন থেকে থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুন কমেন্ট বক্স এ এবং অবশ্যই শেয়ার করাতে ভুলবেন না।